Beautiful Destination From Siliguri: পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স ঘুরতে যেতে শিলিগুড়িকে ছুঁয়েই আপনাকে যেতে হবে। সে সড়ক, রেল কিংবা বিমান যাতে খুশি আসুন না কেন? কিন্তু শুধু শিলিগুড়িতে থেকেই দারুণ সব জায়গা ঘোরা যায়, তা কি জানেন? বিশেষ করে শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকায় পাহাড় দেখতে দেখতেই কাটিয়ে দিতে পারেন দারুণ কিছু জায়গা।
আসুন আপনাদের জন্য আজ ৭টি এমন জায়গার খোঁজ দিচ্ছি যা শিলিগুড়ি থেকে বেরিয়ে সারাদিন ঘুরে বিকেলে ফিরে আসা যায়। কিছু জায়গায় গিয়ে থাকতেও পারেন। আবার আধঘন্টার মধ্যে শিলিগুড়ি ফিরে এসে রাতে শিলিগুড়িতেও থাকা যায়। যাতায়াতের খরচ জন প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পড়বে না। আসুন জেনে নিই। সবচেয়ে বড় কথা এসব জায়গায় বর্ষার ধস বা অন্য কোনও ঝুঁকি নেই।
এই জায়গাগুলিতে শিলিগুড়ি থেকে গিয়ে সারাদিন ঘুরে আসতে জনপ্রতি ১০০ টাকাও লাগে না। খাওয়া-দাওয়ার জন্য যা খরচ করবেন, তা আপনার নিজের উপর। কিন্তু বাড়তি কোনও খরচ নেই। অথচ পুরো আনন্দ রয়েছে। ঝুঁকিও নেই অথচ ফুল মস্তি।
গজলডোবা ভোরের আলো(Bhorer Alo)-
গজলডোবা প্রকল্প বেঙ্গল সাফারি পার্কের মতোই শিলিগুড়িকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। হাতের কাছে পর্যটনের এত বড় সম্ভার পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। দিনভর কাটানোর দারুণ জায়গা। এখানে শিলিগুড়ির বাসিন্দারা উইকএন্ড কাটাতে দারুণ পছন্দ করেন। বেশিরভাগই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরেন। সেটা যেমন সম্ভব, তেমনই পর্যটন দফতরের লাক্সারি ও সুদৃশ্য বাংলোতে একদিন কাটিয়ে আসাটাও মন্দ অভিজ্ঞতা নয়। তবে না থেকেও একদিকে তিস্তা নদী, অন্যদিকে পাখিরালয়ের আনন্দ নিতে পারেন। খোলা হাওয়া সঙ্গে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল। রাতে হাতি আসে অহরহ। পথে যেতে আসতে দেখা হয়েও যেতে পারে। এখানে সিডনির হারবার ব্রিজের আদলে একটি সেতু তৈরি হয়েছে। সেটি এখন সেলফি জোন। শিকারা বোটিংয়েরও সুযোগ রয়েছে। রয়েছে প্রচুর ছোট ছোট হোটেল-রেস্তোরাঁ। সব মিলিয়ে জমজমাট পর্যটন।
নর্থ বেঙ্গল সায়েন্স সেন্টার (North Bengal Science Center)- হাতে আধবেলা সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন নর্থ বেঙ্গল সায়েন্স সেন্টার থেকে। মাটিগাড়া এলাকার এই বিজ্ঞানকেন্দ্রটি কলকাতা সায়েন্স সিটির মতো অত বড় না হলেও বহু কিছু রয়েছে, যা কলকাতার সায়েন্স সিটিতেও সবটা নেই। বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দেরও নানারকম মজার বিকল্প রয়েছে। যা এনজয় করতে পারেন। শিলিগুড়ি মূল শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে। ২০ টাকার বেশি অটো বা টোটোতে ভাড়া লাগে না।
টয়ট্রেন সফর (Toy Train Ride)-শিলিগুড়ি থাকবেন, আর টয় ট্রেনে চড়বেন না, তা কী কখনও হয়? শিলিগুড়ি জংশন থেকে টিকিট কেটে উঠে পড়ুুন টয়ট্রেনে আর পাহাড়ি দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যান রংটংয়ে। এখানে জঙ্গল সাফারিও করতে পারেন। সেখানে ২০ মিনিটের একটা হল্ট নিয়ে আবার ফিরে আসতে পারেন শিলিগুড়ি। ৩২ কিলোমিটারের এই যাত্রায় সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা। তা ছাড়া টয়ট্রেনে না চড়তে চাইলেও হাতের কাছে সুকনা টয়ট্রেন স্টেশন মাত্র শিলিগুড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে। সুকনা স্টেশনে গেলে বুঝবেন হেরিটেজ স্টেশন কাকে বলে। সেখানে দাঁড়িয়ে টয়ট্রনের আসা যাওয়া উপভোগ করুন। স্থানীয় মোমো-থুকপা-তাইপু খান।
