"এখানে মেঘ গাভির মতো চড়ে।" আক্ষরিক অর্থেই। কিংবা মেঘ পিওনের ব্য়াগের ভিতর মন খারাপের দিস্তা। চারিদিকে মেঘের মেলা। তার মাঝে গরম কফি কিংবা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আপনি। সুযোগ থাকলে আর ছাড়বেন কেন ?
“আজ ম্যায় উপর, আশমা নিচে”। গানটি শোনা নেই এমন লোক ভূ ভারতে মিলবে না। এই গানটির কল্পনাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হলে আসতেই হবে দার্জিলিংয়ের পোস্টকার্ডের মতো গ্রাম দাওয়াইপানিতে।
দার্জিলিং থেকে ২২ কিলোমিটার, সময় লাগে এক ঘণ্টা। শিলিগুড়ি থেকে ৭৬ কিলোমিটার। সময় আড়াই ঘণ্টা। আর সবচেয়ে কাছের ঘুম স্টেশন থেকে মাত্র কুড়ি মিনিটের দূরত্ব।
দার্জিলিংয়ের শহুরে ঘিঞ্জি এখন আর যাঁদের ভাল লাগছে না, তাঁরা দু’দণ্ড শান্তি খুঁজতে দাওয়াইপানিই হতে পারে আদর্শ ঠিকানা। রাজ্য পর্যটন দপ্তরের সহযোগিতায় নয়া দিশা দেখছে দাওয়াইপানি। পর্যটন পরামর্শদাতা রাজ বসু জানান, যাঁরা হইচই এড়াতে এক-দু’দিনের গা এলানো অবসর চান, তাঁদের কাছে দাওয়াইপানি এক নম্বর পছন্দ হতেই পারে।
এখানে অবসর যাপনের জন্য কাঠখড় পোড়াতে হবে অনেকটাই। কারণ থাকার ব্যবস্থা খুবই সীমিত। রয়েছে মাত্র চারটি হোম–স্টে। একসঙ্গে সব কটি হোম–স্টেতে পর্যটক ভর্তি থাকলে ২০ জনের বেশি হবে না। ফলে সুযোগ মিললে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। মনের খোরাক যোগাতে এর চেয়ে আদর্শ আর কি হতে পারে ?
পাহাড়ের উপর চেয়ারে বসে দিনের বেলায় হিমেল হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে যাবে মে-জুনের গরমেও। শীতপোশাক ছাড়া এখানে এলে বিপাকে পড়তে পারেন। তা বছরের যখনই আসুন না কেন। কখনও রোদের দেখা মিললেও সমতলের উষ্ণতা তাতে একটুকু নেই।
সন্ধে নামলেই চোখের সামনে দেখা যাবে পুরো দার্জিলিং শহরটাকে। দিওয়ালির আলোর মতো সাজানো। সেই আলো গায়ে মেখে নরম-গরম পানীয় যেন খোদ স্বর্গ। শীতে এলে তুষারপাতও পেতে পারেন কখনও সখনও। নইলে নিদেন পক্ষে ফ্রস্ট।
অবশ্য প্রকৃতির রূপের পাশাপাশি ইতিহাসও পাহাড়ের খাঁজে লুকিয়ে রয়েছে। দাওয়াইপানির কিছুটা নিচে রয়েছে ব্রিটিশদের তৈরি করা ছোট সেতু। পুরনো কিন্তু এখনও দিব্যি ব্যবহার হয়।
দিনের বেলা উদাস মনে হাঁটতে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন তিরতির করে বয়ে চলা ‘দাওয়াইপানি’ নদীর ধার দিয়ে। এমনিতে ঘটি ডোবে না। কিন্তু এই জল নাকি খনিজের খনি। সেই কারণে স্থানীয় ১৩৫ ঘরের বাসিন্দারা এই জলই পান থেকে গৃহকর্ম, সবই করেন। কারও কোনও রোগ নেই।
এমনই বলছেন স্থানীয় একটি হোম-স্টের মালিক বীরেন রাই। স্থানীয়দের তৈরি দু’টি ছোট্ট রেস্তোরাঁয় মিলবে পিৎজাও। তবে টপিং পাহাড়ের নিজস্ব। তাই তাতে কামড় না দিয়ে এখানকার সফর শেষ হবে না।