পাহাড়ের তিনটি আসনেই ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল বিমল গুরুং ও তার বাহিনী। রাজনৈতিক দ্বিচারিতার ফলেই বিমল গুরুংকে প্রত্যাখ্যান করল পাহাড়বাসী।
সুবিধামতো কখনো কংগ্রেস কখনও বিজেপি কখনও তৃণমূলের ধরে নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে নিয়ে গিয়ে ফেলা বিমল গুরুংয়ের হঠকারিতার জবাব দিলো পাহাড়। পাহাড়ের তিন আসনেই পরাজয় তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বরং পাহাড়ের অস্থির সময়ে পাহাড়বাসী কে শান্তি প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা বিনয় তামাং গোষ্ঠী অনেক বেশি ভোট পেয়ে বিশ্বাসযোগ্য জায়গায় পাহাড়বাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। সমস্ত আসনেই তাদের সঙ্গেই ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে বিজেপি প্রার্থীর।
দার্জিলিং ও কার্শিয়াং এ জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। অন্যদিকে কালিম্পং কেন্দ্রে জয়ী বিনয়পন্থী মোর্চার সদস্য। কার্শিয়াংয়ে পরিষ্কার ব্যবধানে জিতলেও দার্জিলিং কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে বিজেপির সঙ্গে বিনয় পন্থী মোর্চার। তবে সব জায়গাতেই তৃতীয় হয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ভাবাদর্শ নিয়ে পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে বিমলদের।
এর আগে বিধানসভা নির্বাচনের কিছুদিন আগেই আড়াই বছরের অজ্ঞাতবাস কাটিয়ে পাহাড়ে ফিরেছেন বিমল গুরুং। আড়াই বছর বিজেপির আশ্রয়ে থেকে তৃণমূলের হাত ধরেছেন পাহাড়ে ফিরতে। যা গোটা রাজ্য তো বটেই পাহাড়বাসীকেও অবাক করেছে। যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে পাহাড় ছাড়লেন, তাঁদের সঙ্গেই কীভাবে সদ্ভাব গড়ে ওঠে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। এর মধ্যে ফের পাহাড়ে ফেরার পর বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ ও অশান্তির ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যায় বিমল গুরুং পন্থীদের নাম। যাকে হাতিয়ার করে বিনয় তামাং মানুষের মধ্যে বিশ্বাস আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে বিমল গুরুং পাহাড়ের অশান্তি আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসা সেই জায়গা থেকে নিজেদের লক্ষ্যে সফল বিনয়রা।
যদিও পাহাড়ে নিজেদের প্রতিপত্তি বজায় রাখতে সক্ষম বিজেপি। বিজেপি তরফে তেমন প্রচার না করা হলেও সাংসদরা রাজু বিস্তা নিজে নেপালি ভাষাভাষী হওয়ায় তাঁর পক্ষে অনেক বেশি সুবিধা হয়েছে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে।
২০১৭ সালের জুন মাসে জিটিএ-র প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে সদলবলে সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেন বিমল গুরুং, রোশন গিরি সহ জিটিএ সদস্যরা। এরপর তারা রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে নেমে পড়েন হিংসাত্মক আন্দোলন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। একের পর এক খুন, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ জমা হতে থাকে বিভিন্ন থানায়। এরপর বিমল গুরুংয়ের ধরতে গিয়ে পুলিশের এসআই অমিতাভ মালিক খুন হওয়ার পরই ইউএপিএ মামলা করা হয় বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে। দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের হতেই পাহাড় ছাড়েন বিমল গুরুং ও তার পার্ষদরা।
তারপর আড়াই বছর অজ্ঞাতবাসে থেকে বিভিন্ন সময়ে অডিও ভিডিও বার্তা দিলেও প্রকাশ্যে আসেননি বিমল। তবে তাকে বিজেপি নেতাদের বারিক অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। এরপর হঠাৎ আড়াই বছর পর প্রকাশ্যে এসে তৃণমূলকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত অনেকেই অবাক করেছিল। যা নিতে পারেননি পাহাড়বাসীদের অধিকাংশই। যদিও বিমল গুরুং বাহিনী বারবার দাবি করছিলেন মানুষ তাদের সঙ্গেই রয়েছে। ভোটের ফলে তাদের দাবি যে ভিত্তিহীন ছিল তা প্রমাণিত হল।