ঘুম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং হিমালয়ান পার্বত্য অঞ্চলের একটি ছোট্ট পার্বত্য অঞ্চল। এটি দার্জিলিং পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আওতায় আসে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ঘুম রেল স্টেশন ভারতের সর্বোচ্চ রেলস্টেশন। এটি ২,২৫৮ মিটার (৭,৪০৭ ফুট) এর উচ্চতায় অবস্থিত। আপনি যদি দার্জিলিংয়ের যানজট, ভিড় থেকে দূরে কিন্তু কাছেই কোনও শান্ত জায়গা খোঁজেন তাহলে, ঘুম আপনার জন্য সেরা বিকল্প।
ইচ্ছে হলেই এখান থেকে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, শিলিগুড়ি অনায়াসেই চলে যাওয়া যায়। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য আলাদা মাত্রায় পৌঁছে দেবে। স্টেশনটিকে কেন্দ্র করেই এখানকার জনজীবন আবর্তিত হয়। তবে আলাদা একটা শান্তি মেলে এখানে। ঘুম রেলওয়ে স্টেশন ভারতের সর্বোচ্চ রেলস্টেশন। এ কারণে দারুণ জনপ্রিয়। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে একটি হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত রেল। এটি সর্বপ্রথম ১৮৭৯ সালে রেলপথ স্থাপন শুরু হয় এবং ১৮৮১ সালের মধ্যে ঘুমে প্রথম পৌঁছয়।
বাতাসিয়া লুপ
এখানে অনেককিছুই দেখা যায়, এখান থেকে হেঁটেই। তার মধ্যে অন্যতম হল বাতাসিয়া লুপ। এটি অন্যতম সেরা ডেস্টিনেশন দার্জিলিংগামী পর্যটকদের কাছে। এখানে টয়ট্রেন এত আস্তে চলে যে সকলে নেমে ছবি তুলে আবার ট্রেনে উঠে যেতে পারে। ১৯১৯ সালে লুপটি চালু হয়েছিল। এখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা সৈন্যদের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে, যাঁরা ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে শহিদ হন।
ঘুম মনেস্ট্রি
ঘুম মনেস্ট্রি নামে পরিচিত ইগা চিলিং গুম্ফা, ঘুম স্টেশন থেকে ৭০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এখানে খুব বিশাল এবং সুন্দর একটি বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। লামা গিয়াতসে, ১৮৭৫ সালে এই মঠটি বানান। ঘুম শহরে মোট ৪টি মঠের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। আরও তিনটি গুম্ফা রয়েছে।সেগুলোও সুন্দর। ঘুরে দেখতেই পারেন।
টাইগার হিল
ঘুম থেকে ১১০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত টাইগার হিল। দার্জিলিং ছাড়া টাইগার হিল থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া যায়, আকাশ পরিষ্কার থাকলে কোনও কোনও দিন এভারেস্টও দেখা যায় এখান থেকে। পরিষ্কার নীল আকাশ খুব কম দেখা যায় এখানে, বলা হয় এটি মেঘের দেশ। সাধারণত কুয়াশা এর আশেপাশের অঞ্চলগুলি দখল করে নেয় এবং এখানে আসা হাজার হাজার লোক হতাশ হয়ে পড়ে।
সেঞ্চল লেক
সেঞ্চল লেকটি একটি তৈরি করা জলাশয় যা যেতে হলে ঘুম থেকে ৩ কিলোমিটার পারি দিতে হবে। এখানে পৌঁছতে গেলে ঘুম থেকে জোড়বাংলো যাওয়ার রাস্তা থেকে ওল্ড মিলিটারি রোডে যেতে হবে। লেকে ঢুকতে টিকিট লাগে। বর্ষাকালে অভয়ারণ্য বন্ধ থাকে। সেপ্টেম্বর ১৫ তারিখের পর খোলে। রম্ভি ফরেস্ট রেস্ট হাউসে থাকা যায়। ভাড়াও কম।
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে মিউজিয়াম
হিমালয়ান রেলওয়ের প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস সংরক্ষিত রয়েছে ঘুম স্টেশনের পাশেই দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে মিউজিয়ামে। এখানে টয়ট্রেন চালুর সময়কার অদ্ভুত সব কলকব্জা, ব্যবহৃত জিনিস, পুরনো টিকিট সহ নানা সামগ্রী রয়েছে, যা দেখে আপনার গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠবে।
কোথায় থাকবেন?
দার্জিলিংয়ে প্রচুর হোমস্টে আছে। স্থানীয় স্তরেও প্রচুর থাকার জায়গা আছে। ঘুম মনেস্ট্রিতেও থাকা যায়। কিন্তু তার জন্য আপনাকে ওখানে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে থাকার জায়গা আছে কিনা। ঘুমে গিয়ে খোঁজ করলেই অনেকগুলি থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন। আর সব ভর্তি থাকলে দার্জিলিং তো কাছেই।
খরচ কেমন?
দার্জিলিং ঘোরার মতোই খরচ। তবে ঘুমে থাকলে থাকার খরচ কিছুটা কম হবে। বাকি যাতায়াত খাওয়ার খরচ একই রকম।