প্রথম শোনা গিয়েছিল গত ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে সভা করবেন তৃণমূলনেত্রী। সেই নন্দীগ্রামে যেখানকার বিধায়ক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই একদা দলনেত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে ৮ জানুয়ারি সভার ঘোষণা করেন গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান শুভেন্দু। গত ৭ তারিখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা অবশ্য শেষপর্যন্ত পিছিয়ে যায়। বরং ১৮ জানুয়ারি সোমবার আজ নন্দীগ্রামের তেখালিতে জনসভা করতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধ্যায়ে ইতি টানার পর এই প্রথম নন্দীগ্রামে আসছেন দলনেত্রী। তাই তাঁর সভায় ভিড় কেমন হবে তা বড় চ্যালেঞ্জ তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের কাছে। যদিও এদিন ৩ লক্ষ মানুষের জমায়েত হবে এমন দাবি করছে পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব।
গত ৭ ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরে জনসভা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। সেই সময় শুভেন্দু দল না ছাড়লেও অধিকারী পরিবারের কাউকেই দেখা যায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে। তবে থেকেই জলঘোলা শুরু হয়েছিল অধিকারী পরিবারের বাকিদের অবস্থান নিয়ে। এরপর শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর কাঁথিকে তৃণমূলের সভাতেও উপস্থিত ছিলেন না অধিকারী পরিবারের সদস্যরা। ১৯ ডিসেম্বর অমিত শাহের হাত থেকে শুভেন্দু অধিকারী গেরুয়া পতাকা নেওয়ার পর থেকেই অধিকারী পরিবারের প্রতি কড়া পদক্ষেপ করছে তৃণমূল। তার ফল হিসাবেই কাঁথি পুরসভার প্রশাসকের পদ থেকে সরানো হয় শিশির অধিকারীর ছোট ছেলে সৌমেন্দু অধিকারীকে। যার ফলশ্রুতি সৌমেন্দুর বিজেপি গমন। এখানেই থেমে থাকেনি অধিকারী পরিবারের সঙ্গে ঘাসফুল শিবিরের দূরত্ব। চলতি মাসের ১২ তারিখ দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কাঁথির সাংসদ শুভেন্দুবাবকে। প্রায় এক দশক পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি থাকার পর গত ১৩ জানুয়ারি সেই পদও হারাতে হয় বর্ষীয়াণ শিশির অধিকারীকে। তাঁর জায়গায় জেলা সভাপতি করা হয়েছে ব মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে। শিশির অধিকারী পেয়েছেন জেলা সংগঠনের চেয়ারম্যান পদ। এমনকি নন্দীগ্রামে মমতার সভায় শিশির ও দিব্যেন্দু কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি দলের তরফে, এমনটাই দাবি করছে অধিকারী পরিবার। তাই দলনেত্রীর সভা এড়িয়েই যাচ্ছেন এখনও তৃণমূল শিবিরে থাকা দুই সাংসদ।
সূত্রের খবর অধিকারী পরিবারকে বয়কট করেই আপাতত এগোতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই দলের তরফে নেত্রীর সভায় যোগ দেওয়ার কোনও আমন্ত্রণপত্র পাঠান হয়নি শিশির ও দিব্যেন্দুকে। যদিও প্রকাশ্যে দলের দুই সাংসদের সঙ্গেই বিবাদ এড়িয়ে যেতে চাইছে ঘাসফুল শিবির। দলে ডানা ছাঁটার পর শিশির অধিকারী প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন, পরিবার ছেড়ে রাজনীতি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। শিশির অধিকারী সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার পরেই অধিকারী পরিবারের দুই সাংসদের অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তৃণশিবিরের কাছে। সেই কারণেই শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে জেলা কমিটিও এখন কাঁথির শান্তিকুঞ্জ থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছে বলেই খবর।
এদিকে শুভেন্দু অধিকারীর পরবর্তী অধ্যায় তৃণমূলনেত্রীর কাছে এই জনসভা একটা বড় ফ্যাক্টর তা বলাই বাহুল্য। কারণ নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে টার্নিং পয়েন্ট নিয়েছিল মমতার রাজ্যে ক্ষমতায় আসা। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী। এখন তিনি সঙ্গে নেই। তাই মমতার একক ক্যারিশ্মা নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্রের গড়ে কতটা কাজ করে সেটা অবশ্যই দেখার বিষয়। ইতিমধ্যে শুভেন্দু কিন্তু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বসে আছেন দুই মেদিনীপুর মিলিয়ে ৩৫টি আসনের সবকটিতেই তৃণমূল কংগ্রেস গোহারা হারবে এবার। সেখানে তেখালিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এ