scorecardresearch
 

'চাচা' নেই, কংগ্রেসও নেই! খড়গপুরে লড়াইটা বিজেপি বনাম তৃণমূলই

১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মের পর থেকেই কংগ্রেসের ক্ষয় দেখে চলেছেন রাজ্যবাসী। এরমধ্যেই মুষ্টিমেয় কিছু এলাকায় এখনও নিজের আধিপত্য ধরে রেখেছে হাত শিবির। কয়েকদিন আগেও যার মধ্যে ছিল রেলশহর খড়গপুর। টানা দশ বারের কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিং সোহনপাল ছিলেন রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের এই শহরের অধীশ্বর। তবে শহরবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘চাচা’নামেই। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট ৯৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন খড়গপুর শহরের ‘মিথ’। তার আগের বছরেই অবশ্য রঙবদল ঘটে গিয়েছিল খড়গপুরের। টানা দশ বারের কংগ্রেস বিধায়ককে হারিয়ে ২০১৬ সালে এই আসন থেকে জয়ী হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ‘চাচা’র মৃত্যুর পর একুশের মহাযুদ্ধে এই আসন কংগ্রেস আর পুনরুদ্ধার করতে পারবে এমন সম্ভাবনাও খুব কম।

Advertisement
একুশের ভোটে রেল শহর কোন ফুলে থাকবে তাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন একুশের ভোটে রেল শহর কোন ফুলে থাকবে তাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন
হাইলাইটস
  • একসময় খড়গপুর ছিল কংগ্রেসের শক্ত গড়
  • সময়ের সঙ্গে এখন বদলে গিয়েছে গোটা শহর
  • একুশের ভোটে রেল শহর কোন ফুলে থাকবে তাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন

১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মের পর থেকেই কংগ্রেসের ক্ষয় দেখে চলেছেন রাজ্যবাসী। এরমধ্যেই মুষ্টিমেয় কিছু এলাকায় এখনও নিজের আধিপত্য ধরে রেখেছে হাত শিবির। কয়েকদিন আগেও যার মধ্যে ছিল রেলশহর খড়গপুর। টানা দশ বারের কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিং সোহনপাল ছিলেন রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের এই শহরের অধীশ্বর। তবে শহরবাসীর  কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘চাচা’নামেই। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট ৯৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন খড়গপুর শহরের ‘মিথ’। তার আগের বছরেই অবশ্য রঙবদল ঘটে গিয়েছিল খড়গপুরের। টানা দশ বারের কংগ্রেস বিধায়ককে হারিয়ে  ২০১৬ সালে এই আসন থেকে জয়ী হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ‘চাচা’র মৃত্যুর পর একুশের মহাযুদ্ধে এই আসন কংগ্রেস আর পুনরুদ্ধার করতে পারবে এমন সম্ভাবনাও খুব কম।

লাল দুর্গে বিধি বাম, স্বাধীনতা থেকে বর্তমান, কোন পথে রঙ পরিবর্তন নন্দীগ্রামের

খড়্গপুর শহর কিন্তু বরাবরই প্রতিষ্ঠান বিরোধী থেকেছে। বাম এমনকি তৃণমূলের আমলেও এই শহর থেকে কংগ্রেসের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত জ্ঞান সিং সোহনপাল (চাচা)। টানা দশ বারের কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন ‘চাচা’। ১৯৬২-তে প্রথম বিধানসভায় গিয়েছিলেন জ্ঞান সিং। অজয় মুখোপাধ্যায় ও সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় কারা, পরিবহণের মতো দফতর সামলেছেন তিনি। ১৯৮২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত টানা খড়্গপুর সদরের বিধায়ক ছিলেন। বহু বার প্রোটেম স্পিকারের দায়িত্বও সামলেছেন। ২০১৬ সালে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে হার মেনে থামে তাঁর বিজয়রথ। তারপর সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তার আগে অবশ্য ১৯৭৭ সালে দেশে কংগ্রেস বিরোধী হাওয়ায় একবারই পরাজিত হয়েছিলেন ‘চাচা’। 

রাজ বব্বরের সঙ্গে ভোট প্রচারে ‘চাচা’
রাজ বব্বরের সঙ্গে ভোট প্রচারে ‘চাচা’

‘চাচা’ যেন ছিলেন খড়গপুর শহরের ‘মিথ’। জ্ঞান সিং সোহন পাল এত বড় নামে কেউ ডাকত না তাঁকে৷ খড়গপুরে তিনি ছিলেন শুধুই ‘চাচা’৷ দলীয় মহলে তো বটেই, বিরোধী শিবির, এমনকী আবালবৃদ্ধবনিতা  সকলের কাছেই ছিলেন ‘চাচা’৷ নামেই যেন ছিল ম্যাজিক৷ শেষের দিকে বয়সের ভারে খুব বেশি ঘোরাফেরা করতে  না পারলেও খড়গপুরে থাকলে পোলবাজারের কংগ্রেস ভবনে নিয়ম করে সকাল-বিকেল তিনি বসতেন। আর সেই সময় সাধারণের সব প্রয়োজনের কথা শুনতেন তিনি। নির্দ্বিধায় যে কেউ তাঁর সমস্যা খুলে বলতে পারতেন। 

