বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির কনভয় হামলা একেবারেই ভাল ভাবে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। যার ফলস্বরূপ ইতিমধ্যে তলব করা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে। নাড্ডার কনভয়ে হামলা ও বাংলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে জানাতে আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিল্লিতে অমিত শাহের দফতের হাজিরা দিতে হবে মমতা প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্তাকে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে যথেষ্ট চাপে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। মুখে স্বীকার না করলেও তৃণমূল নেতাদের হাবে-ভাবে তা প্রকাশ পাচ্ছে। যদিও রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের এধরণের রিপোর্ট তলব করার এক্তিয়ার নেই বলেই দাবি করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে পরিকল্পনা করে হামলা নাটক করেছিল বিজেপি, বৃহস্পতিবার এমনটাই দাবি করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। আর শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর পার্ষদরা বললেন নাড্ডা সঙ্গে রেখেছিলেন ক্রিমিনালদের। তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, রাজ্যে যেকোনও মিটিং-মিছিলে এখন কুখ্যাত অপরাধীদের সঙ্গে রাখছে বিজেপি নেতৃত্ব। আর সেইসব দুষ্কৃতীদের কাছে থাকছে বেআইনি অস্ত্র। কারা বৃহস্পতিবারের হামলা চালিয়েছে তা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। তবে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, পুলিশের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী শিরাকোলের পর তেমন কোনও অবরোধের মুখেই পড়তে হয়নি বিজেপি নেতৃত্বকে। উল্টে কনভয়ে যে পরিমাণ গাড়ি থাকার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি গাড়ির ভিড় লক্ষ্য করা গেছিল। এমনকি নাড্ডার জেড প্লাস নিরাপত্তার ক্যাটাগরিতে সিআরপিএফ জওয়ানরা ছাড়াও রাজ্য পুলিশও হাজির ছিল। তাই ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতির কনভয়ে ইটবৃষ্টির ঘটনা বিডেপির নিজস্ব পরিকল্পনা বলেই ইঙ্গিত করতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
রাজ্যের আইন-শৃ্ঙ্খলা পরিস্থিতি নেয় কেন্দ্র রিপোর্ট তলব করলেও কনভয়ে হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দুটি এফআইআর দায়ের করেছে। তৃতীয় অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছে বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে। এদিকে কনভায়কাণ্ডে মুখ্যসচিব ও ডিজি-কে তলব নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, আইন- শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ রাজ্যের এখতিয়ারে পরে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী জবাবদিহি শুধু মাত্র রাজ্য কে দেওয়া যেতে পারে। নাড্ডার কনভয়ের নিরাপত্তায় গতকাল অনেক পুলিশ মোতায়েন ছিলেন। কিন্তু তার গাড়ির পেছনে অনৈতিক ভাবেই ছিল প্রায় ৫০ টি গাড়ি। আর বিজেপি নেতা রাকেশ সিং-এর প্ররোচনাতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘাসফুল শিবিরের অভিযোগ তৃণমূলকর্মীদের উদ্দেশ্যে অঙ্গভঙ্গি করছিলেন রাকেশ। এই রাকেশের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক ক্রিমিনাল কেস। নাড্ডার কনভয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে গাড়ি ঢোকানোর ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যসচিব ও পুলিশ সুপারকে কেন্দ্র কীভাবে তলব করতে পারে তাই নিয়েই প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যপালের এদিনের সাংবাদিক বৈঠক নিয়েও কটাক্ষ করেছেন কল্যাণ। বিজেপি পার্টির অফিস থেকে একতরফা তথ্য নিয়ে ধনখড় চলছেন বলেই অভিযোগ ঘালফুল শিবিরের।
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে তৃণমূলের ১০ বছরের রিপোর্ট কার্ড পেশ করা শুরু হয়েছে। তৃণমূল সরকার নিজের কাজের খতিয়ান তুলে ধরছে মানুষের সামনে। সেখান থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই বিজেপি পরিকল্পনা করে গণ্ডগোলের ছক কষে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের আরেক সাংসদ সৌগত রায়। বর্ষীয়াণ সাংসদ দাবি করেন, তৃণমূল আমলে রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা কমেছে। গত ১০ বছরে মাত্র ১৫০ জন রাজনৈকি কর্মী খুন হয়েছেন। বিজেপি নিজেদের কর্মীদের ওপর যে অত্যাচারের কথা বলছে তা সম্পূর্ণ বানানো। এই প্রসঙ্গেই দিল্লিতে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনায় বিজেপিকে নিশানা করেন সৌগত।