দলের সর্বভারতীয় সভাপতির উপর হামলা একেবারের হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না ভারতীয় জনতা পার্টি। বৃহস্পতিবারই সেই চিত্র পরিস্কার হয়ে গেছিল। একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেমন ঘটনার নিন্দা করেছিলেন তেমনি ময়দানে নেমেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এবার সেই দলে নাম জুড়ল খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও। গতকালের হামলা নিয়ে এবার বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও এরাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী।কনভয় আক্রান্ত হওয়ার পরে খোঁজ নিলেন তাঁদের শারীরিক অবস্থার। জানা যাচ্ছে, গতকাল রাতেই মোদি ও কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মধ্যে ফোনে কথা হয়েছে। ফোনে কৈলাসকে বাংলায় দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির তৃণমূল যুব সভাপতির গড়ে জনসভা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সরগরম ছিল রাজ্য রাজনীতি। সকালে সপার্ষদ বিজেপি সভাপতি ডানমন্ডহারবারের দিকে রওনা দিতেই হিমেল হাওয়ার মাঝেই চড়তে থাকে রাজনৈতিক উত্তাপ। জেপি নাড্ডার কনভয়কে একাধিক জায়গায় আটকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এখানেই শেষ নয়, রাস্তাতেই নাড্ডা সহ বিজেপির অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের কনভয় লক্ষ্য করে চলতে থাকল ইটবৃষ্টি। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ এই হামলায় আহত হয়েছেন তাদের ছোট-বড় একাধিক নেতা। বাদ যাননি স্বয়ং এরাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। দলের সর্বভারতীয় সভাপতির ওপর এই হামলাকে নিয়েই এবার মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে নেমেছে গেরুয়া শিবির।
বারবার রাজ্যে নিজেদের দলীয় কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করে এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তৃণমূল প্রশাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে রাজ্যের আইন-শৃ্ঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে। এমনকি কোনও কোনও বিজেপি নেতার গলায় শোনা গিয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কথাও। আর এই আবহেই নাড্ডা ও তাঁর বাহিনীর কনভয়ে হামলা তাই বিজেপির কাছে এরাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে আরও বড় অস্ত্র তুলে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এরাজ্যের মুখ্যসচিব ও রাজ্যপুলিশের ডিজিকে তলব করেছে। আগামী ১৪ তারিখ তাঁদের দিল্লিতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। । এর আগে বৃহস্পতিবার রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্যপালের কাছে রিপোর্টও চেয়ে পাঠায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
বৃহস্পতিবারই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির কনভয়ে হামলা নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শাহ ট্যুইটে লেখেন, "আজ বাংলায় জেপি নাড্ডাজির ওপরে হওয়া আক্রমণ খুব নিন্দনীয়। যতই নিন্দা করা হয় ততই কম। কেন্দ্রীয় সরকার এই আক্রমণকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে। এই স্পনর্সড হিংসার জন্য বাংলার সরকারকে রাজ্যের শান্তিকামী মানুষের কাছে জবাব দিতে হবে।" আরেকটি ট্যুইটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেখেন, "তৃণমূল শাসনের অধীনে বাংলা অত্যাচার, অরাজকতা ও অন্ধকারের যুগে চলি গেয়েছে। তৃণমূলের শাসনে যেভাবে রাজনৈতিক হিংসাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরে চূড়ান্তভাবে আনা হয়েছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী সকলের জন্য তা দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।"
কনভয়ে হামলার ঘটনার পরেই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর ফোন করেন বেজিপর সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে। রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে পরপর বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ট্যুইট বুঝিয়ে দেয় মমতা সরকারের বিরুদ্ধে এই হামলার ঘটনাকে আগামী দিনে অন্যতম অস্ত্র হিসাবেই তুলে ধরবে গেরুয়া শিবির। বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক বৈঠক নাড্ডাও সেই ইজ্ঞিতই দেন। বলেন, যখন জন প্রতিনিধিরাই সুরক্ষিত নয় সেখানে সাধারণ মানুষের কী হাল তা সহজেই অনুমেয়। এর মাঝেই চলতি মাসেই রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সময় এরাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কী পদক্ষেপ নেন সেদিকেই তাকিয়ে এখন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।