বিশ্বভারতীর শতবর্ষ অনুষ্ঠান, আর তাকে নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি। এর আগে ২০১৮ সালের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে যোগ দিয়েছিলেন। আম্রকুঞ্জের সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। এবছর করোনা আবহে ভার্চুয়ালি হাজির হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল উপস্থিত থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি নিয়ে উঠছিল নানা প্রশ্ন। যার জবাব নিজেই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে কবিগুরুর ঐতিহ্যমণ্ডিত বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপনকে বিজেপির অনুষ্ঠান বলে পাল্টা গেরুয়া শিবিরকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর শতবর্ষের অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেবেন সেই কথা জানিয়ে বুধবার রাতেই ট্যুইট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষ করছেন সেই কথাও বলেছিলেন মোদী। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উপলক্ষে ট্যুইট করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান উদ্ধৃত করে লেখেন, ‘‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো, সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও’’। বললেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তা ও দর্শনকে সংরক্ষণ করার কথাও।
আগামী ২৮ তারিখ বোলপুর যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার মাত্র কয়েকদিন আগে বিশ্বভারতীর শতবর্ষের অনুষ্ঠানে তিনি হাজির না থাকায় কটাক্ষ করতে শুরু করে গেরুয়া শিবির। কিন্তু বিশ্বভারতীর শতবর্ষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই নাকি জানানো হয়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, এমনটাই অভিযোগ করেন তৃণমূলের নেতা তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অন্যদিকে বিজেপি শিবিরের দাবি গত ৪ ডিসেম্বরই মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়েই রবীন্দ্রনাথকে অপমান করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান যখন দুই পক্ষের আমন্ত্রণ বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়েছে তখনি নিজের অনুপস্থিতি নিয়ে জবাব দিতে ময়দানে নামলেন তৃণমূলনেত্রী।
এদিন নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন বিশ্বভারতীর শতবর্ষের অনুষ্ঠানে তিনি কোনও আমন্ত্রণপত্রই পাননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "ওঁরা কখন আমায় আমন্ত্রণ করল?আজকের অনুষ্ঠানের জন্য...আমি কোনও আমন্ত্রণ পাইন।" পাশাপাশি বিশ্বভারতীর বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানকে বিজেপির দলীয় বলেও কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "তাঁরা পছন্দ করেন না। যখন দরকার ছিল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন এসেছিলেন, তখন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।"
বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনায় তৈরি বিশ্বভারতীর ফসলই হল আত্মনির্ভর ভারত। গুজরাতি সংস্কৃতি কিবগুরু পছন্দ করতেন এমন দাবিও করেন মোদী। নিজের ভাষণে রবীন্দ্রনাথের কবিতা উদ্ধৃত করতেও শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীর এই রবি প্রীতি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধিই খুঁজে পাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির দিকে কটাক্ষ করেই বলেন, "রবীন্দ্রনাথ ঐক্যের কথা বলতেন, গোটা বিশ্বই ছিল তাঁর সংসার।"