যদি বাংলায় বিজেপি দুই অঙ্ক পেরোয় তবে তিনি অবসর নেবেন এমন চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর। গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মিডিয়ার করা Exit Poll সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে পিকের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে। কারণ অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষাতেই দাবি করা হয়েছিল, এবার খুব সহজেই বাংলায় ১০০ গণ্ডি পেরোবে ভারতীয় জনতা পার্টি। কোনও কোনও মিডিয়া হাউস রাজ্যে প্রথমবার বিজেপির সরকার গঠন হবে এমন দাবিও করে বসে। তবে রবিবার সেই সহ হিসেব ওলটা-পালট হয়ে গেল। আর চার মাস আগের ট্যুইট ফের রিট্যুইট করে প্রশান্ত কিশোর মনে কিরয়ে দিলেন, তাঁর ভবিষ্যতবাণী ব্যর্থ হয়নি।
For all the hype AMPLIFIED by a section of supportive media, in reality BJP will struggle to CROSS DOUBLE DIGITS in #WestBengal
— Prashant Kishor (@PrashantKishor) December 21, 2020
PS: Please save this tweet and if BJP does any better I must quit this space!
২০২০-র ডিসেম্বরে তৃণমূলের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ট্যুইট করেছিলেন। প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছিলেন বাংলাতেই কিছুতেই দুই অঙ্কের আসন টপকাবে না গেরুয়া শিবির। ট্যুইট করে রণনীতি গুরু প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছিলেন, যতই হাওয়া উঠুক না কেন, বাংলায় দুই অঙ্ক পেরতে বেগ পেতে হবে বিজেপিকে । রীতিমত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, এই ট্যুইটটা সেভ করে রেখে দিতে। যদি এর অন্যথা হয়, তবে তিনি তাঁর জায়গা ছেড়ে সরে দাঁড়াবেন। দিদিকে বলো, স্বাস্থ্যসাথী
এদিন সকালে ভোট গণনা শুরু হতেই বিজেপি ও তৃণমূল সমানে সমানে লড়াই করছিল। তবে বেলা যত বাড়তে থাকে ততই এগিয়ে যেতে থাকে তৃণমূলের আসন সংখ্যা। আর একশোর নীচেই থামতে হয় গেরুয়া শিবিরকে। এরপরেই রবিবার নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডলে চার মাস আগের সেই ট্যুইটই একেবারে উপরে তুলে আনেন তিনি।
প্রশান্ত কিশোর নির্বাচনী কৌশলবিদ হিসাবে ২০১৪ সাল থেকে আলোচনায় রয়েছেন। বিহারে নীতীশ কুমারের সাথে কাজ করার সময় পিকে ব্র্যান্ড সকলের নজর কাজে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পিকে ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য নির্বাচনের কৌশল তৈরি করেছিল। যদিও পরে বিজেপির সাথে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে প্রশান্ত কিশোরকে ভোট কৌশলী হিসাবে নিয়ে আসে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ কড়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । ইতিমধ্যে, তৃণমূলের অনেক নেতা পিকে কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে দল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও, পিকে-র দাবি ছিল, বিজেপির আসন সংখ্যা এবার তিন অঙ্কে পৌঁছবে না। নিজের ভবিষ্যতবাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিলেন পিকে। সেই সঙ্গে এটাও বলতে হবে তৃতীয় বার রাজ্যে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পেছনে পিকের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বাংলায় তৃণমূলের দায়িত্ব নিয়ে আসার পরই জনমানসে জনপ্রতিনিধিদের ভাবমূর্তি যাচাই করতে 'দিদি-কে বলো' নামক প্রচার কর্মসূচি নিয়েছিলেন পিকে। এই এক কর্মসূচি দিয়ে তিনি বাংলায় দিদি অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা, তাঁর দলের বিধায়কদের জনমানসে ভাবমূর্তি এবং জনসংযোগ করতে সফল হয়েছিলেন। প্রশান্ত কিশোর একাধিক কর্মসূচি এনছিলেন, যেমন ‘বাংলার গর্ব মমতা' এবং ‘বাংলার যুবশক্তি'। এরপর পশ্চাৎপদ শ্রেণির প্রবীণদের মাসিক ভাতা শুরু, পরে সাধারণ জাতির মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশের লোকদের জন্যও তা চালু করা, সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প নেওয়া এবং কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী কিষাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দেওয়া-সহ প্রভূতি প্রকল্প নেওয়া হয়। মমতা সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প ইতিমধ্যে দারুণ হিট। সেই সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের স্লোগান 'বাংলা নিজের মেয়েকেই চাইছে' এবারের ভোটে দারুণ সফল সেটা ফলাফলই বলে দিচ্ছে।
প্রশান্ত কিশোর গত ডিসেম্বর দাবি করেছিলেন, তাঁর ভবিষ্যতবাণী ব্যর্থ হলে অবসর নেবেন। নিজের ভবিষ্যতবাণী মিলিয়ে দিয়েছেন ভোটগুরু। তবুও ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের সন্ন্যাসের যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের রাজনৈতিক উপদেষ্টা। যা নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে।