বিজেপিকে তোপ জ্যোতিপ্রিয়র
রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে গোটা রাজ্য জুড়ে ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করতো ওরা। ৪৮ ঘন্টা হলো ফল প্রকাশিত হয়ে গেছে। ওরা যদি ক্ষমতায় আসতে তাহলে গত ৪৮ ঘন্টায় আমাদের ৪৮০০ কর্মী খুন হয়ে যেত। মঙ্গলবার দুপুরে হাবড়া বিধানসভা এলাকায় কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় এক জরুরী আলোচনায় এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই কথাই বললেন হাবড়ার তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
তিনি বলেন "আমাদের রাজ্য সবথেকে বেশি সুরক্ষিত। যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসতো তবে ফল প্রকাশের পর গত ৪৮ ঘণ্টায় ৪৮০০ তৃণমূল কর্মীকে ওরা হত্যা করত। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন শান্তি বজায় রাখতে। আমরা কোথাও আবির পর্যন্ত খেলিনি। আমরা রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করব।"
পরাজিত বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করেন জ্যোতিপ্রিয়। ছোটবেলার একটি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন "আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন মা মারধর করলে যদি খেতে না ডাকতো তখন রান্নাঘরের পাশে চক দিয়ে লিখে রাখতাম মা আর একবার ডাকলেই যাই। বিজেপি নেতাদের এখন সেই অবস্থা হয়েছে, তারাও হয়তো তৃণমূল ভবন-এর আশেপাশে লিখে রাখবে যে একবার ডাকলেই যায়। কিন্তু তারা আর ডাক পাবেনা। গদ্দার, বেইমানদের আর কোন ডাক নেই। মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। ২০২৪ সালে এদের দেশ ছাড়া করবো।"
তারকেশ্বরে ঘরছাড়া বিজেপি নেত্রী
ভোট প্রচারে এসে স্মৃতি ইরানি মধ্যান্ন ভোজন করেছিলেন তারাকেস্বরে বিজেপি নেত্রী সুমিত্রা রাউৎ এর বাড়িতে।তার বাড়িতেই হামলার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।ভাঙচুর করা হয় তার বাড়ি। ভোটের ফলাফলের প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই বাড়ি ছাড়া বিজেপি নেত্রী সুমিত্রা রাউত ও তার স্বামী। অভিযোগ আজ বেলায় তারাকেস্বরের সন্তোষপুর এলাকায় বিজেপি নেত্রী সুমিত্রা রাউৎ এর বাড়িতে শ্বশুর পরেশ চন্দ্র রাউৎ এবং শ্বাশুড়ি অনিমা রাউৎ কে বাড়ি ছেড়ে চলে না গেলে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে বাড়ি ভাঙচুর করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। যদিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির আদি এবং নব্যর গোষ্ঠীদ্বন্ধের ফলে এই ঘটনা দাবি স্থানীয় পঞ্চায়েত স্বরূপ ঘোষের।
হিংসা বন্ধ করতে আবেদন অধীরের
বাংলায় নির্বাচন পরবর্তী হিংসা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন রাখলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী । এই হিংসার কারণে কোভিড মোকাবেলা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। অধীর চৌধুরী মঙ্গলবার বহরমপুর জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে চলেছে। তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া বিরাট রাজনৈতিক জয়। পরপর তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন এটা তার রাজনৈতিক জীবনের বড় সাফল্য। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার তৃতীয় ইনিংসের জন্য শুভেচ্ছা রইল। তিনি বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন বাংলার মানুষ আবার প্রমাণ করল এই বাংলা সম্প্রতিতে বিশ্বাস করে সাম্প্রদায়িকতায় নয়। তিনি আরও বলেন, কংগ্রেস নিজেদের পরাজয়কে মাথা পেতে মেনে নিয়েছে। আগামী দিনে বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাজের ভুল ত্রুটি শুধরে দিয়ে রাজ্যকে ঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য কংগ্রেস সাহায্য করবে। কিন্তু নির্বাচনের পরে বাংলা জুড়ে যেভাবে হিংসার রাজনীতি চলছে তাতে বাংলার মুখ উজ্জ্বল হবে না। বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি ঘর ভাংচুর, আগুন লাগানো ও রাজনৈতিক কর্মীদের মারধোর করে মেরে ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি অধীর বাবু এমপি ল্যাডের প্রায় ১০ কোটি টাকা দিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্ল্যান্ট, ২ টো অ্যাম্বুলেন্স এবং আই সি ইউ তৈরী করা বা পরিষেবা প্রদান করার জন্য জেলাশাসকের কাছে অনুরোধ পত্র পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেন।
West Bengal: Several shops&residences allegedly vandalised by TMC workers in Gopal Nagar area of South 24 Parganas.
