রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তের সব থেকে চর্চিত নাম শুভেন্দু অধিকারী ৷ দীর্ঘদিন ধরেই তাঁকে নিয়ে নানান জল্পনা চলছে ৷ বেশ কয়েক মাস ধরে আরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করছেন শুভেন্দু নিজেও ৷ ক্রমশই তাঁকে নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি ৷ দলবদলের জল্পনা তুঙ্গে নন্দীগ্রামের বেতাজ বাদশাকে নিয়ে।
গত মঙ্গলবারই শুভেন্দু অরাজনৈতিক সভা থেকে স্পষ্ট করে দেন তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান। এতদিন চুপ থাকলেও এদিন তৃণমূলকে তোপ দাগেন শুভেন্দু। বলেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলন কোনও ব্যক্তির নয়, ওই আন্দোলন ছিল জনতার। বলেন, কোনও পদের লোভ নেই তাঁর। ব্যক্তি আক্রমণ নিয়েও মুখ খোলেন শুভেন্দু। বলেন, যাঁরা তাঁকে আক্রমণ করছে তাঁদের অবস্থা অনিল বসুদের মতো হবে।
এরপরেই সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বুধবার তৃণমূল বিধায়ক পদে ইস্তফা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন বিকেল চারটে নাগাদ বিধানসভায় গিয়ে ইস্তফা পেশ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর এই ইস্তফাপত্র স্পিকার গ্রহণ করলে শুভেন্দু-তৃণমূলের ২০ বছরের বেশি সময়ের সম্পর্কে পূর্ণচ্ছেদ পড়বে।
শুভেন্দু তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক অবশ্য ত্যাগ করছেন ধাপে ধাপে। গত ২৫ নভেম্বর তিনি প্রথমে ইস্তফা দেন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে। ২০১১ সাল থেকে এই পদে বহাল ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
দুদিন পরেই ছাড়েন মন্ত্রীত্ব। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রিসভায় রাজ্যের পরিবহণ, সেচ এবং জলসম্পদ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু ৷ সেই সমস্ত পদ থেকেই ইস্তফা দেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা ৷ তবে মন্ত্রীত্ব ছাড়লেও বিধায়ক পদ তখনও ছাড়েননি তিনি ৷
মন্ত্রীত্ব ছাড়ার পরও শুভেন্দুকে দলে রাখার শেষ চেষ্টা করা হয়েছিল। ১ ডিসেম্বর সৌগত রায়ের সভাপতিত্বে কলকাতায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসানো হয় শুভেন্দুকে। প্রায় দু'ঘণ্টার বৈঠকে ফোনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কথা বলেন শুভেন্দুর সঙ্গে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভোট কৈশলী প্রশান্ত কিশোরও। এই বৈঠকের পর শুভেন্দু বরফ গলেছে বলেই দাবি করেছিল তৃণমূল নেতৃত্ব।
তবে পরের দিন সব হিসেব অদলবদল করে দিয়েছিলেন শুভেন্দু নিজেই। বৈঠকের ১৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সৌগত রায়কে হোয়াটসঅ্যাপ করেন শুভেন্দু। স্পষ্ট জানিয়ে দেন ‘আর একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।’ যা নতুন করে মোড় ঘুরিয়ে দেয় রাজ্য রাজনীতির।
এরপর ৭ ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর সভা করে তৃণমূলনেত্রী। সেই বৈঠকে গরহাজির ছিল পুরো অধিকারী পরিবার। সেদিনই কাঁথি থেকে কলকাতায় আসেন শুভেন্দু। এরপর ১৪ তারিখ তিনি ইস্তফা দিতে চলেছেন বলে ফের গুঞ্জন ওঠে। অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৬ তারিখ বিধানসভায় হাজির হয়ে ইস্তফা দিলেন শুভেন্দু।
২০০৬ সালে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের টিকিটে কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা থেকে জয়লাভ করেন।২০০৯ সালে তমলুক থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে শিল্প দফতরের স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। ২০১৪ সালেও ফের তমলুক থেকে জয়ী হন শুভেন্দু। ২০১৬ সালে সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করে নন্দীগ্রামের বিধায়ক হন। মমতা মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ অংশও হন।
শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে, তা নিয়ে এখন জল্পনা তুঙ্গে । এরই মধ্যে শুভেন্দু-গড় মেদিনীপুরে আসছেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুভেন্দু যে তৃণমূলে থাকছেন না, বিধায়ক পদে ইস্তাফার পর তা স্পষ্ট। তবে নিজে এখনও মুখ খোলেননি। তাই তাঁর গতিবিধি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে, শুভেন্দু আগামী ১৮ ডিসেম্বর বিজেপিতে যোগদান করতে পারেন। দিল্লিতে গিয়ে তিনি পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিতে পারেন। তবে এই বিষয়ে শুভেন্দু নিজে কিছু জানাননি। তিনি ইতিমধ্যে বারংবার বলেছেন, যতক্ষণ না তিনি নিজে কিছু বলছেন, কেউ যেন তাঁকে নিয়ে কোনও গুঞ্জনে কান না দেন। শুভেন্দুকে নিয়ে জল্পনার মধ্যেই অমিত শাহের মেদিনীপুর সফর এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে।