এ বারের ভোটে একেকটি আসনও অত্যন্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বাংলার প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের কাছে। তাই আসন ভাগাভাগি নিয়ে চুল-চেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত রাজ্যের সবকটি রাজনৈতিক দল। ইতিমধ্যে ১৯৩টি আসন পরস্পরের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। বিরোধী জোটে অংশ নিতে চায় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF), রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD), জনতা দল সেকুলার (JDS) এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (NCP)। বাকি ১০১টি বিধানসভা আসন কী ভাবে এতগুলো দলের মধ্যে বন্টন হয় সে দিকেই নজর রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের।
এই ১০১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF) কতগুলি আসন চাইছে আর বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব তাদের কতগুলি আসন দেওয়ার কথা ভাবছে— এ নিয়ে বুধবার পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই আসন রফা নিয়ে ফের আলোচনায় বসতে চলেছে জোটমুখী সব পক্ষ।
সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টে (ISF) বাম-কংগ্রেস জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়টি মোটামুটি পাকা। কারণ, সিদ্দিকীর জোটে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে রাজ্য কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল মান্নানের কথায়। তিনি বলেন, “ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট যতগুলি আসন দাবি করেছে, তা যুক্তিযুক্ত। অযৌক্তিক কোনও সংখ্যার আসন ওরা দাবি করেনি। তাই ওদের প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আব্বাস সিদ্দিকির দল ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ (ISF) রাজ্যে জোটের সাফল্যের ক্ষেত্রে ‘নির্ণায়ক শক্তি’ হতে পারে। ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে রাজ্যের অন্তত ৩৫-৪০টি আসনে। দক্ষিণবঙ্গে জোটের সাফল্যের ক্ষেত্রে ISF-এর উপর অনেকটাই নির্ভর করছে। ইতিমধ্যেই বাম নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক সেরে ফেলেছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (ISF) প্রধান। পাশাপাশি রাজ্য কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে সিদ্দিকীর। পাশাপাশি রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটের ভাগাভাগি ঠেকাতে ফুরফুরা শরিফে মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) দলের প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসির (Asaduddin Owaisi) সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে সিদ্দিকীর। ওই বৈঠক ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে বলেও দাবি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (ISF) প্রধানের।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, আব্বাস সিদ্দিকীর দল ভোট যুদ্ধে নামায় বাংলায় সংখ্যালঘু ভোট বাঁচাতে শাসক দলকেও নতুন করে অঙ্ক কষতে হচ্ছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ময়দানে আব্বাস সিদ্দিকীর দল লড়াইয়ে নামায় যার যতটুকুই লাভ হোক না কেন, ভোট কাটাকাটিতে ক্ষতির আশঙ্কা শাসক দলেরই। ফলে আসন্ন নির্বাচনে জোটের সাফল্যের ক্ষেত্রে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF)।
এ দিকে সম্প্রতি India Today Conclave East 2021 এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, এ বারের নির্বাচনে ফলাফল নিয়ে তিনি ১১০ শতাংশ আত্মবিশ্বাসী। শেষ দু’বারের চেয়েও বেশি আসনে জেতার দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, “২২১-এর কম সিট পাব না।” তাই ১৯৩টি আসনে বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়া পাকা হলেও মোট কতগুলি আসনে সাফল্য মিলবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে। তবে বাংলার সংখ্যালঘু ভোটের অনেকটাই আব্বাস সিদ্দিকীর ঝুলিতে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বাংলায় জোটবদ্ধ ভোট-যুদ্ধের ব্যাটন কি এ বার আব্বাস সিদ্দিকীর হাতে? অদূর ভবিষ্যতেই মিলবে তার উত্তর।