তিনজন তিনটি আলাদা রাজনৈতিক দলের নেতা । তিনটি দল তিন মেরুর । না আছে মতাদর্শগত মিল না আছে রাজনৈতিক সদ্ভাব । তবু তাদের মধ্যে চোরা সদ্ভাব রয়েছে বলে শিলিগুড়ির বাসিন্দা বিশ্বাস করেন । অনেকে একে আঁতাত বলেন, অনেকে বলেন রাজনৈতিক শ্রদ্ধা। শুধু বিশ্বাসই করেন না, তাঁরা মনে করেন প্রকাশ্যে তাঁদের পরস্পর বিরোধী মন্তব্য, কটুক্তি, কটাক্ষ আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই । আসলে তারা প্রত্যেকেই একে অপরের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। শিলিগুড়ির রাজনীতিতে তাঁদের পরিচয় ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর নামে। কেউই বলেন ত্রিমূর্তি, কেউ অমর আকবর অ্যান্টনি।
একই দিনে মহাপতন ত্রিমূর্তির
শিলিগুড়ির তিন রাজনৈতিক মেগাস্টার এর একই বিধানসভা নির্বাচনে একই দিনে মহা পতন ঘটল। এই ঘটনা যে শুধু অবাক করার মতো, তাই নয়, রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে তিনের পরাজয়ে ব্যথিত শিলিগুড়ি। আরও একটা কারণ বিধানসভায় শাসকদলের কোনও প্রতিনিধিত্বও থাকল না।
ত্রয়ীর হার
তিনজনই এবারের হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। তিনজনই বিদায়ী বিধায়ক। এদের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন এ লড়াই করে প্রথমবার হারের মুখ দেখলেন বিদায়ী পর্যটন মন্ত্রী তৃণমূলের গৌতম দেব। তিনি অবশ্য জীবনে প্রথম কোনও নির্বাচনে হারলেন। অন্যদিকে চারবারের মন্ত্রী বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের এই নিয়ে দ্বিতীয় বার পরাজয়। অন্যদিকে লোকসভা ভোটে হারার অভিজ্ঞতা থাকলেও বিধানসভা নির্বাচনে এই প্রথমবার হারলেন প্রদেশ কংগ্রেস কার্যকরী সভাপতি শঙ্কর মালাকারও।
গৌতম দেব কেন হারলেন
তৃণমূল ক্ষমতায় থাকায় গৌতম দেখছিলেন শেষ দশ বছরের প্রথমে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন ও পরে পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী। গৌতম বাবু মন্ত্রী হলেও তার বিরুদ্ধে উদ্ধত আচরণের অভিযোগ রয়েছে দলের মধ্যেই। তাঁর মেজাজ খারাপ থাকলে তিনি কাউকে রেয়াত করেন না বলে অভিযোগ। এমনকী নিজেও স্বীকার করেছেন সে কথা। একসময় মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে হাতে কুল লিখে ঘুরতেন তিনি। অন্যদিকে তাঁর বিধানসভা এলাকায ডাবগ্রাম ফুলবাড়িতে তৃণমূলের নিচুস্তরের দুর্নীতি একটা বড় ছাপ ফেলেছে এই নির্বাচনে। পাশাপাশি দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব গৌতমবাবুর হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
জনসংযোগ করেননি শঙ্কর
অন্যদিকে শঙ্করবাবুর বিরুদ্ধেও জনসংযোগের অভাব এবং বিধানসভা এলাকায় সময় না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নকশালবাড়ি এলাকায় কখনও নদীর চর দখল, কখনও সাধারণ মানুষের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। যেখানে বিধায়ককে কখনও হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। স্থানীয় মানুষের সুযোগ, সুবিধা সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিধানসভাতে তিনি সওয়াল করেছেন বলে তেমন কোনও নজির নেই।
মানুষের সঙ্গে থেকেও হার অশোকের
অন্যদিকে সওয়াল-জবাব থেকে মানুষের পাশে থাকা, কোনওটাতেই পিছিয়ে ছিলেন না অশোক ভট্টাচার্য। এমনকী করোনা আবহের মধ্যেও তাঁকে দেখা গিয়েছে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে। পাশাপাশি তিনি মেয়র থাকার সুবাদে বাড়তি কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও তার হার শিলিগুড়ির মানুষের কাছে কেন তিনি তিন নম্বরে চলে গেলেন তার পিছনে গেরুয়া হাওয়া ও দলের একটা অংশের ভোট না পাওয়া হারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের অন্যতম যোদ্ধা শঙ্কর ঘোষ নির্বাচনের মাত্র মাস দেড়েক আগে বিজেপিতে চলে যাওয়ায় দলের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা যায়নি ঠিক মতো বলে বিশেষজ্ঞদের মত।