scorecardresearch
 

সংখ্যালঘু ভোট টানতে বাজি ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মা! ডোমজুড়-নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্ররা কতটা হবেন সফল?

দেড়মাস হল শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। নতুন দলে নাম লিখিয়েই পুরনো দলকে ভোটে হারাতে ময়দানে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন শুভেন্দুবাবু। তাতে সাড়াও মিলছে ভাল। আর এর মাঝেই যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত সপ্তাহে দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের হাত থেকে গেরুয়া ঝাণ্ডা নিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দলবদল করে রাজীবও নেমে পড়েছেন ময়দানে। সোমবারই হাওড়ার বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন রাজীব। তৃণমূল ছাড়ার আগেই রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তিনি আগামী নির্বাচনে ডোমজুড় থেকেই লড়াই করবেন। অন্যদিকে শুভেন্দুকেও আসন্ন বিধানসভা ভোটে দেখা যেতে পারে নন্দীগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই। কিন্তু নন্দীগ্রাম ও ডোমজুড় দুটিতেই সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা প্রচুর। বিজেপির সংগঠনও এখনও তেমনভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। এই অবস্থায় পুরনো দলের সঙ্গে লড়তে ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মাই কি ভরসা হতে চলেছে রাজীব ও শুভেন্দুর? এই প্রশ্নই এখন দানা বাঁধছে বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে।

Advertisement
দলবদলের পর নিজেদের পুরনো কেন্দ্র পদ্ম ফোটানো কতটা চ্যালেঞ্জের শুভেন্দু ও রাজীবের কাছে? দলবদলের পর নিজেদের পুরনো কেন্দ্র পদ্ম ফোটানো কতটা চ্যালেঞ্জের শুভেন্দু ও রাজীবের কাছে?
হাইলাইটস
  • নন্দীগ্রাম ও ডোমজুড় দুটিতেই সংখ্যালঘু ভোটারের আধিক্য
  • এই দুই কেন্দ্রে ভোটে লড়লে হাড়তে হবে বলছে পুরনো দল
  • দলবদলের পর নিজেদের পুরনো কেন্দ্র পদ্ম ফোটানো কতটা চ্যালেঞ্জের শুভেন্দু ও রাজীবের কাছে?

দেড়মাস হল শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। নতুন দলে নাম লিখিয়েই পুরনো দলকে ভোটে হারাতে ময়দানে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন শুভেন্দুবাবু। তাতে সাড়াও মিলছে ভাল। আর এর মাঝেই যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত সপ্তাহে দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের হাত থেকে গেরুয়া ঝাণ্ডা নিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দলবদল করে রাজীবও নেমে পড়েছেন ময়দানে। সোমবারই হাওড়ার বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন রাজীব। তৃণমূল ছাড়ার আগেই রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তিনি আগামী নির্বাচনে ডোমজুড় থেকেই লড়াই করবেন। অন্যদিকে শুভেন্দুকেও আসন্ন বিধানসভা ভোটে দেখা যেতে পারে নন্দীগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই। কিন্তু নন্দীগ্রাম ও ডোমজুড় দুটিতেই সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা প্রচুর। বিজেপির সংগঠনও এখনও তেমনভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। এই অবস্থায় পুরনো দলের সঙ্গে লড়তে ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মাই কি ভরসা হতে চলেছে রাজীব ও শুভেন্দুর? এই প্রশ্নই এখন দানা বাঁধছে বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে।

নন্দীগ্রামের পরিস্থিতি
নন্দীগ্রামে ৪০ শতাংশ মুসলিম ভোট। তাই এবারের বিধানসভা ভোটে শুভেন্দু যদি নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করেন তাহলে তাঁকে সংখ্যালঘুরা ভোট দেবে না, এমন হিসেবই কষেছে ঘাসফুল শিবির। ভোটের অঙ্ক বলছে, নন্দীগ্রামে ২০১৬ সালে ৬৭.০২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল, জয়ী হন শুভেন্দু অধিকারী৷ বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৫.৪০ শতাংশ ভোট৷ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপি-র ভোটবৃদ্ধির হার শাসক দলকে উদ্বেগে রাখলেও নন্দীগ্রাম যথেষ্ট নিরাপদ আসনই ছিল তৃণমূলের৷ কারণ ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের ফল অনুযায়ী নন্দীগ্রামে তৃণমূল পেয়েছিল ৬৩.১৪ শতাংশ ভোট৷ আর বিজেপি-র ভোট প্রাপ্তির হার বেড়ে হয় ৩০.০৯ শতাংশ৷

