scorecardresearch
 

আরও একটি ভোট দার্জিলিঙে, আবার গোর্খাল্যান্ড ইস্যু

আজ দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের ভৌগলিক মানচিত্রের অঙ্গ বটে। কিন্তু এই দার্জিলিং নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে গোর্খাল্যান্ড-আন্দোলন। এক সময় সুভাষ ঘিসিং সেই আন্দোলনকে একটা চরম জায়গায় নিয়ে যান। তখন রাজীব গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রী আর বুটা সিং ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

Advertisement
দার্জিলিং দার্জিলিং
হাইলাইটস
  • দার্জিলিং নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে গোর্খাল্যান্ড-আন্দোলন
  • বিমল গুরুংয়ের পরে বিনয় তামাং
  • বিনাযুদ্ধে বিজেপি নাহি দিবে সুচাগ্র মেদিনী

পশ্চিমবঙ্গে গর্ব করার মতো একটি ভোগলিক স্থান হল দার্জিলিং। ব্রিটিশরা তাদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী গড়ে তোলার প্রয়াস নিয়েছিল এই দার্জিলিংয়ে। ১৮০০ সালে দার্জিলিং পৌঁছোতে ভয়ঙ্কর সময় লাগতো। সেখানকার জঙ্গল এবং পাহাড় মিলে এক ভয়াবহ প্রতিকুল পরিস্থিতি ছিল। তারপর ব্রিটিশ শাসক ধীরে ধীরে তাদের নিজেদের স্বার্থেই দার্জিলিংকে শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, পশ্চিমবঙ্গের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। এরপর তো কত যুগ পার হয়ে গেছে!

আজ দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের ভৌগলিক মানচিত্রের অঙ্গ বটে। কিন্তু এই দার্জিলিং নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে গোর্খাল্যান্ড-আন্দোলন। এক সময় সুভাষ ঘিসিং সেই আন্দোলনকে একটা চরম জায়গায় নিয়ে যান। তখন রাজীব গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রী আর বুটা সিং ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জ্যোতি বসু, সুভাষ ঘিসিং আর বুটা সিং মিলে একটা ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করেন ‘গোর্খা জাতীয় পরিষদ’ গঠন হয় এবং সুভাষ ঘিসিংকে অনেকটাই ছেড়ে দেওয়া হয়। দার্জিলিংয়ের একটা স্বায়ত্বশাসন দিয়ে আন্দোলনটাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। কেন্দ্র এবং রাজ্যের টাকায় গুরুং এবং তাঁর দল জেএনএলএফ কার্যত লুণ্ঠন চালায়। ফলে দার্জিলিংয়ের মানুষের সেভাবে কোনও উপকার হয়নি, সেখানকার মানুষ একইভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। যখনই ভোটের সময় আসে তখন আবার ঘিসিং বিচ্ছিন্নতাবাদের আন্দোলনকে তুঙ্গে নিয়ে যায়, মানুষকে নিয়ে আন্দোলন করতে চায় এবং তাদের বোঝায় যে, কেন্দ্র এটা দিচ্ছে না, কেন্দ্র ওটা দিচ্ছে না। গোর্খা ভাষাকে ষষ্ঠ তফসিলে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে নানারকমের আন্দোলনে মুখর ছিল দার্জিলিং।

এরপর এলেন বিমল গুরুং। বিমল গুরুংয়ের পরে বিনয় তামাং। সে দীর্ঘ এক ইতিহাস! ২০২১ সালের ভোটের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা মাস্টার স্ট্র্যাটেজি করেন, গুরুংয়ের বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা-মোকদ্দমাগুলিকে কলকাতার পুলিশ তুলে দিয়ে, তাঁকে ফেরত নিয়ে চলে এসেছে পাহাড়ে। গুরুং সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন জানাচ্ছে, প্রচার করছে এবং গুরুং যে শুধুমাত্র দার্জিলিংয়ের তিনটে আসনের জন্য এটা করছে, তা নয়। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৬টা আসনে গোর্খা জনজাতি আছে এবং তাদের ওপরে গুরুংয়ের একটা প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়। সুতরাং, গুরুংয়ের কাছ থেকে মমতা এই সাহায্যটা নিয়ে দার্জিলিংয়ের আসনগুলোতে তৃণমূল তাদের নিজেদের দাবি থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। গুরুংয়ের উত্থানে বিনয় তামাং খুশি না কৌশলগতভাবে সেই অবস্থানটাকে তিনি মেনে নিয়েছেন। বিনয় তামাংয়ের কৌশল হচ্ছে, ভোটটা তো হোক, তারপর দেখা যাবে।

Advertisement

এইরকম একটা পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের যে রণকৌশল, সেটা ভয়ঙ্কর আক্রমণাত্মক! দার্জিলিংয়ের আসন এবং এই এলাকার আসনগুলোকেও কিন্তু কোনোভাবেই বিনাযুদ্ধে বিজেপি নাহি দিবে সুচাগ্র মেদিনী! সেই কারণে অমিত শাহ দার্জিলিংয়ে গেছেন এবং সেখানে গিয়ে তিনি অনেক কথা বলেছেন। তারমধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, বিজেপি যদি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে তাহলে কেন্দ্রে যেহেতু নরেন্দ্র মোদী আছেন, এইবারে ডবল ইঞ্জিনের মাধ্যমে গোর্খাল্যান্ডের সমস্যার সমাধান করা হবে। ঠিক কীভাবে করা হবে, কোন যুক্তিতে করা হবে, সেসমস্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ না বললেও, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দার্জিলিংয়ে এসে যদি এমন একটা আশ্বাস দেন তবে সেটা নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের ওপর একটা প্রভাব ফেলে।

Advertisement