রাজনীতিবিদ মানেই হবেন খুব সিরিয়াস। কাটখোট্টা জীবনে প্রেমের কোনও জায়গা নেই। এমনটাই আমরা অনেকে মনে করে থাকি। তবে এমন অনেক রাজনীতিবিদ রয়েছেন যাদের প্রেম জীবন কিন্তু বেশ চর্চিত। বিদেশ তো বটেই আমাদের দেশ এবং রাজ্যের সেইসব রাজনৈতিক নেতাদের প্রেম কাহিনি চলুন জেনে নেওয়া যাক ভ্যালেন্টাইনস ডে তে।
সচিন ও সারা পাইলট- সচিন পাইলট ও সারা আবদুল্লাহরা প্রেম কাহিনী কোনও সিনেমার গল্পের থেকে কম কিছু নয়। একদিকে কাশ্মীরে প্রতাপশালী রাজনৈতিক পরিবার আবদুল্লাহরা অন্যদিকে, কংগ্রেসের দুঁদে নেতা রাজেশ পাইলট। এই দুই পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাব কোনও অংশেই কম নয়। দুই পরিবারই সচিন পাইলট ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহর কন্যা সারার প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক অত সহজে মেনে নেয়নি। লন্ডনে সচিনের পড়াশোনার সময়ই সারার সঙ্গে তাঁর পরিচিতি। এরপর দিল্লি ফিরে আসতে হয় সচিনকে। তবে সম্পর্ক অটুট থাকে। এরপরই বাড়িতে জানান দু’জনেই। বেঁকে বসে আবদুল্লাহ পরিবার। সায় দেননি রাজেশ পাইলটও। দীর্ঘ টালবাহানার পর,সমস্ত বাধা টপকে তাঁরা বিয়ে করেন ২০০৪ সালে।
প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট- ভারতীয় রাজনীতিতে হাইপ্রফাইল দম্পতির কথা বলতে গেলে নাম নিতেই হবে প্রকাশ কারাট ও বৃন্দা কারাটের। বৃন্দা কারাট প্রথম মিহলা যিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী) পলিটব্যুরো সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হন। আর প্রকাশ কারাট ছিলেন ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি থেকেই বৃন্দা ও প্রকাশের আলাপ। জরুরি অবস্থার সময় বিয়ে করেছিলেন দু'জনে। তবে নিজেদের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে কখনই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি এই দম্পতি।
দিগ্বিজয় সিং ও অমৃতা রাই- টেলিভিশন অ্যাঙ্কর অমৃতা রাইকে বিয়ে করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং। ২০১৫ সালে যখন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয়ের বয়স ৬৮ বছর তখনি ৪৪ বছরের অমৃতার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পরেন দু'জনে। জানা যায়, সাংবাদিকতার সূত্রেই দিগ্বিজয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল অমৃতার। আলাপ গড়ায় প্রেমে। তত দিনে দু’জনের জীবনেই উথালপাথাল এসেছিল । ২০১৩-য় ক্যানসারে মারা গিয়েছিলেন দিগ্বিজয়ের স্ত্রী আশা সিংহ। অমৃতাও স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ চেয়ে দ্বারস্থ হয়েছিলেন আদালতের। এই অবস্থায় অমৃতার কম্পিউটার থেকে দু’জনের ঘনিষ্ঠতার ছবি চুরি করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছিল হ্যাকাররা। সেই সময় চার কন্যা ও এক পুত্রসন্তানের বাবা দিগ্বিজয়কে নিয়ে মুখরোচক চর্চা শুরু হয়িছিল গোটা দেশে।
অখিলেশ ও ডিম্পল যাদব- উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন ডিম্পলকে দেখে। তারপর দুজনেই দুপক্ষের বাবা-মাকে বুঝিয়ে জড়িয়ে গেলেন সাত পাকের বন্ধনে। ১৯৯৯ সালের ২৪ নভেম্বর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন দু'জনে। জানা যায় জাতপাতের বেড়াজাল ভেঙেই বিয়ে করেছিলেন অখিলেশ। পরে স্বামীর পথ অনুসরণ করে রাজনীতিতে আসেন ডিম্পল। সমাজবাদী পার্টির টিকিটে সাংসদও হন।
চাঁদ মুহাম্মদ ও ফিজা মুহাম্মদ- হরিয়ানার প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী চাঁদ মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রী ফিজা মুহাম্মদের প্রেম, বিয়ে নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছিল। অনেক ওঠা-পড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিস এই সম্পর্ক। জানা যায় গোপনে বিয়ে করেছিলেন দু'জনে। সেজন্য ধর্মও পরিবর্তন করেন তারা। চন্দ্র মোহন হয়েছিলেন চাঁদ মুহাম্মদ। আর অনুরাধা হয়েছিলেন ফিজা। পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে আইনজীবী ছিলেন অনুরাধা। সেই সময়ই প্রেম শুরু হয় দু'জনের। ২০০৮ সালে লুকিয়ে বিয়ে করেন তারা। তবে ২০১২ সালে ফিজার অস্বাভাবিক মৃত্যু নতুন মোড় নিয়ে এসেছিল। বলিউড ব্লক বাস্টারের থেকে এই গল্প কোনও অংশে কম নয়।
