শিক্ষকের জন্য় প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন পড়ুয়ারা। আগে ছিলেন কাউন্সিলর। এবার বিধানসভা ভোট। প্রতিযোগিতার পরিধি বেড়েছে, সন্দেহ নেই।
দল আছে। সংযুক্ত মোর্চা আছে। আর আছেন তাঁর পড়ুয়ারা। সেই কবে থেকে পড়াচ্ছেন! এ যেন গুরুদক্ষিণার পালা। আর সে কাজে মোটেই ফাঁকি নেই।
বৃহস্পতিবার রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোট প্রচারের শেষ দিন। তার এক ফাঁকে পড়ুয়াদের কর্মকাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে বিহ্বল হয়ে পড়লেন যেন। বলছিলেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের তালিকায় সমাজের স্তরের মানুষজন রয়েছেন। গর্ববোধ? মুখে না বললেও সে যে রয়েছে, ধরা পড়া যায় শিক্ষকের গলায়।
তিনি বেহালা পশ্চিমের সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী নীহার ভক্ত। এখন কলকাতা পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর। রাজনীতি করছি ১৯৮৬ সাল থেকে। এটা যে কঠিন আসন, মেনে নিচ্ছেন রাজনীতিবিদরা। তিনি কলকাতা পুরসভার ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি ছিলেন।
এদিন কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। গত কয়েক বছরে এলাকার কোনও উন্নয়ন হয়নি। পানীয় দল, রাস্তা নিয়ে একের পর এক অভিযোগ তুলে ধরলেন তিনি। বিরোধী দলের কাউন্সিলর বলে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে এলাকার মানুষক, সে অভিযোগও করলেন।
পাড়ায় বড়দের সূত্রে পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। পরে কলেজে গিয়ে। পড়তেন শ্য়ামাপ্রসাদ কলেজ, বাণিজ্য নিয়ে। সেখান থেকে এসএফআই করা। আর তারপর পাড়ায় যুব সংগঠন। পরে পার্টি, মানে সিপিআইএম।
তিনি বেহালা পশ্চিম-৩ এরিয়া কমিটির সদস্য। পেশা গৃহশিক্ষকতা। বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকে খেলাধুলো করতাম। ভলিবল থেকে শুরু করে তাস ফুটবল। ক্লাবের কাজ করতাম। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতাম।
এই কেন্দ্রে শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর বিজেপির হয়ে লড়ছেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। ধারে-ভারে সিপিআইএম প্রার্থীর থেকে তাঁরা তো অনেকটা এগিয়ে?
এ কথা মানতে নারাজ নীহার ভক্ত। এর কারণ হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যা, তৃণমূলের অনুন্নয়, বিজেপির বাইরে থেকে আনা প্রার্থী। সেইসঙ্গে লকডাউনে বামেদের ভূমিকা। মানুষের আস্থা ফিরেছে। দাবি করলেন তিনি।
তাঁর অভিযোগ, যেমন ধরুন বেহালার অজন্তা ১০ নম্বর বস্তি। সেখানে খাল রয়েছে। সেটা সংস্কার করা হয়নি দীর্ঘদিন। ফলে জল জমে থাকে। পানীয় জলের সমস্যা। চৌরাস্তা, দাসপাড়ায় বুস্টিং স্টেশন বাম আমলে হয়েছে। তারপর আর কিছু হয়নি।
তাঁর দাবি, শকুন্তলা পার্কে বুস্টিং স্টেশন তৈরি করেছি। কেন জল এল না, সেই প্রশ্ন আর কাউকে করতে পারছি না। কারণ কলকাতা পুরসভার অধিবেশন তো বন্ধ!
বামেদের দিকে মানুষের আস্থা ফিরছে। তার কারণ হিসেবে তিনি জানান, শ্রমজীবী ক্যান্টিন, বাজার চালুর জন্য মানুষের ভরসা ফিরে আসছে। অনেক বস্তি আছে বেহালায়। ১৩১, ১৩২ ওয়ার্ডে। সেখানে উন্নয়নের জন্য টাকা আসে। তবে পরিকল্পনা নেই। আক্ষেপ করলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ক্লাবকে টাকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
তিনি বলেন, বাড়িতে পড়াই। প্রচুর পড়ুয়া। সেই ১৯৯৪ সাল থেকে পড়াচ্ছি। কৃহশিক্ষকতার সুযোগে তো অনেকেই আপনাকে চেনেন। এটা কি বাড়তি সুবিধা দেবে? প্রাক্তন পড়ুয়ারা প্রচারে নামেনি?
পড়ুয়াদের কথা বলতে গিয়ে আর থামেন না যেন শিক্ষক! আর তাঁদের কর্মকাণ্ড দেখে হতবাক। বলছিলেন, তাঁরা টাকা দিয়েছে। হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানার দিয়েছে। আজ তো শেষ দিনের প্রচার। পড়ুয়ারা ট্যাবলো সাজিয়ে প্রচার করছে। ১০-১২টা গাড়ি নিয়ে ঘুরছে। ভাবতেই পারিনি।