একদিনে জোড়া ধাক্কা তৃণমূল শিবিরে। দীর্ঘদিনের জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছেড়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরও এক উইকেট পতন ঘাসফুল শিবিরে। সোমবার থেকেই বেসুরো বাজছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। যার মান ভঞ্জন করতে স্বয়ং ময়দানে নেমেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু মমতার সঙ্গে বৈঠকের আগেই প্রথমে পুর প্রশাসক ও পরে তৃণমূলের সব পদ থেকে ইস্তফা দেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। শুভেন্দুর দেখান পথেই জিতেন্দ্রর এই দলত্যাগ নিয়ে এখন জোড় গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। আগামী শনিবার শুভেন্দুর গড়ে যাবেন অমিত শাহ। শোনা যাচ্ছে দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে এবার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত শুভেন্দু। আর সেই অধ্যায় গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে এমন জল্পনাও চলছে। যাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে খোদ বিজেপি নেতৃত্ব। দলে যে শুভেন্দু আসলে যোগ্য মর্যাদা পাবেন তা বারবার বলে চলেছেন দিলীপ-মুকুল-কৈলাসরা। এই আবহে শুভেন্দুর সঙ্গে একই দিনে দলছাড়া জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
জিতেন্দ্র তৃণমূল সঙ্গ ত্যাগ করতেই এখন ক্রমে জোড়ালো হচ্ছে তাঁর গেরুয়া শিবিরে যাওয়ার গুঞ্জনও। যদিও পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নিজে দাবি করছেন , ‘বিজেপিকে পছন্দ করি না, যাচ্ছিও না।' তারপরেও 'কিন্তু' থেকে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে বুধবার বিধানসভায় নাকি এক বাম নেতাকে শুভেন্দু বলেছেন আগামী ১৯ তারিখ অমিত শাহের জনসভায় ১০ বিধায়ককে নিয়ে যোগ দেবেন। জিতেন্দ্রর দল থেকে পদত্যাগের পর সেই দলে তাঁর থাকার সম্ভাবনাও জোড়ালো হয়েছে। এরমধ্যেই গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনালাপের কয়েকঘণ্টা পরেই যেভাবে পানাগড়ে দলীয় সাংসদের বাড়ি জিতেন্দ্র শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করলেন তা নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে।
২০১৫ সালে হিন্দিভাষী ভোটব্যাঙ্কেক মাথায় রেখে আসানসোলের মেয়র পদে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে নিয়ে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়কের যথেষ্ট কর্তৃত্ব রয়েছে শিল্পাঞ্চল এলাকায়। যা নিয়ে আসানসলের দুই বারের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় সঙ্গে বারবার ঝামেলায় জড়াতে দেখা গেছে জিতেন্দ্রকে। গত দশ বছরে শিল্পাঞ্চল এলাকা বারবার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর রাজনৈতির লড়াই দেখেছে। সেই প্রতিদ্বন্দ্বি দলে এলে যে তিনি খুশি হবেন না তা নিয়ে রাখঢাক করেননি এলাকার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাৎপআর্যপূর্ণ ভাবে বাবুলের বক্তব্য, আসানসোলে তৃণমূল নেতাদের বিজেপিতে আনতে মধ্যস্থতা করেছি বলে যারা গুজব রটিয়েছে, তারাই এখন বিজেপিতে ঝাঁপ দিতে চাইছে! আসানসোলে বিজেপি কর্মীদের ওপর যে তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে অত্যাচার চলেছে, তাকে যেন দলে না নেওয়া হয় এই চেষ্টা আমি করব। জিতেন্দ্র বিজেপির লোকজনকে মেরেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন বাবুল। বাবুলের জেতার পথে কাঁটা বেছানোর চেষ্টা করেছেন তিনি, সেকথা তৃণমূল ছাড়ার পর এদিন স্বীকারও করেছেন জিতেন্দ্র। কেবল বাবুল নয় জিতেন্দ্রকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির মহিলা নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালও। যদিও পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়কের দলছাড়া প্রসঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তৃণমূলে কারও পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।
Mask ছাড়া জনসমক্ষে মোদী, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলল AAP
একসময় আসানসোলে তৃণমূলের সর্বেসর্বা ছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাই ২০২১ সালের বাংলা জয় করতে পশ্চিম বর্ধমানে তাঁর সংগঠন কাজে লাগতে পারে গেরুয়া শিবিরের। তাই দলবদলের হাওয়ায় জিতেন্দ্রও গেরুয়া পতাকা হাতে নেন কিনা তা সময়ই বলবে। তবে এদিন বাবুলের অভিযোগে যথেষ্ট নরম প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গেছে তৃণমূলের সঙ্গে ত্যাগ করা জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে। আসানসোলের সাংসদের অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে, জিতেন্দ্র স্বীকারও করেছেন, তৃণমূলের প্রধান হিসাবে অনেক কাজ করতে হয়েছে। যা নিয়ে বিজেপির অভিযোগ থাকতেই পারে। । তাই মুখে 'বিজেপি–কে সমর্থনও করি না' কার্যক্ষেত্রে জিতেন্দ্র কী করবেন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।