সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মোদীর ব্রিগেড সমাবেশে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। তবে মিঠুনের বিজেপি যোগ নিয়ে আজ নয় গত দু'বছর ধরেই চলছিল চর্চা। ২০১৯ সালে পুনেতে আরএসএসের সদর দফতরে গিয়েছিলেন মিঠুন। তখনি রব উঠেছিল এবার পদ্মের হাত ধরতে চলেছেন তিনি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিঠুনের বাড়িতে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত জেতেই সেই জল্পনা আরও দৃঢ় হয়। অবশেষে শনিবার রাতে মিঠুনের কলকাতা আগমন ও রবিবার ব্রিগেডের ময়দানে তাঁর উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয় তিনি এবার সত্যিই শিবির পরিবর্তন করছেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিঠুন বলেছেন, তিনি বাংলার বিধানসভা ভোটে প্রচারের ময়দানে নামবেন। এমনকি তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, সকলের সামনে এমন কথাও বলতে শোনা গিয়েছে মহাগুরুকে। একদা তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন মিঠুন। এহেন হাইপ্রফাইল তারকার বিজেপিতে যাওয়া নিয়ে তৃণমূলনেত্রী এদিন কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও শিবিরের অন্যান্য নেতারা কিন্তু তাঁকে নিশানা করতে ছাড়ছেন না। এমনকি মিঠুনের বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে তৃণমূলের বর্ষীয়াণ সাংসদ সৌগত রায়তে। কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও।
মিঠুনকে নকশাল বলে কটাক্ষ সৌগতর
তৃণমূলের মুখপাত্র তথা সাংসদ সৌগত রায় রবিবার বিকেলে মিঠুনকে ‘আসলে একজন নকশাল’ বলে মন্তব্য করেন। সঙ্গে তাঁর দাবি, মিঠুন বিগত দিনের স্টার। এদিন সৌগতবাবু বলেন, ‘উনি চার বার দল বদলেছেন। উনি আসলে একজন নকশাল। তিনি তৃণমূলে আসেন। এখন বিজেপিতে যোগ দিলেন। তিনি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নন। বাংলার সাথে ওর কোনও সম্পর্কও নেই। মিঠুন থাকে মুম্বইয়ের মাঠ আইল্যান্ডে নয়তো উটির হোটেলে। বাংলার সাথে কোনও যোগ নেই। ওর কথা ধর্তব্যের মধ্যে আনাই উচিত নয়।’
মিঠুনের দলবদল নিয়ে প্রতিক্রিয়া ফিরহাদের
মিঠুনের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। কলকাতার বিদায়ী মেয়র বলেন, "ছোটবেলা থেকে ওর সিনেমা দেখঠি। কখনও ডিস্কো ড্যান্সার কখনও বা অন্য কোনও ছবি। আমি ওকে সিপিএমের সুভাষ চক্রবর্তীর হয়ে ভোটপ্রচার করতে দেখেঠি। এরপর তৃণমূলেও দেখেছি।এবার ওকে অন্য আরেক দলে দেখলাম। "
চুপ থারলেন মমতা
মিঠুনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রশ্ন তুললেও এদিন অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা যায়নি দলনেত্রীকে। ব্রিগেডে যখন মিঠুনকে নিয়ে উচ্ছাসে মাতছে গেরুয়া নেতৃত্ব তখন শিলিগুড়িতে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন মমতা। সেখানে প্রত্যাশামত মোদীকে আক্রমণ শানালেও মিঠুনকে নিয়ে একটি শব্দও ব্যবহার করতে শোনা যায়নি তৃণমূলনেত্রীকে। একদা সুভাষ ঘনিষ্ঠ মিঠুন রাজ্যে পালাবদলের পর মমতার কাছে লোক হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে মিঠুনকে রাজ্যসভাতেও পাঠিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু সারদায় মিঠুনের নাম জড়াতেই সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। সাংসদ হিসাবে মেয়াদ শেষের আগে ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন মিঠুন। সারদাকর্তার থেকে নেওয়া টাকাও ইডি দফতরে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। স্বাস্থ্যের কারণে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিচ্ছেন বলে সেই সময় জানিয়েছিলেন তিনি। ৫ বছর পর আবার রাজনীতির ময়দানে ফিরলেন তিনি। তবে এবার আর পুরনো নেত্রীর হাত ধরে নয় সম্পূর্ণ এক নতুন পরিচয়ে। মিঠুনের এই পালাবদল নিয়ে তৃণমূলের ছোট-বড় নেতারা প্রতিক্রিয়া দিলেও মমতার এই মৌনতা কিন্তু প্রশ্ন তুলে দিল। ভদ্রতা নাকি সৌজন্য, নাকি বড় দাদার প্রতি অভিমান, নাকি নিছকই উপেক্ষা, মিঠুনকে নিয়ে মমতার চুপ থাকার কারণ অবশ্য অধরাই থেকে গেল।