আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কেন্দ্র এভাবে রাজ্যকে তলব করতে পারে না। শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের ডাকে যে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও রাজ্যপুলিশের ডিজি দিল্লি যাবেন না, এবার সেই ইঙ্গিত দিল প্রশাসন। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের দিল্লিতে সশীরের উপস্থিত থাকা নিয়ে অব্যাহতি চাইলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব।
ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলা নিয়ে শুক্রবার ট্যুইট করে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ। এরপরেই তাঁর দফতর থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে নাড্ডার কনভয়ে হামলা ও বাংলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে জানাতে তলব করা হয়। বলা হয় আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিল্লিতে অমিত শাহের দফতের হাজিরা দিতে হবে মমতা প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্তাকে। তবে কেন্দ্রের তলব সত্বেও রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিপি দিল্লি যাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তিনি এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র যে দিল্লি যাবেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিয়ে তেমনি ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার পরই রাজ্য়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েই দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল রাজ্য প্রশাসনের দুই শীর্ষকর্তাকে। কিন্তু শুক্রবারই রাজ্যের মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লাকে পাল্টা চিঠি দিয়ে বলেছেন, গোটা বিষয়টি রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তাই আমাদের শারীরিক ভাবে উপস্থিতি থেকে থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
এদিন কার্যত তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরই শোনা গিয়েছে রাজ্য প্রশাসনের কন্ঠে। শুক্রবার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তথা তৃণমূল নেতা কল্যাণ দাবি করেন , আইন- শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ রাজ্যের এখতিয়ারে পরে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী জবাবদিহি শুধু মাত্র রাজ্য কে দেওয়া যেতে পারে। নাড্ডার কনভয়ের নিরাপত্তায় গতকাল অনেক পুলিশ মোতায়েন ছিলেন। কিন্তু তার গাড়ির পেছনে অনৈতিক ভাবেই ছিল প্রায় ৫০ টি গাড়ি। আর বিজেপি নেতা রাকেশ সিং-এর প্ররোচনাতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘাসফুল শিবিরের অভিযোগ তৃণমূলকর্মীদের উদ্দেশ্যে অঙ্গভঙ্গি করছিলেন রাকেশ। নাড্ডার কনভয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে গাড়ি ঢোকানোর ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যসচিব ও পুলিশ সুপারকে কেন্দ্র কীভাবে তলব করতে পারে তাই নিয়েই প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
রাজ্যের মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে লেখা চিঠিতে দাবি করেছেন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছিল বুলেটপ্রুফ গাড়ি এবং পাইলট কার। ছিলেন ৪ এএসপি, ৮ ডিএসপি এবং ১৪ জন ইন্সপেক্টর। এছাড়াও ৭০ জন এসআই ও এএসআই, ৪০ জন র়্যাফ। ২৫৯ জন কনস্টেবল এবং ৩৫০ জনের সাহায্যকারী বাহিনী। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার বাইরেও এই ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার। ফলে নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক ছিল না। যদিও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে লেখা চিঠিতে জানিয়েছিলেন নাড্ডার কনভয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্য়বস্থা ছিল না। এদিন কার্যত সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এবার প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের দিল্লি যাতে যেতে না হয় সেই ব্যাপারেই উদ্যোগী হল মমতা সরকার।