scorecardresearch
 

টার্গেটে রাজ্যের ৭০ লক্ষ কৃষক পরিবার, 'রাজধানী এক্সপ্রেসে'র গুঁতোয় বাংলায় কি বেসামাল BJP-র গেমপ্ল্যান?

গত লোকসভা নির্বাচনে আদিবাসী ও মতুয়া ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক গেরুয়া প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি আদিবাসী অধ্যুষিত মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরলিয়া, বাঁকুড়ায় গেরুয়া সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মত। মতুয়া অধ্যুষিত উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়াতেও বিরাট নির্বাচনী জয় পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। এই ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রাখতে মরিয়া ভারতীয় জনতা পার্টি। তাই নিয়মিত রাজ্য সফরে আসছেন বিজেপির সর্বভারতী সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। নির্বাচনী দিন ঘোষণার পর স্বয়ং আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদীও, এমন খবরই পাওয়া যাচ্ছে বিজেপি সূত্রে। তবে ২০২১ কৃষকের সঙ্গে নিয়েই বাংলায় পদ্ম ফোটানোর গেমপ্ল্যান বানিয়েছে বিজেপি। যার জন্য সম্প্রতি রাজ্য সফরে এসে ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযানে’র সূচনা করে গেছেন বিজেপি সভাপতি নাড্ডা। কিন্তু সাধারণতন্ত্র দিবসে দেশের রাজপথে কৃষকদের বিক্ষোভ নিয়ে ইতিমধ্যে মোদী সরকারকেই নিশানা করছে বিরোধী দলগুলি। এই আবহে গেরুয়া শিবিরের বাংলার কৃষকদের মন জয়ের চেষ্টা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন ।

Advertisement
বাংলার কৃষকদের দিকে নজর বিজেপির বাংলার কৃষকদের দিকে নজর বিজেপির
হাইলাইটস
  • বাংলার কৃষকদের দিকে নজর বিজেপির
  • ভোট যুদ্ধে টার্গেট ৭০ লক্ষ কৃষক পরিবার
  • কিন্তু প্রশ্ন থাকছেই কতটা সফল হবে সেই গেমপ্ল্যান

 গত লোকসভা নির্বাচনে  আদিবাসী ও মতুয়া ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক গেরুয়া প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি আদিবাসী অধ্যুষিত মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরলিয়া, বাঁকুড়ায় গেরুয়া সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মত। মতুয়া অধ্যুষিত উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়াতেও বিরাট নির্বাচনী জয় পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। এই ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রাখতে মরিয়া ভারতীয় জনতা পার্টি। তাই নিয়মিত রাজ্য সফরে আসছেন বিজেপির সর্বভারতী সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। নির্বাচনী দিন ঘোষণার পর স্বয়ং আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদীও, এমন খবরই পাওয়া যাচ্ছে বিজেপি সূত্রে। তবে ২০২১ কৃষকের সঙ্গে নিয়েই  বাংলায় পদ্ম ফোটানোর গেমপ্ল্যান বানিয়েছে বিজেপি। যার জন্য সম্প্রতি রাজ্য সফরে এসে ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযানে’র সূচনা করে গেছেন বিজেপি সভাপতি নাড্ডা। কিন্তু সাধারণতন্ত্র দিবসে দেশের রাজপথে কৃষকদের বিক্ষোভ নিয়ে ইতিমধ্যে মোদী সরকারকেই নিশানা করছে বিরোধী দলগুলি। এই আবহে গেরুয়া শিবিরের বাংলার কৃষকদের মন জয়ের চেষ্টা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন ।

বাংলার কৃষকদের মন জয়ের চেষ্টা
গত ৯ জানুয়ারি ২ দিনের সফরে বঙ্গে এসে বাংলার শস্য গোলা বর্ধমানে গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। ভোটের আগে বাংলার কৃষকদের কাছে পৌঁছতেই এই কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। বাংলায় কৃষক পরিবারের সখ্যা ৭১ লক্ষ। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ ছোট এবং প্রান্তিক চাষি। এই কৃষকদেরই একুশের ভোট যুদ্ধে টার্গেট করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি বোঝাতে চাইছে বাংলার কৃষকদের লড়াই-সংগ্রাম সম্পর্কে তারা অবহিত। ক্ষমতায় এলেসমস্যার সমাধান করাটা তাদের লক্ষ্য।

রাজ্যের কৃষক  পরিবারের সঙ্গে নাড্ডা
রাজ্যের কৃষক পরিবারের সঙ্গে নাড্ডা

বিজেপি সভাপতির বর্ধমান সফরের পরতে পরতে ছিল কৃষকদের ভাবাবেগকে ধরার চেষ্টা। সুচার বাবে রাজ্যের শস্য ভাণ্ডারকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। দেশ জুড়ে চলা কৃষক আন্দোলনের আবহে মোদী সরকার যে কৃষক বিরোধী নন বাংলাকে সেই বার্তা দিতেই নাড্ডার এই সফর বলে মনে করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। কাটোয়ার সভা থেকে ফের বাংলার কৃষকদের বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তিনি অভিযোগ করেছেন রাজ্যের ৭০ হাজার কৃষককে কৃষি  নিধি প্রকল্পের সুবিধা না দিয়ে বঞ্চনা করেছেন তৃণমূল সরকার। মমতা জমানায় বাংলার কৃষকরা চূড়ান্ত বঞ্চিত। তাঁরা যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পান তা খুবই কম। অন্য রাজ্যের কৃষকরা তার থেকে বেশি সহায়ক মূল্য পান, এমনই দাবি ছিল নাড্ডার।

