অনেক ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা আর সম্ভব হয় না। বরং বিচ্ছেদই মানসিক শান্তি দিতে পারে। ভারতে স্বামী-স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় পরস্পরকে ডিভোর্স দিতে চান সেক্ষেত্রে আইনি পথ খুবই সহজ। কিন্তু আদালতে একতরফা ডিভোর্স কঠিন হয়ে ওঠে। তবে আইনি জটিলতা থাকলেও ৮ উপায়ে সহজেই একতরফা বিবাহবিচ্ছেদ করা যায়। এটা স্বামী-স্ত্রী দু'পক্ষের জন্য প্রযোজ্য।
১। ব্যাভিচার- যদি স্বামী/স্ত্রী পরস্পরকে প্রতারণা করেন। কারও সঙ্গে তৃতীয় ব্যক্তির সম্পর্ক থাকলে আদালত ডিভোর্স মামলা করতে পারেন। তবে তা নেহাত সন্দেহ হলে চলবে না। বা স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকলে প্রতারণা হিসেবে বিবেচিত হবে না। হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক চ্যাটও ব্যাভিচারের প্রমাণ নয়। ফলে ব্য়াভিচারের যুক্তিতে ডিভোর্স পেতে গেলে আদালতে পোক্ত প্রমাণ পেশ করতে হবে আবেদনকারীকে।
২। হিংসা- গার্হস্থ্য হিংসা শারীরিক এবং মানসিক হতে পারে। যদি স্বামী/স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন শারীরিক বা মানসিক হিংসার শিকার হন তবে আদালতে ডিভোর্সের মামলা করতে পারবেন। পোক্ত প্রমাণ দিলে বিচ্ছেদও সহজে সারা যাবে।
৩। একসঙ্গে না থাকা- বিয়ের পরে ২ বছরের পরেও একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী না থাকলে একতরফা বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করতে পারেন। যেমন- বিয়ের কয়েকদিন পর স্ত্রী চলে গেলেন বাপের বাড়ি। আর ফিরে আসেননি। সেই সময়কাল ২ বছর অতিবাহিত হলে স্ত্রীকে একতরফাভাবে ডিভোর্স দিতে পারবেন স্বামী।
৪। ধর্ম পরিবর্তন- স্বামী ও স্ত্রী ভিন ধর্মের। বিয়ের সময় তাঁরা নিজেদের ধর্ম বদল করেননি। এমন পরিস্থিতিতে বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রীর যে কোনও একজন অন্য সঙ্গীকে ধর্ম পরিবর্তনের চাপ দিতে পারেন না। এক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। চাইতে পারেন একতরফা ডিভোর্সও।
৫। সন্ন্যাস- স্বামী/স্ত্রীর মধ্যে কেউ যদি বিবাহিত জীবন ছেড়ে সন্ন্যাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সেক্ষেত্রে একতরফা ডিভোর্সের আবেদন গ্রাহ্য করবে আদালত। এটা মনে করা হয় যে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই দায়িত্ব থাকে একে অপরের পারিবারিক, সামাজিক এবং শারীরিক ইচ্ছাপূরণ। যদি কোনও ব্যক্তি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান তাহলে অন্যপক্ষের ডিভোর্স চাওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
৬। নিখোঁজ- ৭ বছর ধরে স্বামী বা স্ত্রী কেউ নিখোঁজ থাকেন এবং তিনি জীবিত না মৃত তা জ্ঞাত নেই। সেক্ষেত্রে একতরফা ডিভোর্স পেতে কোনও অসুবিধা হয় না। দেশের আইন অনুযায়ী, ৭ বছর কোনও নিখোঁজ ব্যক্তি ফিরে না এলে তাঁকে মৃত ধরে নেওয়া হয়।
৭। গুরুতর শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা- সঙ্গীর যদি এইডস, কুষ্ঠরোগের মতো গুরুতর শারীরিক রোগ থাকে, তাহলে একতরফা বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আদালতে মামলা করা যেতে পারে। এ ছাড়া সিজোফ্রেনিয়া বা অন্য কোনও গুরুতর মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রেও একতরফা বিবাহবিচ্ছেদের চাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন আদালত গ্রহণ করে। যদি আদালত মনে করে যে সঙ্গীর গুরুতর শারীরিক বা মানসিক রোগ অন্যজনের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বা প্রাণহানি হতে পারে সেক্ষেত্রে একতরফা বিচ্ছেদে কোনও অসুবিধাই থাকে না।
৮। পুরুষত্বহীনতা- স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে স্থাপনে পারদর্শী নন স্বামী। এক্ষেত্রে একতরফা ডিভোর্সের আবেদন করতে পারেন স্ত্রী।
আরও পড়ুন- ভালবাসা থাকবে আজীবন, পার্টনারকে বশে রাখতে মেনে চলুন ৫ পরামর্শ