
সম্প্রতি নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে নির্বাচনী প্রচারে শিশির অধিকারী ও শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনাকে টেনে আনেন। মমতা দাবি করেন, ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ 'বাপ-ব্যাটা'র অনুমতি নিয়েই পুলিশ নন্দীগ্রামে অভিযান চালিয়েছিল। এমনকী, হাওয়াই চটি-পরা পুলিশ ঢোকানোর দায়ও মমতা শিশির ও শুভেন্দুর উপরেই চাপিয়েছেন।
এর পরেই রাজ্যজুড়ে চর্চার কেন্দ্রে চলে এসেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যে বুদ্ধদেবের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালানো ও ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ রয়েছে, সেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রাম কাণ্ড নিয়ে পুরনো ইন্টারভিউগুলি ভাইরাল হচ্ছে। মমতার বক্তব্যের পরে কাকতালীয় ভাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একটি বিবৃতিও দিয়েছেন, যা প্রকাশ করা হয়েছে সিপিআইএম-এর তরফে। সেখানে বুদ্ধবাবু লিখছেন, 'নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরে এখন শশ্মানের নীরবতা। সে সময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে বাংলার যুব সমাজ।'
সে দিন কী হয়েছিল নন্দীগ্রামে?
ঘটনার সূত্রপাত ২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি। সেদিন তৃণমূল সমর্থিত কৃষি জমি রক্ষা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সিপিএম ক্যাডারদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাঁধে ও নিহত হন ৬ জন। এলাকা দখলমুক্ত করতে ১৪ মার্চ বিশাল পুলিশ বাহিনী দুদিক থেকে নন্দীগ্রামের দিকে অগ্রসর হয় ও আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পরে। অভিযোগ, গুলি চালায় পুলিশ। তাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়।
২০০৬ সালে তৎকালীন বাম সরকার নন্দীগ্রামে একটি মেগা বিজনেস হাব তৈরির পরিকল্পনা করে। হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে হলদিয়া মহকুমার ১৭৪টি মৌজার মোট ৩৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তিনটি পর্যায়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা এর প্রতিবাদে প্রবল প্রতিরোধ শুরু করেন। রাতারাতি তৈরি হয় একটি সংগঠন, ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। তাদের নেতৃত্বে রাস্তা কাটার কাজ শুরু হয়। সিবিআই তদন্তে উঠে আসে, টানা প্রায় তিনমাস ধরে নন্দীগ্রাম এবং খেজুরি থানা এলাকায় অশান্তি, সংঘর্ষ, লুঠপাট, খুনের মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের হয়। কিন্তু কোনও ঘটনারই তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। কারণ, ওই এলাকাগুলিতে পুলিশকর্মীদের প্রবেশাধিকার ছিল না।
ভিডিও-তে ধরা পড়ে, পুলিশের পোশাকে কয়েকজন গুলি ছুড়ছে, তাদের পায়ে হাওয়াই চটি। এরা কারা, এখনও তদন্ত সাপেক্ষ ও অবশ্যই রহস্য। সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে, ম্যাজিস্ট্রেট বেআইনি জমায়েত ঘোষণা করে দেওয়ার পরই আইজি উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
'গুলিটা না চললেই ভাল হত'
নন্দীগ্রাম নিয়ে একটি বহুল প্রচলিত বাংলা সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, 'আমাদের কাছে খবর আসছিল, মাওবাদীরা ও তৃণমূল মিলে ওখানে অস্ত্র জড়ো করছে, প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। রাস্তা কাটা, গাছ কাটা, অফিস বন্ধ, এ অবস্থা চলতে পারে? আইের শাসন একদম ভেঙে পড়েছিল। তবে গুলিটা না-চললেই ভাল হত। মাঠে ময়দানে সবটা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এই যে মাওবাাদী ও তৃণমূলে এই সব কাজকর্ম চলছিল, এইগুলিরই তো তদন্ত হওয়া উচিত।'
গুলি চালানোর কথা জানতেন বুদ্ধবাবু? ওই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি তখন বিধানসভায়। এখনও আমার মনে আছে, ঘরে এসে বসলাম, শুনলাম গুলি চলে গেছে। একটু পরেই বলল, ফিগারটা ১৪। খুব খারাপ লাগল। পরে দেখলাম, ফায়ারিংয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, বাকি ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে অন্য ভাবে। নন্দীগ্রামে মাওবাদী ও তৃণমূলরা একসঙ্গে বসে যা করছিল, সেগুলির ভাল তদন্ত হওয়া উচিত।'