Advertisement

রাজ্যে এখন চলছে কৃষক সুরক্ষা অভিযান
নাড্ডার উদ্বোধনের পর ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গে। বিজেপির লক্ষ্য এই অভিযানে  ৪০ হাজারেরও বেশি গ্রামে সভা করা। ৫০ হাজার কৃষককে  কৃষক সুরক্ষা কার্ড দেওয়া। গোটা জানুয়ারি মাস ধরেই এই অভিযান চলবে বাংলায়। বিজেপি কর্মীরা প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে গিয়ে চাল ভিক্ষা নিচ্ছেন, আর সেইসঙ্গেই বাংলার কৃষকদের কৃষি আইনের সুফল সম্পর্কে সচেতন করবেন। এক মুঠো চাল সংগ্রহের। বদলে মানুষকে ন্যায় দেওয়ার সংকল্প নিয়েছে গেরুয়া শিবির। এখানেই থেমে নেই বিজেপির কর্মসূচি। ভিক্ষে করা চাল দিয়েই প্রতিটি গ্রামে আয়োজন করা হচ্ছে কৃষক ভোজ, জনসংযোগই যে এর লক্ষ্য তা আলাদা করে বলে দেওয়ার দরকার নেই।

বাদ সাধছে কৃষক আন্দোলন
দিল্লি ও দিল্লির সন্নিকটে গত ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে কেন্দ্রের নয়া তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন। দিল্লির প্রবল শীতের প্রকোপকে উপেক্ষা করেই চলছে কৃষকদের মরণপণ আন্দোলন। কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষকদের একাধিক বৈঠকের পরেও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। পঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ-সহ বহু রাজ্যের কৃষকরা এই আন্দোলনে সামিল। কৃষকরা তাদের অবস্থানে অনড় থেকে এই আইন সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি করছেন। 

সাধারণতন্ত্রে রণক্ষেত্র রাজধানী
কৃষি আইনকে প্রত্যাহারের দাবিতে জানুয়ারি ট্র্যাক্টর র‍্যালি ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দেশের রাজধানী দিল্লি। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন সরকারি অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশের নজরে ছিল কৃষকদের ট্র্যাক্টর র‍্যালি । সময় যত গড়িয়েছে ততই কৃষক বিক্ষোভের আঁচে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর রাজপথ । বিশৃঙ্খলার এই পুরো ঘটনার পিছনেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা । বাম থেকে কংগ্রেস, তৃণমূল থেকে আপ সমস্ত দলেরই দাবি, সুচিন্তিতভাবে কৃষক আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার স্বার্থেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে ।

মোদীর উদাসিনতাকে নিশানা মমতার
গত ডিসেম্বরেই দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় সংসদীয় প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে কৃষক আন্দোলনে সহমর্মিতা জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুচারু ভাবে তৃণমূসনেত্রী মেলানোর চেষ্টা করেছেন সিঙ্গুর আন্দোলনের সঙ্গে সিঙ্ঘু সীমানায় কৃষকের আন্দোলনকে। ২৬ জানুয়ারি যা ঘটেছে তার জন্য কেন্দ্রের মোদী সরকারকেই নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের উদাসীন এবং অসংবেদনশীল মনোভাবের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে ট্যুইট করেন মমতা।  কেন্দ্রের কৃষি আইনের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই সরব তৃণমূলনেত্রী । এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গত ডিসেম্বরে দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের আন্দোলনকেও সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৬ জানুয়ারির  ঘটনাতেও কেন্দ্রকেই দায়ী করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কৃষক ভাই-বোনদের প্রতি কেন্দ্রের অসংবেদনশীল ও উদাসীন মনোভাবই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। নিজেদের ব্যর্থতায় ওনাদের দুষছে কেন্দ্র ।'

দিল্লি সীমানায় কৃষক আন্দোসনের পাশে মমতা
দিল্লি সীমানায় কৃষক আন্দোসনের পাশে মমতা

দিল্লিতে কৃষি আইনের প্রতিবাদে অনড় কৃষকদের বাগে আনতে বাংলার কৃষকদের টার্গিটে করেছিল বিজেপি। রাজ্যের কৃষকদের নিয়ে সুপরিকল্পিত পথে এগোনোর সুকৌশল পরিকল্পনাও নিয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। এরাজ্যের কৃষক তুষ্টিকেই নিজের নবান্ন জয়ের হাতিয়ার করেছিল। যাতে সামিল হয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্প চালু না করার জন্য বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন নরেন্দ্র মোদী।  কিন্তু কৃষি আইনের বিরুদ্ধে পঞ্জাব-হরিয়ানা-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ লাগাতার আন্দোলন এই রাজ্যের কৃষকদের ভরসা গেরুয়া শিবির পাবে কিনা তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। 

Advertisement


 

Advertisement