— ANI (@ANI) May 4, 2021
"On May 2, TMC goons attacked my home as my husband was BJP's polling agent. They even threatened us to sell our property & leave this place," says Shefali Das. pic.twitter.com/tPvCJibKka
কী বললেন জেপি নাড্ডা
জেপি নাড্ডা বলেন. বাংলায় ভোটের ফলাফলের পরে যে ঘটনা হচ্ছে তা চিন্তাজনক। কারণ এই সব ঘটনা দেশভাগের সময় হয়েছিল। কিন্তু এখন স্বাধীন ভারতে এমন অসহিষ্ণুতা আগে দেখিনি। বিজেপি কর্মীদের এই বিপদাকালে পৌঁছে পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক ভাবে লড়াই করার জন্য তৈরি। আমি আজ ২৪ পরগনা যাব। কার্যকতাদের বাড়ি যাব, যাদের জীবন নিয়ে নেওয়া হয়েছে। কোটি কোটি বিজেপি কর্মীদের ওনাদের পাশে আছে। মতাদর্শগত লড়াই চলবে
ভগবানপুরে বিজেপি কর্মী
গত কাল রাতে ভগবানপুর বিধানসভার জুখিয়া অঞ্চলের ২৫৪ বুথে বিজেপি কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে উত্তর কাঁথি বিধানসভার কাঁথি-২ উত্তর মণ্ডল আমতলিয়া অঞ্চলের ৮নম্বর শক্তিকেন্দ্রের ১৭৯নম্বর বুথে দোকান লুট করেছে, আতঙ্কে বিজেপি কর্মীরা ঘরছাড়া। বিজেপি কর্মীদের মারধর করছে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতিরা।
ভোটের ফল প্রকাশের পরই রাজ্যে একের পর এক জায়গায় গোলমাল হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় অশান্তি হচ্ছে। শাসক থেকে বিরোধী- বাদ যাচ্ছে না কেউই। রাজনৈতিক গোলমালের জেরে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সোমবারের পর মঙ্গলবারও একই ছবি। হিংসার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন বিরোধা দলের নেতারাও। তারা গোলমলের আশঙ্কা করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে, তাঁদের আশঙ্কা সত্যি হয়েছে।
রানিগঞ্জ বল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভট্টাচার্য পাড়ায় বিজেপি কর্মী সমর্থক এর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে কেউ বা কারা বাড়িতে তাঁর না থাকার সময় বাড়ির চারপাশে ভাঙচুর চালায়।
পরে দু'টি বাড়ির মধ্যে মশাল জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এদিনের এই ঘটনায় ব্যাপক শোকের ছায়া এলাকায়। বাড়ির সদস্যদের দাবি যে তারা বিজেপি সমর্থক বলে তাদের ওপর এ ধরনের হামলা চালানো হয়েছে।
তাদের প্রাণে মেরে ফেলার এমনকি বাড়ির মহিলা সদস্যদের নির্যাতন চালানো হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে তারা।
আজ সকাল থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডাবেশ্বর বিধানসভার লাউদোহা থানার গোগলা অঞ্চলের লস্করবাঁধ গ্রামে চলছে তৃণমূলীদের তাণ্ডব। ওই গ্রামের বুথে তৃণমূলের কম ভোট পাওয়াই এই তাণ্ডব।
দাসপাড়ায় প্রত্যেকটি ঘরে আসবাবপত্র থেকে টিভি ঘরের চাল ভাঙচুর চালাচ্ছে এবং মারধর করছে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। প্রায় ১৫টি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এলাকায় রয়েছে উত্তেজনা।
বিজেপির দাবি, বর্ধমান উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বেলকাশ অঞ্চল মিলিক পাড়ায় সোমবার রাত থেকে প্রায় ২০০-৩০০ জন তৃণমূল দুষ্কৃতী এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি, দোকান ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, মুড়ি মিল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ঘরগুলি জনমানব শূন্য। মানুষ ঘরছাড়া।