কখনও কখনও কিছু লক্ষণ দেখেও আমরা সেগুলি উপেক্ষা করি। আমাদের জন্য তা মারাত্মক হতে পারে। ইংল্যান্ডে বসবাসকারী এক মহিলার গল্প যা অন্যান্য মহিলাদের জন্য শিক্ষণীয়। একটি আন্তর্জাতিক দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯ বছর বয়সী ক্যাথরিন হোকস পিরিয়ডের সমস্যায় ভুগছিলেন।
ক্যাথরিন তাঁর বাব -মায়ের কাছ থেকে দূরে অন্য একটি শহরে বসবাস করে পড়াশোনা করতেন। ক্যাথরিন একদিন হঠাৎই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এরপর অজ্ঞানও হয়ে পড়েন। প্রচুর চিকিৎসকদের সঙ্গে তাঁর সমস্যার কথা জানান। শেষে ক্যাথরিনের সিদ্ধান্তই তাঁর জীবন বাঁচিয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েচিলেন, তিনি ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছেন। আর যদি এক সপ্তাহ দেরি হতো, তাহলে তাঁর মৃত্যু হতো।
ক্যাথরিনের পিরিয়ড ছিল অ্যাকিউট প্রোমাইলোসাইটিক লিউকেমিয়া (এপিএল)-র লক্ষণ, যা দ্রুত ব্লাড ক্যান্সারে পরিণত হয়। প্রথমে, ক্যাথরিন জেনারেল ডাক্তারের কাছে নিয়মিত চেক-আপের জন্য রক্ত পরীক্ষা করেছিলেন। সেই রিপোর্ট হাতে আসলে দেখেন, তিনি রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। দেরি না করে অবিলম্বে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
আতঙ্কিত হয়ে তিনি হাসপাতালে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে লিউকেমিয়া হয়েছে বলে জানা। অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করার কথা জানান।
লোহিত রক্তকণিকা সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করতে কাজ করে এবং এর অভাবে শ্বাসকষ্ট এবং অলসতা বেড়ে যায়। এগুলি ব্লাড প্লেটলেটও কমিয়ে দেয়। চিকিৎসকদের মতে, ক্লান্তি এবং ত্বকের সমস্যার পাশাপাশি ভারী পিরিয়ডও এপিএলের প্রধান লক্ষণ। নাক এবং মাড়ি থেকে রক্তপাত এবং পিরিয়ডে অস্বাভাবিকভাবে হঠাৎ পরিবর্তন এই রোগের প্রাথমিক কারণ হতে পারে।
চিকিসকদের মত, মহিলাদের কখনই বেশি পিরিয়ড হলে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। ক্যাথরিনের মতে, প্রাথমিকভাবে তিনি কোনওদিন পিরিয়ডের বেশি হলে তার দিকে নজর দেননি। একদিন হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করেন, তাঁর হাত ও পায়ে রক্ত জমাট বাঁধছে এবং গায়ের রঙও পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। পিরিয়ডের সময় তিনি অজ্ঞান হয়ে যেতেন। প্রাথমিকভাবে, তিনি অনুভব করেছিলেন যে তার শরীরে রক্তের অভাব হতে পারে এবং তখনই তিনি চিকিৎসকের সাহায্য নেন।
ক্যাথরিনের শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা ১৮৬, যা একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ১০ হওয়া উচিত। শ্বেত রক্তকণিকার এত বেশি দেখার পর ডাক্তাররা লিউকেমিয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করেন এবং ক্যাথরিনকে অবিলম্বে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকরা প্রথমে ক্যাথরিনের অস্থি মজ্জার বায়োপসি করেন। ক্যাথরিনকে সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
চিকিৎসকরা তখনই ক্যাথরিনের কেমোথেরাপি শুরু করেন। ক্যাথরিনের বাবা -মাও হাসপাতালে পৌঁছন। চিকিৎসার সময় ক্যাথরিন ৮ দিন কোমায় ছিলেন। জ্ঞান ফিরলে, তিনি দেখতে পান লম্বা ঘন চুল দ্রুত পড়ে যাচ্ছে। সেইসময় তিনি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু ক্যাথরিন সাহস হারাননি। নিয়মিত কেমোথেরাপি চালিয়ে যান।