EXCLUSIVE: বাংলার রাজনীতিতে আব্বাস সিদ্দিকী; ভোট যুদ্ধে কার লাভ, কার ক্ষতি!

বাংলার ভোট রাজনীতির ময়দানে আলোচনার কেন্দ্রে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে অঙ্ক কষা শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ময়দানে আব্বাস সিদ্দিকীর দল লড়াইয়ে নামায় কার কতটা লাভ, ক্ষতির আশঙ্কা কোন দলের, বিশ্লেষণে সেই সব জটিল অঙ্ক...

Advertisement
EXCLUSIVE: বাংলার রাজনীতিতে আব্বাস সিদ্দিকী; ভোট যুদ্ধে কার লাভ, কার ক্ষতি!বাংলার রাজনীতিতে আব্বাস সিদ্দিকী। ফলে বাংলায় মুসলিম ভোটের অঙ্ক নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে।
হাইলাইটস
  • বাংলার ভোট রাজনীতির ময়দানে আলোচনার কেন্দ্রে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী।
  • পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF) থাবা বসালে আখেরে লাভ কার?
  • রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের জোটের সঙ্গে এ বার আব্বাস সিদ্দিকীর দলের যুক্ত হওয়া নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলার ভোট রাজনীতির ময়দানে আলোচনার কেন্দ্রে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। রাজ্যে ভোটের মুখেই নতুন দলের ঘোষণা করেছেন তিনি। এ রাজ্যের অনগ্রসর আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিয়ে ফ্রন্ট তৈরির পরিকল্পনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। অবশেষে ২১ জানুয়ারি নিজের নতুন দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF) নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমে পড়লেন আব্বাস সিদ্দিকী।

বাংলায় অনগ্রসর আদিবাসী এবং মুসলমানদের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ভোট প্রচারে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন সিদ্দিকী। আব্বাস সিদ্দিকীর এই ঘোষণার ফলে বাংলায় মুসলিম ভোটের অঙ্ক নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে। অনেকেরই প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF) থাবা বসালে আখেরে লাভ কার? অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, আব্বাস সিদ্দিকীর দল ভোট যুদ্ধে নামায় বাংলায় বিজেপিরই পাল্লা ভারী হচ্ছে। সংখ্যালঘু ভোট বাঁচাতে শাসক দলকেও নতুন করে অঙ্ক কষতে হচ্ছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ময়দানে আব্বাস সিদ্দিকীর দল লড়াইয়ে নামায় যার যতটুকুই লাভ হোক না কেন, ভোট কাটাকাটিতে ক্ষতির আশঙ্কা শাসক দলেরই।

Abbas Siddiqui

বাম-কংগ্রেস জোটের অবস্থা
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জোট নিয়ে অনেকটাই এগিয়েছে দুই শিবির। ২০১৬–এর নির্বাচনে ৭৭টি আসনে জিতেছিল বাম-কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ–গণতান্ত্রিক জোট। গত সোমবার বৈঠকে সেই ৭৭টি আসন নিয়ে রফায় বসেছে দুই পক্ষ। গতবার জোটের জেতা আসনে সংশ্লিষ্ট জয়ী দলই প্রার্থী দেবে সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত হয়েছে বৈঠকে। অর্থাৎ, ৭৭টি আসনের মধ্যে ৪৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কংগ্রেস এবং ৩৩টি আসনে প্রার্থী দেবে বামেরা। ৭৭টি আসনের ভাগাভাগি নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর পর বাম–কংগ্রেসের হাতে র‌য়েছে আরও ২১৭টি আসন। এই বিরাট পরিমাণ আসনের ভাগ কার দখলে কতটা থাকবে তা নিয়ে ফের ২৮ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসবে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস।

