পশ্চিমবঙ্গে প্রথম নির্বাচনী সভায় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারকে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হলদিয়ার সভায় মোদী বললেন, 'এই মেদিনীপুরের মাটিতেই তৈরি হয়েছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। এই মাটির বীর সন্তান বিদ্যাসাগর মহাশয় বাঙালিকে বর্ণপরিচয় দিয়েছেন। সতীশ সামন্তর মেদিনীপুরের এই মাটির গুণে আমি মুগ্ধ।'
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরে সভা মানেই বিজেপি নেতাদের মুখে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার স্মরণ দেখা যাচ্ছে। সদ্য বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও প্রায় প্রতিটি সভায় সতীশ সামন্ত, সুশীল ধাড়া, অজয় মুখোপাধ্যায়দের স্মরণ করছেন। কী এই তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার?
১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে স্বাধীন জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিন স্থায়ী ও সফল হয়েছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ওই সময় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ছাড়াও গঠন করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় চিতু পান্ডের নেতৃত্বে স্বাধীন সরকার, মহরাষ্ট্রের সাতারায় নানা পাটিলের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল প্রাতি সরকার, ওড়িশায় চাষি মাউলিয়া সরকার, স্বাধীন বাঞ্ছনিধি চাকলা ইত্যাদি।
তাম্রলিপ্ত সরকার বাদে বাকি সরকারগুলি বিশেষ সাফল্য পায়নি। ইংরেজরা বহু চেষ্টা করেও তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারকে উচ্ছেদ করতে পারছিল না। ১৯৪২ সালে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এই সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, ভারত স্বাধীন হলে স্বাধীন ভারতের সরকারের সঙ্গে জুড়ে যাবে।
তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের একজন সর্বাধিনায়ক ছিলেন। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে একজন সচিব। সেগুলি হল, আইনশৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচার, কৃষি, প্রতিরক্ষা ও অর্থ। মেদিনীপুরের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা সতীশ সামন্ত তাম্রলিপ্ত সরকারের সর্বাধিনায়ক হন। অর্থ সচিব নিয়োগ করা হয় পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়কে। প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র সচিবর দায়িত্বে ছিলেন সুশীল ধাড়া।
এই সরকার আইনশঙ্খলার বিষয়ে যথেষ্ট কড়া ছিল। ইংরেজরা সরকারটি ফেলে দেওয়ার জন্য নানা দুষ্কৃতীকে প্ররোচনা দিত। কিন্তু কঠোর আইনশৃঙ্খলার জেরে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রশাসন এই দুষ্কৃতীদের ধরে কঠোর সাজা দিত।
এই সরকারের তরফে গরিবদের কাবার, পরিধান, ওষুধ বিতরণ করা হত। তত্কালীন সময়ে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রায় ৮০ হাজার টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছিল।
শিক্ষার দিকেও তাম্রলিপ্ত সরকার বিশেষ জোর দিত। জাতীয় বিদ্যালয়গুলিকে অনুদান দিত। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রদের অভাব অভিযোগ শুনে তা সমাধানের ব্যবস্থা করা হত।
তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের স্থায়ীত্ব ছিল ১৯৪২ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৯৪৩ সালের জুন মাসে ব্রিটিশদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত সতীশ সামন্ত এই সরকার পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত সফলভাবে কাজ করেছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণকার্যও চালায় এই জাতীয় সরকার। অল্প সময়েই বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়।