ড্রিমল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (Dreamland Amusement Park)-শিলিগুড়ি থেকে ফুলবাড়ি মাত্র ৭ কিলোমিটার। পরিবারের সকলের সঙ্গে ভাল সময় কাটানোর জন্য ড্রিমল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে একবার ঘুরে আসতে পারেন। নানা ধরনের রাইড রয়েছে। এটি কলকাতার নিক্কো পার্কের মতো। এখানে যা শুধু বাচ্চাদেরই নয়, বড়দেরও আনন্দ দেবে। এছাড়া আপনি এখানে বোটিংও করতে পারেন। দিনভর সময় কাটানোর একটা দারুণ জায়গা।
রোহিনী লেক (Rohini Lake)- শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং বা কার্শিয়াংগামী শাটল গাড়ি বা বাসে উঠে পড়ুন। বাসে গেলে ৪০ টাকা, গাড়িতে গেলে ৫০-৬০ টাকা নেয় গাড়ি ভেদে। পাহাড়ের পাকদণ্ডী দিয়ে রোহিনী হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার পথেই সুন্দর অপরূপ এক লেকের দেখা মেলে। ২০০৪ সালে তৎকালীন দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের সুপ্রিমো সুবাস ঘিসিং রোহিনী লেক উদ্বোধন করেছিলেন। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লেকটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়েছিল। কিছুদিন আগেই রাজ্য সরকার কার্শিয়াং থেকে রোহিনী পর্যন্ত রোপওয়ে চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরেই রোহিনী লেকটি সংস্কারের কাজে হাত দেয় গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এখন সেখানে শিকারা চালানো হচ্ছে। তার টানেই এখন শিলিগুড়ির লোক দিনভর হুটোপাটি করতে হাজির হচ্ছেন।
বেঙ্গল সাফারি পার্ক (Bengal Safari Park)- উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র এখন এটি। শিলিগুড়ি ও উত্তরবঙ্গ নয়, গোটা নর্থ ইস্টে এমন প্রকৃতিকে হাতের কাছে সাজানো অবস্থায় দেখার সুযোগ কোথাও পাবেন না। এটা একটা লাইভ চিড়িয়াখানা বা ট্রু ফরেস্ট্রি চিড়িয়াখানা বলা যায়। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের একটা বড় অংশ ঘিরে এখানে রাখা হয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল-টাইগার, ভালুক, লেপার্ড, হাজার রকমের পাখি, হরিণ, বাঁদর, গণ্ডার থেকে শুরু করে হাজার রকম প্রাণী। এলাকা এত বড় তাতে গাড়ি করে ঘুরতে হয়। পার্কের গাড়িতে টিকিট কেটে আলাদা আলাদা সাফারি দেখতে পাবেন।
আফ্রিকান সাফারির ঢংয়ে বাঘ-চিতা-ভাল্লুকের ডেরায় ঢুকে কোলাকুলি করার সুযোগ পাবেন। এমনটা এই রিজিয়নে আর কোথাও পাবেন না। তাই আলিপুর চিড়িয়াখানাকে ইদানীং পিছনে ফেলে দিয়েছে এই পার্ক। এটা দেখতে ও সবকটি সাফারি করে খানাপিনা সারতে আপনার সারাদিন লেগে যাবে। শিলিগুড়ি থেকে টোটােতে ৩০ টাকা মাত্র ভাড়া। এছাড়াও বাসে উঠে নেমে পড়লে ১৫-২০ টাকাতেও নেমে যায়। সাফারি না করে এমনি ঘুরে আসলে এন্ট্রি ফি নামমাত্র। একই পথে ফেরার সময় ঘুরে নিতে পারেন শালুগাড়া মনাস্ট্রি। ১১০ ফুট উঁচু এই মনাস্ট্রিটি কালু রিমপোচে নামে একজন তিব্বতি লামা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মনাস্ট্রির চারদিকে যে পাহাড় রয়েছে, তা নাকি এই বৌদ্ধ স্তূপকে রক্ষা করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে! এখানে প্রবেশ করার জন্য কোনও প্রবেশমূল্য লাগে না। বেঙ্গল সাফারি পার্ক থেকে দেড় কিলোমিটার আগে শিলিগুড়ির দিকে এটি রয়েছে।