Left Congress Alliance

সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা
এ দিকে রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের জোটের সঙ্গে এ বার আব্বাস সিদ্দিকীর দলের যুক্ত হওয়া নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বাম নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক সেরে ফেলেছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (ISF) প্রধান। পাশাপাশি রাজ্য কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে সিদ্দিকীর। সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোটের প্রসঙ্গে রাজ্য কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা প্রবঞ্চনা ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতির শিকার বাংলার হাজার হাজার মানুষ এই অপশাসনের বিরুদ্ধে এ বার এক জোট হতে চাইছে। এই জন্য কল্প শক্তি হিসাবে রাজ্যের মানুষ বাম-কংগ্রেসের জোটের উপরেই ভরসা রাখছেন। সে ক্ষেত্রে শুধু আব্বাস সিদ্দিকীর দলই নয়, রাজ্যের প্রতারকদের সঙ্গে প্রতারিতদের লড়াইয়ে এক জোট হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এই লড়াইয়ে তৃণমূল, বিজেপির বিরুদ্ধে যাঁরাই এক জোট হতে চাইবেন তাঁদের স্বাগত জানাবে এই জোট।”

Advertisement

Abdul Mannan

জোট ভাবনায় আব্বাস সিদ্দিকী
ইতিমধ্যেই আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছেন মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) দলের প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi)। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (ISF) প্রধান জানান, ওয়াইসি ও তাঁর দল ভোট যুদ্ধে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। কথা হয়েছে রাজ্যের বাম-কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও। শাসক দলের পক্ষ থেকেও পাশে থাকার প্রস্তাব এসেছে। তবে এ বার আর কোনও প্রতিশ্রুতি বা সরকারি অনুদান নয়, গণতান্ত্রিক নিয়মে বাংলায় অনগ্রসর, আদিবাসী মানুষের এবং মুসলমানদের প্রাপ্য অধিকারের দাবিতে ভোটের লড়াইয়ে নামছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF)। অন্তত ৪০-৫০ জন বিধায়ক, জনপ্রতিনিধিদের সাহায্যে সরাসরি রাজ্যের বঞ্চিত, অনগ্রসর মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায় তাঁর দল। তাই বাম-কংগ্রেসের জোটের জন্য নিজেদের দরজা খোলা রেখেছে সেকুলার ফ্রন্ট।

Asaduddin Owaisi

মিমকে (AIMIM) নেবে না বাংলার জোট
এ বারের নির্বাচনে বাংলায় লড়তে চাইছেন মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) দলের প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi)। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্যে আব্বাস সিদ্দিকির নেতৃত্বেই লড়াই করবেন তাঁরা। তবে এ ক্ষেত্রে বাম নেতৃত্বের কড়া বার্তা, এই জোটে কোনও ভাবেই ওয়াইসির দলকে রাখা যাবে না। হায়দ্রাবাদে ওয়াইসির এই দলের বিরুদ্ধে একাধিক বার সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ উঠেছে। এই কারণেই শুরু থেকেই আসাদুদ্দিন ওয়াইসির (Asaduddin Owaisi) থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে রাজ্যের বাম নেতৃত্ব।

Mamata Banerjee

আব্বাস সিদ্দিকির আগমনে কতটা চাপে মমতা
গত দশ বছরে পর পর দুইটি বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোট রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের ঘরেই গিয়েছে। কিন্তু এ বার মুসলিম ভোট কোন দিকে যাবে, সেটাই হল বড় প্রশ্ন! কারণ, ২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রায় ১০০টি আসনের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দিতে পারে রাজ্যের ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট। উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৭৪টি আসনে ভাল প্রভাব রয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির। এই আসনগুলিতে সংখ্যালঘুর সংখ্যা প্রায় ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ। গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে এই আসনগুলির মধ্যে ৬০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ৬টিতে বিজেপি এবং ৮টিতে কংগ্রেস। ফলে আব্বাস সিদ্দিকি সক্রিয় হলে তা যে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে কতটা টান পড়ে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবির।
 

POST A COMMENT
Advertisement