বালি পাচার, কয়লা পাচার, গরু পাচার, সিন্ডিকেট এসব নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এবার সেই বিজেপিতে যোগ দিয়েই নিজের পুরনো দলের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ আনলেন নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র। বুধবার কাঁথির জনসভায় গেরুয়া টিকা পরা শুভেন্দু দাবি করলেন ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে এবার 'ভাইপো' কিডনি পাচার করবে। বিজেপিতে যোগ দিয়েই 'ভাইপো'কে নিশানা করে চলেছেন শুভেন্দু। তাঁর তৃণমূল ত্যাগের অন্যতম কারণ যে 'ভাইপো' সেই বিষয়টিও কারণ অজানা নয়। এদিন তাঁর ব্যাখ্যাও দেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, ‘আমার ভাইপোয় সমস্যা নেই। আমার সমস্যা তোলাবাজ ভাইপোয়।’
নিজের গড়ে এদিন প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন শুভেন্দু। সেই রেশ ধরে মুখ্যমন্ত্রীকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিলেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম মুখ। মুখ্যমন্ত্রী আগামী ৭ তারিখ তাঁর প্রাক্তন বিধানসভা কেন্দ্রে সভা করতে আসলে তিনিও পাল্টা জবাব দেবেন। আগামী ৮ তারিখ নন্দীগ্রামে সভা করবেন শুভেন্দু, সেখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাবতীয় বক্তব্যের উত্তর দেবেন তিনি। এমন ঘোষণাই করলেন শিশিরপুত্র।
শুভেন্দু দলত্যাগের পর গত বুধবার কাঁথিতে জনসভা করতে এসেছিলেন তৃণমূলের দুই নেতা সৌগত রায় ও ফিরহাদ হাকিম। জনসভায় ভিড় দেখে আপ্লুত ছিলেন দুই নেতাই। অধিকারী গড়ে দাঁড়িয়ে চাঁচাছোলা ভাষায় দুই নেতাই আক্রমণ করে গেছিলেন প্রাক্তন সহকর্মীকে। 'মিরজাফর’,‘বিশ্বাসঘাতক’-এর মত বাছা বাছা কিছু শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছিল শুভেন্দুর জন্য। পরিবারতন্ত্র নিয়ে রাজ্যের পুরমন্ত্রী নিশানা করেছিলেন প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রীকে। দল বদলের পর এই প্রথম নিজের শহরে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে অংশ নিয়ে তার ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। নাম না করে ফিরহাদ হাকিমকে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। বলেন, ‘উপনির্বাচনে টিকিট না পেয়ে মমতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন।মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের বাড়িতে ঢিলও মারেন।’ সৌগত রায়কেও ছাড়েনিন শুভেন্দু। বনগাঁতে তাঁর প্রচারে শুভেন্দুকেই যেতে হয়েছিল মনে করিয়ে দিয়েছেন। তুলে এনেছেন ১৯৯৮ সালে একদিকে মমতার পতাকা, অন্যদিকে বিজেপির পতাকা নেওয়ার প্রসঙ্গও।
দলবদলের পর স্থানীয় মানুষ তাঁকে গ্রহণ করেছেন কিনা, সেটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল শুভেন্দুর কাছে। আপাতত সেই কাজে সফল তিনি। প্রথম দিনই তাঁর রোড শোতে বিপুল সাড়া মেলে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এই রোড শো-র শেষে সভাতে মানুষের জনস্রোত দেখে শুভেন্দু তাই বলে ওঠেন, আপনাদের উৎসাহই বলে দিচ্ছে আমি ভুল সিদ্ধান্ত নিইনি। জনগণ তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে রোড শোয়ে মানুষ এসে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরেই তৃণমূলের একাধিক নেতৃত্ব আক্রমণ করে চলেছেন শুভেন্দুকে। এর জবাবে আজ নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র বলেন, ‘তৃণমূলের পায়ে শুভেন্দু-কাঁটা ফুটেছে।' তাঁর কটাক্ষ, আমি গ্রামের ছেলে পান্তা খাওয়া ছেলে। এই গ্রামের ছেলের সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার ৪-৫টা লোকের লড়াই। এটা ট্রেলার দেখছেন। সিনেমাটা বাকি রয়েছে।
শুভেন্দু কোনও ফ্যাক্টর নয় তা বোঝাতে বারবার তৃণমূল শিবির তাঁর অতীত সামনে নিয়ে এসেছে। তাঁর পরাজয়ের একের পর এক রেকর্ড সামনে তুলে ধরেছে। তার জবাব এদিন দিয়েছেন শুভেন্দু। কিরণময় নন্দ, লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে কেউ লড়তে চায়নি। আমি লড়েছি। এরপরই প্রাক্তন দলনেত্রীকে তাঁর চ্যালেঞ্জ, ১৯৯৮ সালের মত ফের একবার এই এলাকায় দ্বিতীয় স্থানেই থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র। তাই প্রশাসনিক ভাবে পূর্ব ও পশ্চিম ভাগ হলেও গোটা মেদিনীপুরেই এবার পদ্ম ফুঁটবে বলে চ্যালেঞ্জ ভূমিপুত্রের।