![মিহিদানা -- বিশ্বরূপ গঙ্গোপাধ্যায়ের তোলা ছবি](https://akm-img-a-in.tosshub.com/lingo/styles/medium_crop_simple/public/images/story/202104/biswarup_ganguly.jpg)
'আমাদের রামপদ একদিন এক হাঁড়ি মিহিদানা লইয়া স্কুলে আসিল! টিফিনের ছুটি হওয়ামাত্র আমরা সকলেই মহা উৎসাহে সেগুলি ভাগ করিয়া খাইলাম। খাইল না কেবল 'পাগলা দাশু'।' পাগলা দাশুর মিহিদানা-লোভ ও একই সঙ্গে রামপদর উপরে জাত রাগের ফল কী হয়েছিল, তা যাঁরা সুকুমার রায়ের 'চীনে পটকা' পড়েছেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানেন।
মিহিদানা নিয়ে আলোচনা কেন?
মিহিদানার উপরে লোভ নেই, এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। মিষ্টি-প্রিয় বাঙালির কাছে মিহিদানা 'লেগাসি'। বর্ধমানে ভোট চলছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে ভোটের এই আবহে সে জেলার বিখ্যাত মিষ্টি মিহিদানা নিয়ে আলোচনাটা সেরে ফেলা যাক। মিহিদানা নিয়ে লেখালেখি, গবেষণা বিস্তর হয়েছে। ভোট-রাজনীতির এই তপ্ত বঙ্গে অমৃত-সম মিহিদানার আলোচনা কেন? এ ক্ষেত্রে বলে রাখি, মিহিদানা আবিষ্কারের পিছনেও কিন্তু ছিল এক রাজনীতি। তোয়াজের রাজনীতি!
তোয়াজের রাজনীতি
সালটা ১৯০৪। অগাস্ট মাস। ভাইসরয় লর্ড কার্জন বর্ধমান সফরে গেলেন। লর্ড কার্জনই ছিলেন বঙ্গভঙ্গের হোতা। ১৯০৫ সালে অভিভক্ত বাংলা প্রেসিডেন্সিকে বিভাজন করা তাঁর তুমুল সমালোচিত সিদ্ধান্তগুলির অন্যতম। ভাইসরয় আসবেন বলা কথা! তাঁর তোয়াজে বিন্দুমাত্র ত্রুটি থাকলে চলবে না। তখন বর্ধমানের রাজা বিজয়চাঁদ মহতাব বাহাদুর। ইংরেজদের বিশেষ সুনজরে রয়েছেন। তাই একদিকে তিনি কার্জনকে খুশি করতে ১ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করলেন বর্ধমান শহরের 'প্রতীক' কার্জন গেট। একই সঙ্গে বিশেষ মিষ্টির অর্ডার দিলেন কার্জনের জন্য।
রাজার নির্দেশ পেয়ে বর্ধমানের নামী ময়রা ভৈরবচন্দ্র নাগ তৈরি করলেন সীতাভোগ, মিহিদানা। সোনালি দানাশস্যের মতো দেখতে সেই মিষ্টি মুখে দিলে একেবারে মিলিয়ে যায়। ততধিক সুস্বাদু। এই ভৈরব নাগের আদিবাড়ি ছিল খণ্ডঘোষের সাঙঘাটগোলা গ্রাম। নাগেরা ছিলেন রাজাদের খাস মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক। রাজাদের আমন্ত্রণে ভৈরবের দাদু শ্রীনাথ নাগ পরিবারের লোকদের নিয়ে সেখান থেকে বর্ধমানে চলে আসেন।
মিহিদানা তৈরি হয় চাল থেকে
মিহিদানার প্রধান উপাদান কিন্তু চাল। প্রস্তুতিতে সাধারণত গোবিন্দভোগ, কামিনীভোগ অথবা বাসমতী চাল ব্যবহার করা হয়। চাল গুঁড়ো করে তার সঙ্গে বেসন এবং জাফরান মেশানো হয় ভালো করে। তারপর তাতে জল মিশিয়ে একটি থকথকে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। একটি ছিদ্রযুক্ত পেতলের পাত্র থেকে সেই মিশ্রণ কড়াইতে ফুটন্ত গাওয়া ঘিতে ফেলা হয়। তারপর দানাগুলি কড়া করে ভেজে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তুলে চিনির রসে রাখা হয়। ব্যাস, তৈরি হয়ে যাবে মিহিদানা।
মিহিদানা চেখে যারপরনাই তুষ্ট হয়েছিলেন কার্জন। খোদ ভাইসরয়ের সুখ্যাতিতে চটজলদি মিহিদানা হয়ে গেল বিখ্যাত। আজও যার আদর অমলিন। যদিও মিহিদানার মতো মিষ্টি কার্জনকে খেয়ে সুপ্রসন্ন হলেও বঙ্গভঙ্গের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন কার্জন।