শুভেন্দু বিদায়ের পর  খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হবেন বলেছেন। তাই  নন্দীগ্রাম এখন শাসক দলের কাছে প্রেস্টিজ ফাইট হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ নন্দীগ্রামে দলনেত্রীকে নির্বিঘ্নে জিতিয়ে আনতে তাই প্রস্তুতিতে ফাঁক রাখতে চাইছে না ঘাসফুল শিবির৷ অন্যদিকে নিজের প্রাক্তন আসনে তিনি লড়বেন কিনা সেকথা এখনও খোলসা করেননি শুভেন্দু, তবে প্রাক্তন দলনেত্রীকে ৫০ হাজার ভোটে হারাবেন এমন চ্যালেঞ্জও দিয়ে রেখেছেন রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী। ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে এগোচ্ছে তাতে প্রেস্টিজ ইস্যুতে নন্দীগ্রাম থেকেই লড়তে হতে পারে শুভেন্দুকে। বিজেপির ভোট বাড়লেও এখনও মেদিনীপুরে গেরুয়া শিবিরের সংগঠন কিন্তু তেমন শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে পুরনো বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে শুভেন্দুর মত নব্য বিজেপি হওয়াদের যে একটা চাপা দ্বন্দ্ব রয়েছে তা আর আলাদা করে বলার দরকার নেই। তাই শুভেন্দুর কাছে এবারের লড়াইটা যথেষ্ট কঠিন তা মানতেই হবে। একে বিজেপির সংখ্যালঘু বিরোধী ভাবমূর্তি, তারওপর দুর্বল দলীয় সংগঠন, সঙ্গে পুরনোদলের মীরজাফর প্রচার, এর মাঝখানে নিজের ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মাই ভরসা শুভেন্দুর। 

Advertisement
শুভেন্দুর সঙ্গে রাজীব
শুভেন্দুর সঙ্গে রাজীব

ইতিমধ্যে ভোটভাগের হিসাবও করে ফেলেছেন শুভেন্দু, প্রকাশ্য সভায় সেকথা বলতেও দেখা গেছে তাঁকে। মমতাকে কটাক্ষ করেই বলেছেন, , "কার ভরসায় আপনি দাঁড়াবেন? ৬২ হাজারের ভরসায়। ২ লাখ ১৩ হাজারের ভোটে বিজেপি জিতবে। যারা জয় শ্রীরাম বলে। ৬২ হাজার ঘরে সিঁধ কাটব।" নন্দীগ্রামে ২৩ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ব্যখ্যা ৬২ হাজার বলতে শুভেন্দু অধিকারী এই সংখ্যালঘুদের কথাই বলছেন। গত ১৪ বছরে নন্দীগ্রামের মানুষ পাশে পেয়েছে শুভেন্দুকে। তাই তিনি দলবদল করতে শহিদ পরিবারগুলিকে দেখা যাচ্ছে গেরুয়া শিবিরের মঞ্চেই। এই ভরসাতেই সংখ্যালঘু ভোটে সিঁধ কাটার কথা বলছেন শুভেন্দুও। এহেন পরিস্থিতিতে তাই স্বস্তিতে নেই তৃণমূলও। নন্দীগ্রামে দলনেত্রীর জেতার সম্ভাবনা কতটা তা নিয়ে  রাজনৈতিক সমীক্ষা চালাতে হচ্ছে ঘাসফুল শিবিরকেও। 

টার্গেটে রাজ্যের ৭০ লক্ষ কৃষক পরিবার, 'রাজধানী এক্সপ্রেসে'র গুঁতোয় বাংলায় কি বেসামাল BJP-র গেমপ্ল্যান?

নন্দীগ্রামে মমতার বড় ভরসা হবে সংখ্যালঘু ভোট। নন্দীগ্রামে সংখ্যালঘু ২৩ শতাংশ। আর ৭৭ শতাংশ হিন্দু। তৃণমূলের আশা, সেক্ষেত্রে ২৩ শতাংশের অধিকাংশের সমর্থন পাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি ৪০ শতাংশ হিন্দু ভোট তৃণমূলের বাক্সে এসেছিল। সেই ভোট ভাগ হবে শুভেন্দু ও মমতার মধ্যে। সেই ভাগের উপর উপর নির্ভর করবে নন্দীগ্রামে মমতার ভাগ্য। কিন্তু সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে তিনি ভাগ বসাবেন এমনটাই দাবি করছেন শুভেন্দু। ফলে ভোট ভাগের উপর অনেকটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে নন্দীগ্রামে বিজয়ীর ভাগ্য।