Advertisement

Nandigram Divas: ঐতিহাসিক ১৪ মার্চ, ফিরে দেখা সেই ইতিহাস যা বদলে দেয় বাংলার রাজ্যপাট

রোজ সকালে গুরুদ্বারে যেতেন। আর গোলবাজারে কংগ্রেস কার্যালয়ে তাঁর টেবিলে শোভা পেত ফ্রেমবন্দি বালাজি। শিখ হয়েও কোনও দিনই বিশেষ সম্প্রদায়ের গন্ডিতে আটকে থাকেননি জ্ঞান সিং সোহনপাল। হয়ে উঠেছিলেন নানা ভাষাভাষী ও মিশ্র সংস্কৃতির শহর খড়্গপুরের মুখ। শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, ইদ, মাতাপুজো, উগাদি-পোঙ্গল, দুর্গোৎসব, বড়দিন, ছটপুজো— সব সম্প্রদায়ের উৎসবেই খড়্গপুরের অলিতেগলিতে দেখা যেত চাচাকে। ধর্মীয় হোক বা সামাজিক, বিভিন্ন উৎসব কমিটির তিনিই ছিলেন পৃষ্ঠপোষক। সবরকম মানুষের সঙ্গে অবলীলায় মিশে যাওয়ার এই ক্ষমতাই জ্ঞানসিংহকে খড়্গপুরের চাচা করে তুলেছিল। শুধু নিজের পাড়া নয়, শহরের যে কোনও প্রান্তের মানুষই চাচাকে দেখলে সৌজন্য বিনিময় না করে পারতেন না। মাঝবয়সীরা প্রণাম করতেন। আর কচিকাঁচাদের আব্দার ছিল ‘হ্যান্ডশেক’-এর। কাউকে কখনও নিরাশ করেননি চাচা। তাই দশবারের কংগ্রেস বিধায়ক, অকৃতদার এই মানুষটি রাজনীতির দুনিয়ার লোক হয়েও সব শিবিরের, সব স্তরের শহরবাসীর অভিভাবক ছিলেন।

সনিয়া বা রাহুল গান্ধী যে ক্যারিশ্মা দেখাতে পারেননি তা দেখিয়েছেন জ্ঞান সিং সোহনপাল। রাজ্যে কংগ্রেসের অবস্থা ক্ষয়িষ্ণু হলেও খড়গপুরে একাই দলকে টেনে নিয়ে যেতেন ‘চাচা’। রাজনীতির রঙ নয় মানুষ তাঁকে ভোট দিত ভালবেসেই। তবে জীবনের শেষ নির্বাচনে সেই চাচাকেও হার মানতে হয়েছিল। ৯২ বছর বয়সে অসমর্থ শরীরে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন  জ্ঞান সিং সোহনপাল। সেবার রাজ্যে ঘাসফুল ঝড়ের মধ্যেও কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল খড়গপুর।  পদ্ম ফুঁটিয়েছিলেন রেল শহরের মানুষ। এখান থেকেই বিধানসভায় গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তারপর  গত লোকসভা নির্বাচনেও খড়্গপুর শহরে ৫০ হাজার লিড পেয়েছিল পদ্ম-শিবির। এরপরেই খড়্গপুর কার্যত ‘খাসতালুক’ হয়ে ওঠে দিলীপের। তবে বিধানসভা উপ-নির্বাচনে উল্টে যায় খেলা। প্রথমবারের জন্য ঘাসফুল ফোটে রেল শহর খড়্গপুরে। প্রদীপ সরকার জয়ী হন ২১ হাজার ভোটে।

আজ দিলীপের ‘খাসতালুক’ খড়গপুর
আজ দিলীপের ‘খাসতালুক’ খড়গপুর

মিশ্র সংস্কৃতির এই শহর যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁর ‘পাখির চোখ’ পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে সে কথা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে আসন ফিরে পেতে বিজেপি এখান থেকে দাঁড় করিয়েছে তারকা প্রার্থী অভিনেতা হিরণকে। যার হয়ে স্বয়ং রোড শো করতে হাজির ছিলেন অমিত শাহ। হিরণের সম্মুখ সমরে খড়গপুরের তৃণমূল প্রার্থী 'ঘরের ছেলে' প্রদীপ সরকার। কিন্তু এই বিধানসভায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিন্তু প্রকট। খড়্গপুরের বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ সরকারের সঙ্গে শহরের নেতা দেবাশিস চৌধুরীর সংঘাত লেগেই রয়েছে। তবে তৃণমূল ও বিজেপি ময়দানে নেমে পড়লেও একদা নিজেদের গড়ে প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের পর খড়গপুর সদর কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করতে হয়েছে কংগ্রেসকে। কাগজে কলমে কংগ্রেসের অস্তিত্ব থাকলেও 'চাচা' অস্তাচলে যাওয়ার পর তাই  লড়াইটা এখানে মূলত দ্বিমুখী। কংগ্রেস বিদায়ের পর বিজেপি ও কংগ্রেস দুটি দলই একবার করে জিতেছে এই আসনে। মিশ্র ভাষাভাষির শহর খড়গপুরে 'চাচা' মিথ ভেঙে এবার কোন ফুলের জয়জয়কার হবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে দোসরা মে পর্যন্ত। 

 

Advertisement

Advertisement