রাজীব গান্ধী - সনিয়া গান্ধী - ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এবং কংগ্রেসের বর্তমান কার্যনির্বাহী সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর প্রেম কাহিনিও কম আলোচিত নয়। ছয়ের দশকের মাঝামাঝি কেমব্রিজে থাকাকালীন এক রেস্তোরাঁয় রাজীব প্রথম দেখেছিলেন সোনিয়াকে৷ হাতখরচের অর্থ জোগাড় করতে ওই গ্রিক রেস্তোরাঁ আলবিনা মাইনো-তেই পার্ট টাইম কাজ করতেন তখন সোনিয়া মাইনো৷ রাজীবের ভাল লাগে তাই তিনি ওই রেস্তোরাঁর মালিক এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বলেন সোনিয়ার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে৷ সেই মতো ব্যবস্থা হয়। তারপর আস্তে আস্তে পরিচয় থেকে প্রেম৷ ওই সময় তাঁরা মাঝে মাঝে একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যেতেন৷ লন্ডনেই মা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সোনিয়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন রাজীব৷ ১৯৬৮ সালে ভারতেই তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে নতুন সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছিল সোনিয়ার৷ ভারতীয় ঐতিহ্য মেনে শাড়ি পরা থেকে শুরু করে হিন্দি ভাষা শেখা, সব কিছুই ধীরে ধীরে রপ্ত করেন তিনি৷ কিন্তু তাদের জীবনে গল্পের শেষ মোড়টা অবশ্যই মর্মান্তিক৷ রাজীবের মৃত্যুর পর কংগ্রেসের হাল ধরতে রাজনীতিতে আসেন সোনিয়া। আজও সেই দায়িত্ব সামলে চলেছেন তিনি
সুদীপ ও নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়- স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে রাজনীতি করছেন এমন ফদাহরণ এই বাংলাতেও রয়েছে। এই প্রসঙ্গে বলতেই হবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। ১৯৯১ সালের ২৫ জুলাই নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মত স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে যুক্ত। তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার একজন বিধায়ক। রাজনীতিতে আসার আগে অভিনয় করতেন নয়না।
সৌমিত্র খাঁ ও সুজাতা মণ্ডল- বঙ্গ রাজনীতিতে এখন অন্যতম আলোচিত নাম সুজাতা মণ্ডল খাঁ। গত ডিসেম্বর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁর স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল। সুজাতা ভিন্ন দলে নাম লেখাতেই তাঁকে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছেন সৌমিত্র। জানা যায় প্রেম ও বিয়ে মিলিয়ে প্রায় ১০ বছরের সম্পর্ক দু'জনের। কিন্তু রাজনীতির জাতাকলে আজ একে অপরের থেকে দূরে সরে গেছেন তারা।
বিল ক্নিটনটন ও হিলার ক্লিনটন- আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পাওয়ার কাপেলের কথা বলতে গেলে নাম করতেই হবে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্নিটনটন ও হিলারি ক্লিনটনের। বহু ঝড়-ঝাপটা পেড়িয়ে এই সম্পর্ক এখনও টিকে রয়েছে। বিল ও হিলারির দাম্পত্য জীবন চার দশকেরও বেশি। হিলারির সঙ্গে দেখা হওয়ার দিনটির কথা স্মরণ করে বিল ক্লিনটন বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের বসন্তে, এক মেয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। সেই মেয়েটি হিলারি।’আবেগ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে বিল আরও বলেছিলেন, ‘আমি আমার সেরা বন্ধুকে বিয়ে করেছি’। মনিকা লিউনেস্কির সঙ্গে বিল যখন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তখনও স্ত্রী হিসেবে হিলারি তাঁকে ছেড়ে যাননি। বরং পাশে থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়তা করেন।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া- রাজনীতিতে পাওয়ার কাপেলের কথা বলতে গেলে নাম করতেই হবে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়ার কথা। বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন জিয়াউর রহমান। ১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুর শহরের কিশোরী খালেদা খানমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। স্বামীর মৃত্যুর পরে বিএনপির হাল ধরেন খালেদা। তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী।