নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিকবার দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরা। গত লোকসভা ভোটের আগে সৌমিত্র খাঁর মত তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন অনুপমও। যাদবপুর থেকে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন অনুপম। কিন্তু মিমি চক্রবর্তীর কাছে হেরে সৌমিত্র খাঁর মত ফের সাংসদ হয়ে ওঠা হয়নি অনুপম হাজরার। এদিকে অমিত শাহ দিল্লি ফিরতেই বিজেপিকে ঝটকা দিয়েছে তৃণমূল। সোমবারই বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁর স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ যোগ দিয়েছেন তৃণমূলমূলে। যা নিয়ে এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি। সুজাতা দল বদলানোয় ইতিমধ্যে স্ত্রীকে ডিভোর্সের নোটিস পাঠিয়েছেন সৌমিত্র। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে তখন তা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন অনুপম।
গত শনিবারই শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আর সোমবার তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন সুজাতা। অনুপম নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, 'শু' কে নিয়ে 'সু' কে দিলাম। ইশারা কোন দিকে তা সহজেই অনুমেয়।
তবে অনুপম দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট করে। অমিত শাহ বোলপুরে রোড শো করে বাংলা ছাড়ার পরেই অনুপম সোশ্য়াল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন। যেখানে তিনি লেখেন, বোলপুরে অমিতের রোড-শোয়ে ভিড় বাড়াতে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা-মন্ত্রীরাও ‘সাহায্য’ করেছেন। ওই কর্মসূচিতে লোক পাঠিয়েছিলেন তাঁরা।
রবিবার তৃণমূলের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মন্ডলের গড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর র্যালির ভিড় দেখে উৎসাহিত গেরুয়া শিবির। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব অমিতের রোড শোয়ে ভিড় নিয়ে বহিরাগত তত্ব খাঁড়া করেছেন। তবে তা মানতে নারাজ বিজেপি। এই অবস্থায় অনুপমের ফেসবুক পোস্টে বিজেপি বেকায়দায় পড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল।
সোমবার সকালে ফেসবুকে অনুপম লেখেন, ‘গতকাল ছিল আমার কাছে একটি বিশেষ দিন। কারণ, দিনটা ছিল ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য অর্থাৎ অমিত শাহ জি’র সামনে বোলপুরে আমাদের শক্তি প্রদর্শনের দিন’। এর পরেই তিনি রোড-শো সফল করার জন্য বোলপুরের মানুষ, বিজেপি কর্মীদের অভিনন্দন জানান। সঙ্গে ধন্যবাদ জানান বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদেরও। অনুপম লিখেছেন, ‘বীরভূম জেলার সেই সমস্ত বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদেরও বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। যাঁরা বিপুল পরিমাণে তাঁদের সমর্থকদের উপস্থিতি এই মেগা র্যালিতে নিশ্চিত করেন’।
এদিকে গত রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বোলপুর সফরের আগেই বিজেপির ফেস্টুন ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল শান্তিনিকেতনে। অমিতের সফরের আগে গোটা শহর ঢেকেছে ব্যানারে। আর সেই ব্যানারেই বড় করে অমিতের ছবির নীচে রয়েছে রেখায় আঁকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি। তার নীচে বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজার ছবি। স্বাভাবিক ভাবেই অমিতের রোড-শোয়ের আগে ‘ব্যানার বিতর্ক’ শুরু হয়েছিল অনুপমের কারণেই। তার জেরে বিজেপি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘অবমাননা’ করছে বলে অভিযোগের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। তবে এই ব্যানার বিজেপির নয় বলেই তখন দাবি করেছিলেন অনুপম হাজরা। তাঁর দাবি ছিল, বিতর্ক তৈরি করতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে তৃণমূল।
তবে বীরভূমে অমিত শাহর র্যালিতে জমায়েত করা বিজেপির কাছে ছিল রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং। র্যালিতে ভিড় দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন স্বয়ং অমিত শাহ। বোলপুরের র্যালিতে ভিড় হবে কী না তা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব প্রথমে একটু ধন্দেই ছিল। অবশেষে অনুব্রতর গড়ে জনস্রোত দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই কর্মসূচি রূপায়ণে বিশেষ দায়িত্বে ছিলেন বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। অমিত শাহ কোথায় যাবেন, কী করবেন সবটাই সামলেছেন তিনি। পাঁচ দিন ধরে পড়েছিলেন বোলপুরে। র্যালিতে জনজোয়ারের জন্য তাই অনুপমকে অবশ্য বাহবা দিচ্ছেন অনেকেই।
এই বিজেপি নেতার আরও অভিযোগ, “শাহের পালটা মমতার ব়্যালিতে জোর করে লোক আনবে তৃণমূল। পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে মানুষকে জড়ো করে ওঁরা দেখাবে এই সরকারের পাশে এখনও মানুষ আছে। কিন্তু মানুষ ভয়ে আসবে, ভক্তিতে নয়। ”
এদিকে অমিত শাহের পথেই আগামী ২৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বোলপুরের চৌরাস্তা থেকে ডাকবাংলো পর্যন্ত রোড শো করবেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নিয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে কটাক্ষ করতে দেখা যায় বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য কে। তিনি অভিযোগ করেন, “শাহের পাল্টা মমতার ব়্যালিতে জোর করে লোক আনবে তৃণমূল। পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে মানুষকে জড়ো করে ওঁরা দেখাবে এই সরকারের পাশে এখনও মানুষ আছে। কিন্তু মানুষ ভয়ে আসবে, ভক্তিতে নয়। ”