
করোনা আবহে ভার্চুয়াল শুনানি চলছে কলকাতা হাইকোর্ট। ভার্চুয়ালি হাজির হয়ে রায় শোনাচ্ছেন বিচারপতিরা। জেলা হেফাজতে থাকা বন্দিদের শুনানির জন্য অনলাইনে হাজিরার ব্যবস্থা করেছিল জেল কর্তৃপক্ষ।অতিমারিকালে সংক্রমণ ঠেকাতে , সাশ্রয় ও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অনলাইন নির্ভর পদ্ধতিতেই হাঁটতে চলেছে রাজ্যের কারা দফতর। তাই রাজ্যের সমস্ত সংশোধনাগারগুলিতে চলছে পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ। নয়া এই পরিকাঠামোর মাধ্যমে একসঙ্গে একাধিক কয়েদিকে ভার্চুয়ালি আদালতে পেশ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট জেল কর্তৃপক্ষ।
কারা বিভাগ সূত্রের খবর, কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে যে পরিকাঠামো রয়েছে তাতে একসঙ্গে পাঁচ জন আসামিকে অনলাইনে আদালতে E-Production বা ই-হাজিরা দেওয়ানো সম্ভব। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সংশোধনাগারগুলিতে নতুন করে যে পরিকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ হলে প্রেসিডেন্সি জেল থেকেই ১৫ জন কয়েদিকে একসঙ্গে আদালতে পেশ করা সম্ভব হবে বলে দাবি কারা কর্তাদের। এজন্য প্রেসিডেন্সি জেলের অন্দরে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশেষ ধরনের কিয়স্ক। এটি শব্দরোধী এবং বাতানুকূল ঘর। থাকবে ইন্টারনেট-যুক্ত ক্যামেরা। সেখান থেকে আসামিকে সরাসরি আদালত থেকে দেখতে পাবেন বিচারকরা।
কারা বিভাগ সূত্রে খবর, শুনানি শুরুর আগে আদালতের তরফে একটি লিঙ্ক পাঠিয়ে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট সংশোধনাগার, পুলিশ পক্ষের আইনজীবী, ধৃতের আইনজীবী এবং সাক্ষীকে। ওই একই লিংকে ক্লিক করে সবপক্ষই যুক্ত হতে পারবে। এজন্য রাজ্যের সব সংশোধনাগারগুলিতে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। ক্যামেরা এবং বিশেষ কিয়স্ক তৈরি করা হচ্ছে সংশোধনাগারে। গোটা কর্মকাণ্ডের দায়িত্বে রয়েছেন প্রসূন মাঝি নামে কারা দপ্তরের এক নোডাল অফিসার। তিনি কলকাতা হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট এবং কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের কারা বিভাগের যোগাযোগ স্থাপনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক।
কারো দফতর সূত্রে খবর, ২০২০ সালে পরীক্ষামূলক ভাবে রাজ্যে চালু হয়েছিল E-Production বা ই-হাজিরা। তা পুরোপুরি গতি পায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ। করোনার এই ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যে এই পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। রাজ্যের কারা বিভাগের এক কর্তা বলেন,"শুধু করোনার সংক্রমণ এড়াতেই নয় বরং বিপুল অর্থ খরচ এবং ঝুঁকি এড়াতেও এই ই-প্রোডাকশনের জুড়ি নেই। এছাড়াও কয়েদিদের মধ্যেও এই পদ্ধতিতে আদালতে পেশ হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বর্তমানে অনেকেই রীতিমতো আমাদের চিঠি লিখে অনুরোধ করছেন, তাঁদের E-Production করা হোক। কেউ সংক্রমণ এড়াতে আবার কেউ লোকলজ্জার কারণে এই পদ্ধতিতে ভরসা রাখছেন।" কারা দফতর সূত্রের খবর, ২০২০ সালে রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে মিলিয়ে প্রায় মোট ৮২ হাজার ৫০০ জনের বেশি ই-প্রোডাকশন হয়েছে।
আরও পড়ুন- পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পর ভোট পিছোতে কমিশনে চিঠি BJP-র
কারা বিভাগ সূত্রের খবর, একজন আসামিকে আদালতে পেশ করার জন্য নূন্যতম যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তাতে দরকার একটি গাড়ি, একজন আধিকারিক, দু'জন রক্ষী এবং আগ্নেয়াস্ত্র। এভাবে প্রতি ১০ জন আসামিকে একদিন আদালতে পেশ করার আনুমানিক খরচ প্রায় ৭ হাজার টাকা। বছরের শেষে এই খরচই বিরাট অঙ্কে গিয়ে দাঁড়ায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আসামিকে আদালতে পেশ করা হলে এই বিরাট খরচ, করোনার সংক্রমণ এবং রাস্তায় বেরোনো নিরাপত্তা বা ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। সে কারণেই ধীরে ধীরে অনলাইন নির্ভর এই ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো সমস্ত সংশোধনাগারেই নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা বিভাগ।
আরও পড়ুন- দিল্লির রাজপথে ব্রাত্য নেতাজিকে নিয়ে ট্যাবলো! মোদীকে এবার চিঠি মমতার
গোটা রাজ্যে অধিকাংশ জেলে কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন,"যে গতিতে আমাদের জেলে নির্মাণকার্য চলছে আমরা আশা করছি ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে প্রেসিডেন্সি জেলের সব আসামিকেই অনলাইনের মাধ্যমে পেশ করা সম্ভব হবে।"
রাজ্য পুলিশের এডিজি (কারা) পীযূষ পান্ডে আজতক বাংলাকে জানান,"গতবছর অসংখ্য ই-প্রোডাকশনের মাধ্যমে আমরা কারা বিভাগের খরচ অনেকটাই নামিয়ে আনতে পেরেছি। আগামী দিনে এই ব্যবস্থার বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন প্রচুর ক্যামেরা এবং হাই স্পিড ইন্টারনেট। আমরা রাজ্যের সব জেলগুলিতে এই ব্যবস্থা আরও সরল করার চেষ্টা করছি।"
আরও পড়ুন- চিনা মাঞ্জায় রক্তাক্ত বাইক আরোহী, এবার সম্প্রীতি উড়ালপুলে