
cpm brigade 2021এ বারের নির্বাচনে সিপিএম-এর প্রার্থী তালিকার প্রায় ৭০ শতাংশই তরুণ! তবে কিছু পোড় খাওয়া, পক্ক কেশে এখনও আস্থা রেখেছিল দল। সংযুক্ত মোর্চার অধিকাংশ ভোটের টিকিট পেয়েছেন তরুণরাই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভোটের ফলাফলে তার তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারল না সংযুক্ত মোর্চা বা সিপিএম। নবীনদের মধ্যে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সায়নদীপ মুখোপাধ্যায়, ঐশী ঘোষ, সৃজন ভট্টাচার্য, শতরূপ ঘোষ বা প্রবীনদের মধ্যে মহম্মদ সেলিম, অশোক ভট্টাচার্য, কান্তি গাঙ্গুলি— সকলেই প্রচারে যথেষ্ট আশা জাগালেও ভোটের ফলাফলে কেউই আঁচড় কাটতে পারলেন না এঁদের কেউই। সামগ্রিক ভাবে সম্পূর্ণ ব্যার্থ হল সংযুক্ত মোর্চা আর বাংলা থেকে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল একদা রাজ্যের শাসক, বিগত এক দশক ধরে ক্ষয়িষ্ণু সিপিএম।
সংযুক্ত মোর্চা থেকে একমাত্র আসনটি জুটেছে আব্বাস সীদ্দিকির আব্বাস সিদ্দিকির দল ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ (ISF)-এর। এ রাজ্যে শেষ দুই দশক ধরেই ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস। কিন্তু তা সত্ত্বেও মালদা, মুর্শিদাবাদে নিজের দুর্গো টিকিয়ে রেখেছিল অধীর চৌধুরি। কিন্তু এ বারের বিধানসভার ভোটে দীর্ঘদিনের গড় হারিয়েছেন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরিও।

সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের প্রভাব পড়ে ২০১১-র বিধানসভা ভোটে। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র ৬২টি আসনে জয় পেয়েছিল সে কালে রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা শাসক দল। ফলে বাংলায় ক্ষমতাচ্যুত হয় বামপন্থী জোট সরকার। অবসান হয় দীর্ঘ ৩৪ বছরের সিপিএম (CPIM) জামানার। এর পরই সিপিএমের জোটে যাওয়ার প্রয়োজন হয়।
একক ভাবে ক্ষমতায় ফেরা অসম্ভব, হয়তো এমনই কোনও ভাবনা থেকে সিপিএম (CPIM) শীর্ষ নেতৃত্ব জোটের পথে পা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে পরিসংখ্যান বলছে, সিপিএম যতবার জোটের পথে পা বাড়িয়েছে, তত বারই আসন সংখ্যা কমেছে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে প্রথমবার জোটের পথা হাঁটে সিপিএম। বাংলায় দীর্ঘ কয়েক দশকের বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গেই জোটবদ্ধ হয় সিপিএম (CPIM)-সহ অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি। সেই থেকে শুরু সিপিএমের জোট-যাত্রার। তবে সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েও রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২টিতে জয়ের মুখ দেখে সিপিএম। অর্থাৎ, বাংলায় সিপিএমের ক্ষয়ের শুরু।

কিন্তু ওই ফলাফল থেকেও শিক্ষা নেয়নি আলিমুদ্দিন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও কংগ্রেসের সঙ্গে একজোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল সিপিএম। এ বারও ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র ৩২টিতে জয় পায় বামশক্তি। শাসকদলের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি বা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগেও তেমন ফল হয়নি সে বার।
এ বারের বিধানসভা ভোটের ফলাফল আরও শোচনীয়! রাজ্যের ২৯২টি আসনের মধ্যে এ বার একটি আসন পেলেন না সিপিএমের কোনও নেতা-নেত্রী, হেভিওয়েট বা তারকা প্রার্থী! নবীন থেকে প্রবীন— সকলেই হেরেছেন এ বারের ভোটে। এ বারের নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চাকে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক নতুন করে স্বপ্ন দেখালেও ফলাফলে তার তেমন কোনও প্রভাব পড়ল না। কেন রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট টানতে সম্পূর্ণ ব্যার্থ হল, কেন ব্রিগেডের ভিড় ইভিএম পর্যন্ত পৌঁছালো না! এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এ বার আলিমুদ্দিনে বিশ্লেষণে বসবেন বামপন্থী শীর্ষ নেতৃত্ব। অন্যান্য জোট শরিকরাও থাকবেন হয়তো।
জোট রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার পর থেকেই ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে বামশক্তি, কমছে জন সমর্থনও। অন্তত ভোটের ফলাফল তাই বলছে। তাহলে জোট-রাজনীতি কি বামশক্তির ক্ষয় ধরাচ্ছে, ধার কমাচ্ছে? আব্বাস সিদ্দিকি বা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোয় কি রক্তে, মজ্জায় বামপন্থীরাও কি মুখ ফেরাচ্ছে সিপিএম-এর থেকে? রাজ্যের সব স্তরের বামপন্থীদের স্বার্থ এক সরলরেখায় না আনতে পারলে জোটের অঙ্ক মেলানো, অন্তত পশ্চিমবঙ্গে বেশ কঠিন কাজ।