scorecardresearch
 

'মৌসম বদলে'ও গনি খানের খাসতালুকে অপরাজেয় কংগ্রেস

মালদা লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের হয়ে ১৯৮০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সংসদ ছিলেন গনি খান চৌধুরি। আর সেই ধারাই আজও বহমান। মালদা এবং সুজাপুরে চৌধুরি পরিবারই একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করে এসেছিল। কিন্তু ভাঙন ধরালেন মৌসম বেনজির নূর। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের হাত ধরলেন বটে কিন্তু কতটা সাহায্য করতে পারলেন মমতা শিবিরকে সে প্রশ্ন উঠছে নির্বাচন প্রাক্কালে।

Advertisement
মালদাতে কংগ্রেসের ভিত বরাবরই শক্ত। মালদাতে কংগ্রেসের ভিত বরাবরই শক্ত।
হাইলাইটস
  • মালদা লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের হয়ে ১৯৮০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সংসদ ছিলেন গনি খান চৌধুরি
  • কিন্তু ভাঙন ধরালেন মৌসম বেনজির নূর
  • কতটা সাহায্য করতে পারলেন মমতা শিবিরকে সে প্রশ্ন উঠছে নির্বাচন প্রাক্কালে

পরিবার ও রাজনৈতিক মঞ্চ সবসময়ই দুই ভিন্ন প্রেক্ষাপট। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে তা সর্বতভাবে জড়িয়ে। নির্বাচনী আবহে যেমন মালদা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণই আন্তঃরাজনীতি। মালদাতে কংগ্রেসের ভিত বরাবরই শক্ত। মালদা লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের হয়ে ১৯৮০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সংসদ ছিলেন গনি খান চৌধুরি। আর সেই ধারাই আজও বহমান। মালদা এবং সুজাপুরে চৌধুরি পরিবারই একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করে এসেছিল। কিন্তু ভাঙন ধরালেন মৌসম বেনজির নূর। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের হাত ধরলেন বটে কিন্তু কতটা সাহায্য করতে পারলেন মমতা শিবিরকে সে প্রশ্ন উঠছে নির্বাচন প্রাক্কালে।

সুজাপুরের বিধানসভা নির্বাচনী ইতিহাস দেখলে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত গনি খান চৌধুরি কংগ্রেস বিধায়ক পদে এই এলাকার দায়িত্ব সামলেছিলেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই এলাকার বিধায়ক হন গনি খানের বোন রুবি নূর। মায়ের প্রয়াণের পর ২০০৯ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন মৌসম বেনজির নূর। মালদহের প্রবাদপ্রতিম কংগ্রেস নেতা গনি খান চৌধুরীর ভাগ্নি মৌসম সে বছরের জানুয়ারিতে সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। সে বছরই লোকসভা নির্বাচনে উত্তর মালদা কেন্দ্র থেকে মৌসমকে ফের প্রার্থী করে কংগ্রেস। সে ভোটেও মৌসম জেতেন। ২০১৪ সালে ফের উত্তর মালদা থেকে জয়ী হন মৌসম। পরে মালদহ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদও পান মৌসমই।

তৃণমূলের নজরে তাই ছিলেন গনি খান ভাগ্নিই। মালদাতে ২০১৬ সালে শূন্য হাতে থাকতে হয়েছে তৃণমূলকে। ১২ আসনের মধ্যে ৮টিতে জয় লাভ করেছিল কংগ্রেস। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে চৌধুরি পরিবারে ফাটল ধরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে নাম লিখিয়েছিলেন মৌসম। নির্বাচনের আগে থেকেই প্রদেশ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনি। যদিও কংগ্রেসের তরফে সাফ জানান হয় শক্ত ভিটেমাটিতে শরিকি তারা চায় না। এরপর অবশ্য হাত শিবির ছেড়ে মমতার হাত ধরেন মৌসম। 

Advertisement

যদিও মৌসম দলত্যাগ করায় মালদহে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কোনও রাজনৈতিক ক্ষতি হবে না বলেই জানান হয়েছিল। এর উত্তর যেন মিলল ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনেই। তৃণমূলের হয়ে লড়াই করলেন মৌসম। বিপরীতে ছিলেন মামা আবু হাসেন খান চৌধুরি (রাজনৈতিক মহলে যিনি ডালু বাবু নামে পরিচিত)। বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেন গনি খান ভ্রাতা। মৌসমের বিধানসভায় জায়গায় দাঁড়ালেন ডালু-পুত্র ইশা খান চৌধুরী। “দল ভাঙানোর রাজনীতি তৃণমূল, বিজেপি-ই করে। মালদহের মানুষ এ সব পছন্দ করেন না", এমন কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। 

কিন্তু মালদাতে যেন অপরাজেয় কোতোয়ালির গনি পরিবারই। সেই ভরসা থেকেই ফের জেলা কংগ্রেসের সভাপতি করা হল গনি খান চৌধুরীর ভাই তথা দক্ষিণ মালদহের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীকে। বেশ কয়েক বছর এই দায়িত্বপদ সামলেছিলেন মৌসম। যদিও তৃণমূলে আসার পর থেকে জয়ের স্বাদ ভুলতে হয়েছে তাঁকে এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। সম্প্রতি মালদার জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেছেন, "মৌসমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে হারানো হয়েছে।" 

বর্তমানে জেলা তৃণমূল সভানেত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মৌসম। বিধানসভা ভোটের আগেও জেলা পরিষদেও  লেগেছে ভাঙন। তৃণমূলের একাধিক সদস্য বিজেপিতে চলে গিয়েছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে, কংগ্রেসের নাজমা খাতুনকে প্রার্থী করা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ডালু বাবুর শিবিরেও। এমনকী কংগ্রেস-বাম এবং আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে হাত মেলানোয় ক্ষুদ্ধ আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেছিলেন ভোটের পর পরিস্থিতি তেমন হলে তৃণমূলকে সমর্থন করতে পারে কংগ্রেস। 

বর্ষীয়ান নেতার মুখে 'মৌসম সুর' শুনে শোরগোল উঠেছিল কংগ্রেসে। যদিও পরে তিনি এই মন্তব্য নিয়ে অবস্থান বদল করেন কিন্তু কাঁটা যেন রয়েই গেল। একুশের নির্বাচনে কোন জেলায় কোন রঙ আধিপত্য দেখাবে সে আশায় রয়েছে রাজনৈতিক মহল। গেরুয়া ঝড়ের বাড়বাড়ন্তে মৌসম বনাম ডালু বাবুর এই নির্বাচনে হাত শিবিরের খাসতালুক চৌধুরিদের হাতের তালুতে কতটা থাকবে কি না সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

Advertisement