গতবছর বিহারে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে ডুবেছিল মহাজোট। ৭০ আসনে লড়াই করে মাত্র ১৯টি জিতেছিল সনিয়া-রাহুলের দল। বাংলায় একুশের ভোটে বিস্তর দরাদরির পর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেন আলিমুদ্দিনের নেতারা। একটাও আসন পায়নি বাম-কংগ্রেস। উপনির্বাচনের পর পুরভোটেও একলা লড়েই অনেকখানি ভোট নিজেদের দিকে ফেরাতে পেরেছে বাম শিবির। তাই প্রশ্ন উঠছে, কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগেই কি লাভ রাজ্যের বামপন্থীদের? এই প্রশ্নের যে সারবত্তা রয়েছে, তা বলছে পরিসংখ্যানও।
২০১৬ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিল বামেদের। তখন জোট বলতে নারাজ ছিলেন আলিমুদ্দিনের নেতারা। কয়েকটি আসনে 'বন্ধুত্বপূর্ণ' লড়াইও হয়েছিল। যদিও কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতাদের 'মন্তব্য়' বিপাকে ফেলেছিল সিপিএম-কে। ভোটের ফলও আহামরি হয়নি। সিপিএমকে ছাপিয়ে রাজ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েছিল কংগ্রেস। তখনই সিপিএম সমর্থকরা অভিযোগ করেছিলেন, পার্টিজান কমরেডরা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু উল্টো দিক থেকে ভোট লাল পার্টির ইভিএমে আসেনি। তার পর আর দুই দলকে কোথাও একসঙ্গে দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে কংগ্রেসের নানান 'আবদার' মেনে নিতে পারেনি সিপিএম। আলাদা লড়াই করেছিল দুই দল। ২০২১ সালে আবার বারবার নানা আলাপ-আলোচনা পর জোট চূড়ান্ত করেন দুই দলের নেতারা। ব্রিগেডে 'সংযুক্ত মোর্চা'র ঘোষণা করেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ভোটের ফল- শূন্য।
বিধানসভা ভোটের পর জোটের অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন ইয়েচুরি। উপনির্বাচনে আলাদা লড়াই করে বামফ্রন্ট। খড়দহ ও শান্তিপুরে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। দিনহাটা ফরওয়ার্ড ব্লক ও গোসাবা আরএসপি-কে ছাড়া হয়েছিল। শান্তিপুর ছাড়া বাকি তিন আসনেই বিজেপির মতো জামানত জব্দ হয় বাম প্রার্থীদের। তবে গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে ভোট বাড়ে। একুশের বিধানসভায় বামেরা পেয়েছিল ৪.৭০ শতাংশ ভোট। সেই ভোটই উপনির্বাচনে বেড়ে হয় ৮.৫ শতাংশ। এরপর কলকাতা পুরভোটে আরও চমক। ভোট শতাংশের হিসেবে বিজেপিকে টপকে দ্বিতীয়স্থানে উঠে এসেছে বামফ্রন্ট। তারা পেয়েছে ১২ শতাংশের কাছাকাছি ভোট। অন্যদিকে ৯ শতাংশ বিজেপি। বিধানসভাভিত্তিক আসন ধরলে ১৭টি বিধানসভার মধ্যে সাতটি আসনে দ্বিতীয় বামেরা।
আরও পড়ুন- আগামী দুর্গাপুজোয় ১০দিন আগে থেকে উৎসব, ঘোষণা মমতার
পুরভোটের রায়ের পরই বলাবলি শুরু হয়ে গিয়েছে, কংগ্রেসকে সঙ্গ রেখে কি আদৌ কোনও লাভ হচ্ছে? সিপিএমের একটা অংশ মনে করছে, প্রদেশ কংগ্রেস বর্তমানে অতীতে ছায়ামাত্র। দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই উত্তরবঙ্গেও তাদের সংগঠন আর আস্ত নেই। গত বিধানসভা ভোটেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। উল্টে তৃণমূল সম্পর্কে কংগ্রেসের বিরোধিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে জনমানসে। কেন? বিধানসভা ভোটে শেষলগ্নে একদিনের জন্য় রাজ্যে প্রচারে আসেন রাহুল গান্ধী। কোভিডের কারণে পরের সভাগুলি বাতিল করেন। আবার ভবানীপুরে উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থীও দেয়নি তারা। এতে মানুষের কাছে বিভ্রান্তি বাড়ছে বলে আলিমুদ্দিনে অনুযোগ করেছেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করায় মতাদর্শগত সমঝোতার খোঁচাও খেতে হচ্ছে বাম নেতাদের। এই প্রেক্ষাপটে একটা বক্তব্য় জোরালো হচ্ছে, কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগেই লাভ বামপন্থীদের। অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলছে। সূত্রের খবর, 'একলা চলো'র সিদ্ধান্ত এখনই নিতে চাইছে না আলিমুদ্দিন।
আরও পড়ুন- বুধের বৈঠকে 'দর্শক', অরবিন্দকে নিয়ে শুক্রে মোদীর ডাক ফেরালেন মমতা