রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় ছোট থেকেই। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ- যে ভাবেই বলা হোক না কেন। এবার সরাসরি ভোটের ময়দানে।
লেখাপড়া করেছেন গণমাধ্যম নিয়ে। পছন্দের বিষয় বাংলা সাহিত্য এবং সিনেমা। বিজ্ঞাপন জগতে কাজ করেছেন টুকটাক। আপাতত সেগুলো একটু দূরে।
এখন দলের নির্দেশ নেমে পড়েছেন ভোটের ময়দানে। এক সময়ের বামদূর্গ বলে পরিচিত বর্ধমানের মাটিতে। তিনি পৃথা তা। বর্ধমান দক্ষিণের সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী। 'হিংসার বদলে হিংসা নয়।' বাবা খুন হওয়ার পর বলেছিল স্কুল পড়ুয়া মেয়েটা। তাঁর বাবা প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা। তিনি খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ। সেটা ২০১২ সালের ঘটনা।
ভোটের প্রচার, তাঁর রাজনীতিতে আসা, প্রার্থী হওয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল। ভোটের ময়দানে তো এই প্রথম। কী অভিজ্ঞতা? পৃথা বলেন, আগেও বিভিন্ন অংশের মানুষের সঙ্গে মিশেছি। তবে এতটা কাছ থেকে দেখিনি। চালকলের কর্মী, নর্দমা পরিষ্কার করেন যে মানুষ, জনমুজর, ফুচকা বিক্রেতা, চিখিৎসক- কত রকমের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। তাঁদের এক এক ধরনের চাহিদা। তাঁরা এক এক রকম ভাবে দেখতে চান, পেতে চান।
চ্যালেঞ্জ কতটা শক্ত? তিনি বলেন, চ্য়ালেঞ্জ নওয়ার জন্যই ভোটে লড়তে যাওয়া। কাজের দাবিতে সরাসরি চোখে চোখ রেখে লড়াই করা। বেকারির বিরুদ্ধে লড়াই, এটাই চ্য়ালেঞ্জ। প্রত্যেক দিন চ্যালেঞ্জ। মাথা ঠান্ডা রেখে এ কাজ করা।
তিনি বলেন, প্রচারে কোনও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। ৩৫টা ওয়ার্ডেই ঘুরেছি। পুরসভা ভোটের মতো বাড়ি বাড়ি পৌঁছেছি। অনেক জায়গায় এমনও হয়েছে আমি বলার আগে তাঁরা বলেছেন। এমনকী যে ভোটার নয়, সে-ও বলেছে। মনে করলেন, নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, পাড়ার মোড় দিতে আসতে ভয় লাগে। পৃথা বলেন, এটাই বদলাতে হবে।
স্কুল বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস। ২০১০ সাল থেকে এসএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত। কলকাতায় সিকিম মণিপাল, কল্যাণী বিশ্ববিদ্য়ালয়ে গণজ্ঞাপন নিয়ে লেখাপড়া। ইচ্ছে রয়েছে ভারতীয় সিনেমার নির্বাক যুগ নিয়ে গবেষণা করার।
বাবার মৃত্যু নাড়া দিয়েছিল প্রবল ভাবে। তিনি বলছিলেন,মরে যাওয়া আর মেরে দেওয়া তো এক নয়। রাজনৈতিক ভাবে তেমন নয়, কবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভয়ঙ্কর। বাবা খুবই ভাল বন্ধু ছিলেন। আর আমার বয়ঃসন্ধিকাল।
বাবার সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে কথা হত? তিনি বলেন, তেমন নয়। বাংলা সাহিত্য খুব প্রিয়। কোনও সময় হয়তো বই পড়ছি, সেই প্রেক্ষিতে কিছু বললেন। আলাদা কোনও ঘটনা, ফিল্ড ওয়ার্ক সম্পর্কে কথা হয়নি বিশেষ।
প্রচারের বিষয় কী কী? তিনি বলেন, কাজ, রেগার কাজ, মেয়েদের নিরাপত্তা, শিশুদের নিরাপত্তা। সরকারের খারাপ কাজ তো আছেই। তবে আমরা এলে কী করতে পারব, সেটা বলছি। কেন্দ্রীয় ভাবে এবং বর্ধমান নিয়ে কী ভাবনা সেগুলো। আর তা করতে গিয়ে একদিনে সর্বোচ্চ ২২ কিলমিটারও হেঁটে ফেলেছেন।
পৃথার দাবি, বর্ধমান শহরে বাসস্ট্যান্ডের জন্য জমি নেওয়া হয়েছে। তবে তা এখনও তৈরি হল না। এর ফলে রাস্তার ধারে কাপড়, ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে সব ব্য়বসা মার খাচ্ছে। রোজগার অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। অনেকের সন্তানের লেখাপড়াও বন্ধ হয়েছে। বাস চলত তখন এই অবস্থা ছিল না। তৃণমূল তা-ই প্রচারে সেটাও বলছে, এবার জিতলে করে দেবে। তবে ১০ বছর সময় পেয়েছিল।
গবেষণা-অধ্যাপনা না রাজনীতি? তিনি জানান, সেটা ঠিক করে দেবে পার্টি। পার্টি যা বলবে তাই করব। রাজনীতিই করবেন, আগে সেটাও ঠিক ছিল না সে অর্থে। করতে করতে হয়ে যাওয়া। বিজ্ঞাপন জগতে টুকটাক কাজ করেছেন। আর ভারতীয় সিনেমার নির্বাক যুগ নিয়ে গবেষণার ইচ্ছা রয়েছে।