
Irregular Period Problem: ব্যস্ত জীবনযাত্রা ও খারাপ খাদ্যাভ্যাস। মহিলাদের অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পিছনে প্রধান কারণই হল আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, খাবারের গুণগত মানের অবনতি এবং বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কেমিক্যালের অতিরিক্ত প্রভাব।
জানুন: অল্প বয়সেই পিরিয়ড শুরু হচ্ছে মেয়ের, কীভাবে সামলাবেন? বাবা-মায়েদের জন্য টিপস
বর্তমানে মহিলাদের জীবনযাত্রা আগের তুলনায় অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে তাঁদের শরীরে দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস ও অ্যাংসাইটি কাজ করে। এটি হরমোনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। শুধু মহিলাই নয়, স্ট্রেসের ফলে পুরুষদের হরমোনেও প্রভাব পড়ছে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে কর্টিসল (cortisol) হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা পিরিয়ডের সময়সূচীকে প্রভাবিত করতে পারে। স্ট্রেসের কারণে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত করে, যা অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ব্যায়াম বা অত্যন্ত কম শারীরিক পরিশ্রম দুটোই পিরিয়ডের নিয়মিত চক্র ব্যাহত করতে পারে। শারীরিক কর্মকাণ্ডের অভাবের ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়, যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে শরীরের হরমোনের উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।
ঘুমের অভাবও একটি প্রধান কারণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে হরমোনের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়, ফলে পিরিয়ড চক্রে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। অন্তত ৮ ঘণ্টা একটানা গভীর ঘুম টার্গেট করুন।
আজকাল অধিকাংশ মানুষ প্যাকেটজাত ও ফাস্ট ফুডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এই খাবারগুলিতে উচ্চমাত্রায় চিনি, চর্বি ও প্রিজারভেটিভ থাকে যা শরীরে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স তৈরি করতে পারে। ইনসুলিন রেজিস্টেন্স ওজন বৃদ্ধি করে এবং পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)-এর মতো সমস্যার জন্ম দেয়, যা পিরিয়ড চক্রকে প্রভাবিত করে।
প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। পুষ্টিহীন খাদ্য গ্রহণ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।
বর্তমানে অধিকাংশ খাবার ও প্রসাধনীতে কেমিক্যাল ব্যবহৃত হচ্ছে, যা শরীরে এন্ডোক্রাইন ডিস্ট্রাপ্টরস (Endocrine disruptors) তৈরি করে। এন্ডোক্রাইন ডিস্ট্রাপ্টরস হরমোনের কাজ ব্যাহত করে এবং পিরিয়ডের চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়।
প্লাস্টিক থেকে নির্গত কেমিক্যাল যেমন বিসফেনল এ (BPA) হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে, যা অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
প্লাস্টিক বোতল, প্লেট, কন্টেনার এড়িয়ে চলুন। স্টিলের বা কাঁচের বোতল, পাত্র ব্যবহার করুন।
আজকাল অনেক শিশুই উচ্চ ফ্যাটযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ করে, যা শরীরে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি করে। ওজন বৃদ্ধির ফলে শরীরে এস্ট্রোজেন (Estrogen) হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হতে পারে।
অনেক সময় জেনেটিক কারণে অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হতে পারে। মা বা পরিবারের অন্য মহিলাদের মধ্যে যদি অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরুর ইতিহাস থাকে, তবে এটি উত্তরাধিকারসূত্রে হতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে প্যানিক করার কিছু নেই।
কিছু ওষুধ, বিশেষ করে হরমোন সংশ্লিষ্ট ওষুধ, অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হওয়ার কারণ হতে পারে।
এই বিষয়ে বিশদে জানতে অবশ্যই পড়ুন: অল্প বয়সেই পিরিয়ড শুরু হচ্ছে মেয়ের, কীভাবে সামলাবেন? বাবা-মায়েদের জন্য টিপস
প্রথমেই সচেতনভাবে জীবনযাপন এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া উচিত। প্রসেসড খাবার ও কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্টের ব্যবহার কমিয়ে স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। রোজ ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন। একটানা সমস্যা হলে অবশ্যই আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও টোটকা বা ওষুধ খাবেন না।