ডোমজুড়ের পরিস্থিতি
তৃণমূল ছাড়ার আগেই রাজীব বনন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন  আগামী বিধানসভা ভোটে তিনি ডোমজুড় থেকেই লড়বেন। রাজ্যের অন্য কোনও কেন্দ্র নয়, বরং ভূমিপুত্র হিসাবে তিনি ডোমজুড় থেকেই রণাঙ্গনে নামবেন এই চ্যালেঞ্জ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগেই নিয়ে রেখেছেন রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে ডোমজুড় থেকেই জেতেন রাজীব। হাওড়ার ডোমজুড় থেকে ২০১১ সালে জিতেই সেচমন্ত্রী হয়েছিলেন রাজীব। আর গতবার ডোমজুড় থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে ১ লক্ষ ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে রাজ্যের মধ্যে রেকর্ড গড়েন রাজীব। এবারও তিনি পুরনো কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে চাইলেও জয়ের সম্ভাবনা কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ ডোমজুড় কেন্দ্রটিও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত।

চোখে জল আর হাতে 'দিদি'র ছবি, রাজনীতির অসৌজন্যে রাজীব যেন ভিনগ্রহী
 

রাজীব দল ছাড়তেই তাঁর পুরনো সহকর্মী অরূপ রায় থেকে জেলার সাংসদ প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায় সকলেই দাবি করছেন, ডোমজুড় থেকে লড়লেই হারতে হবে তাঁকে। এমনকি ডোমজুড় যে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত তার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রও রাজীবকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। ডোমজুড় হাওড়ায় হলেও হুগলির শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলপ্রার্থী কল্যাণের শ্রীরামপুর থেকে জেতার বিষয়ে রাজীবের ডোমজুড়ের বিশাল অবদান ছিল এমনটাই বলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে দলবদল করতেই রাজীবের ভোটঅঙ্ক কমে যাওয়ার একটা বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। সেকথা নিজেও জানেন তিনি।

Advertisement

দু'বার ডোমজুড় থেকে জিতলেও রাজীবের বিরুদ্ধে বর্তমানে বহিরাগত স্লোগান তুলছে তৃণমূল শিবির। এনিয়ে পোস্টারও পড়েছে এলাকায়।  তবে কাজের মানুষ, কাছের মানুষ হিসাবে ডোমজুড় তাঁকে আবারও বেছে নেবে বলেই বিশ্বাসী রাজীব।  তাই  তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে,  “কেউ বলতে পারবেন না (ডোমজুড়ের মানুষ), আমাকে  রাস্তায় দেখেননি বা কোনদিনও দেখা যায়নি। সবসময় রাস্তায় নেমেছি। আমফান  থেকে শুরু করে কোভিড পরিস্থিতিতে রাস্তায় নেমেছি। আজকে যারা বড় বড় কথা বলছেন, সেদিন কাউকেই দেখা যায়নি। সেদিন ডোমজুড়ের মানুষ দেখেছেন কাকে রাস্তায় দেখা গেছে। সেই উত্তর আমি দেব না। ডোমজুড়ের মানুষের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক, আত্মিক সম্পর্ক। আগামী দিনে ডোমজুড়ের মানুষ বুঝিয়ে দেবেন কে তাদের পরিবারের সদস্য, আর কে বাইরের লোক?” মানুষকে ভরসা করতে চাইছেন রাজীব। তাই ডুমুরজলার বিজেপির  সভায়  তৃণমূল সংখ্যালঘুদের শুধু ভোটের জন্যই ব্যবহার করে গেছে এমন কথা শোনা গিয়েছে রাজীবের গলায়।  তৃণমূল তাঁকে বহিরাগত প্রমাণ করতে চাইলেও তিনি আসলে ভূমিপুত্র, এমনটাই দাবি করছেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজীব। 

মুসলিম ভোটে নজর বিজেপিরও
বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে আদিবাসী, মতুয়া ভোটের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব এটাও জানে  পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে  মুসলিম ভোটেরও প্রয়োজন হবে। তাই ভোটের আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুদের গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা যে সাম্প্রদায়িক দল নয় এই ট্যাবু মুছে ফেলতে মরিয়া বিজেপি। সেই কাজে অনেকটাই যে সফল হয়েছে গেরুয়া শিবির তা বলাই বাহুল্য। এরাজ্যে লোকসভা ভোটে ১৮টি সংখ্যালঘু আসনের মধ্যে  চারটি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপির হাতে গিয়েছে গতবার। এগুলি হল দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, বনগাঁ, রাণাঘাট। রাজ্যের ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটে ভাগ বসাতে চায় বিজেপি। নিজেদের প্রাক্তন  কেন্দ্রে যথেষ্ট জনপ্রিয় রাজীব এবং শুভেন্দু দু'জনেই। বিধানসভা ভোটে সমস্ত বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে দু'জনে যদি জিতে আসতে পারেন তবে এরাজ্যে সংখ্যালঘুদের মধ্যে দলের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে তা ভালই জানে গেরুয়া নেতৃত্বও।

 

Advertisement