গত বুধবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর নন্দীগ্রামেই আহত হয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা ষড়যন্ত্র না নিছক দুর্ঘটনা তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। তবে তাই বলে থেমে থাকেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম আমলে বাংলার অগ্নিকন্যা হুইল চেয়ারে বসেই এদিন প্রচার শুরু করেছেন। মেয়ো রোডের সভা থেকে মিছিল করে পৌঁছলেন হাজরা মোড়ে।
সেই হাজরা মোড়ে যেখানে ১৯৯০ সালের ১৬ আগস্ট তারওপর হামলা চালান হয়েছিল। তখন যুব কংগ্রেস নেত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গঠিত হয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। যুব কংগ্রে নেত্রীর মাথায় লাঠি মারার অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন সিপিএম নেতা বাদশা আলমের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম অবস্থায় মমতাকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। সেদিনের সেই আঘাত মমতার রাজনৈতিক জীবনে এক অন্য গতি দিয়েছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
নন্দীগ্রাম থেকে আহত হয়ে ফেরার পর সেই হাজরা থেকেই ফের প্রচারের ময়দানে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার পায়ে আঘাতকে আদৌ ষড়যন্ত্র মানতে রাজি নয় নির্বাচন কমিশন। তবে এদিনও কিন্তু অন্য ইঙ্গিতই দিতে চেয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। র্যাম্পের সাহায্যে মঞ্চে উঠে মমতা বললেন, মমতা আমাকে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। হাজরা আমার কাছে ঐতিহাসিক জায়গা, এখানে অনেকবার প্রাণে মারার চেষ্টা হয়েছে। বর্তমান আঘাতের সঙ্গে ৩১ বছর আঘাতের স্মৃতিকে ফের উস্কেদিলেন তৃণমূলনেত্রী।
এদিনও তৃণমূল নেত্রীর মুখে ছিল 'খেলা হবে' স্লোগান। মনে করিয়ে দিলেন, নিহত বাঘের থেকে আহত বাঘ আরও বেশি ভয়ঙ্কর। চিকিৎসকরা তাঁকে ১৫ দিনের বেডরেস্ট নিতে বললেও তাতে রাজি নন তৃণমূলনেত্রী। কারণ তাঁর কথায়, শারীরিক যন্ত্রণার থেকে হৃদয়ের যন্ত্রণা অনেক বেশি। গণতন্ত্রের যন্ত্রণা বড়।
এসএসকেএম থেকে ফিরে প্রথম প্রকাশ্য সমাবেশে মমতা বলেন, অনেক বাধা পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু কখনও মাথা নত করিনি। তাই ডাক্তাররা ১৫ দিন রেস্ট নিতে বললেও,তাঁকে বেরোতেই হবে। ভাঙা পায়েই সারা বাংলা ঘুরে বেড়াবেন।
এদিন হুইলচেয়ারে করেই পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পায়ে ছিল বিশেষ জুতো। ওই অবস্থাতেই প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ মিছিলের সঙ্গে অতিক্রম করেন তিনি। রবিবার হাজরার জনসভা শেষেই জেলা সফরে দুর্গাপুর উড়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দুর্গাপুরের বেসরকারি হোটেলে রাত কাটিয়ে সোমবার তিনি পুরুলিয়ায় জনসভা করবেন। মঙ্গলবার রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বাঁকুড়া সফর।
এদিকে এদিনও মেয়ো রোডের জনসভা তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন নেত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
রবিবাসরীয় প্রচারের ময়দানে তৃণমূলনেত্রী নামলেও তাঁকে কার্যত ক্লান্ত লাগছিল। অন্যান্য জনসভায় যেমন আক্রমণাত্মক মেজাজে তাঁকে পাওয়া যায় সেটাও অমিল ছিল। বরং এদিন অনেকটাই সংযত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তৃণমূলনেত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, কোনও আঘাতেই তিনি দমবার পাত্রী নন। বরং বরং যে অদম্য উদ্দাম নিয়ে ৩৪ বছরের বাম শাসনের তিনি মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছিলেন সেই তেজ এখনও তার মধ্যে রয়েছে। যাতে ভর করেই বিরোধীদের খোলা মঞ্চে ফের একবার 'খেলা হবে' স্লোগান দিতে দেখা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।