শহর ঘেঁষা জঙ্গল। একদিকে ইঁট-কাঠ পাথরের হাইরাইজ। অন্যদিকে চোখ ফেরালে শুধু সবুজ, ঘন জঙ্গল। মাছে একটা নদী আর ছোট্ট একটা ঘুমটি স্টেশন। ব্যাস এটাই যেন সভ্য আর জংলি জীবনের সীমারেখা।
গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যাঁরা দক্ষিণবঙ্গ বা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে উত্তরবঙ্গে আসেন। এখানে থাকেননি। এমনকী নাম শুনেছেন খুব কম লোক। যাঁরা শুনেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার গিয়েছেন কিন্তু থাকেননি। আপাতত এটি এখন উত্তরবঙ্গের অদেখা হটস্পট।
জায়গাটি শিলিগুড়ি শহরের একদম গা ঘেঁষে। কতটা? ধারণার জন্য জানিয়ে দিই, শিলিগুড়ি শহরের একাধিক এলাকা থেকে বিভিন্ন রুটের মতো এখান পর্যন্ত টোটো-অটো চলে। ফলে বুঝতেই পারছেন দূরত্ব কতটা? শিলিগুড়ি জংশন থেকে মেরেকেটে সর্বাধিক সাড়ে ৬ কিলোমিটার।
জায়গাটির নাম গুলমা। গুলমাখোলা নদীর পারে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য জায়গাটিকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছে। একই নামে একটি স্টেশন রয়েছে। আলিপুরদুয়ার-অসমগামী কিছু প্যাসেঞ্জার ট্রেন সকালে-বিকেলে দাঁড়ায়। তা ছাড়া সারাদিন এই স্টেশন থম মেরে বসে থাকে। সে সময় স্টেশনের অপর পার থেকে ভেসে আসে ময়ুর, হাতির ডাক। কপাল ভাল থাকলে হাতির দেখা পেয়ে যেতে পারেন সন্ধ্যা বা ভোরে যখন সেগুলি জল খেতে আসে।
তাছাড়া চিতাবাঘও ঘোরে মাঝেমধ্যে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। দলছুট হরিণও চলে আসে মাঝে মধ্যে। সব মিলিয়ে অপার সৌন্দর্যে ভরা এই গুলমাখোলা। শিলিগুড়ি থেকে প্রতিদিনই সকাল-বিকেল লোকজন ইদানীং ভিড় করে এখানে। সারাদিন কাটিয়ে চলে যায়। ফলে খানিকটা জনবহুল হয়েছে এলাকা।
তবে বাইরের পর্যটকরা থাকতে চাইলে থাকতে পারেন। কয়েকটি রিসর্ট ও কটেজ তৈরি হয়েছে। যা সিজনে ফাঁকা পাওয়া যায় না। তাই আগে থেকে ওয়েবসাইটে বুকিং করতে পারবেন। নামী পর্যটন ওয়েবসাইটগুলিতে মিলবে বুকিং ডিটেলস।
এই জায়গার গা ঘেঁষে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের মোহরগাঁও-গুলমা চা বাগান। যার ভিতরে ঢুকলে হারিয়ে যাবেন। এখানে স্থানীয় ও আশপাশের লোকজন শীতকালে জমিয়ে পিকনিক করেন।
এখানে রয়েছে মহানন্দা নদীও। অথচ মহানন্দার সাদা বালির রিভার বেডের যে সুবিশাল বিস্তৃতি সেটা এখানে এসে বোঝা যায়। রিভার বেডের উপর দিয়ে অনায়াসেই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
যাঁরা পুজোয় বিভিন্ন জনপ্রিয় স্পটে এখনও হোটেল বুকিং পাচ্ছেন না। অথবা জুতসই জায়গা পাচ্ছেন না, তাঁরা বেড়িয়ে আসতে পারেন মোহরগাঁও-গুলমা থেকে। গুলমা আসলে শিলিগুড়ির পরের স্টপেজ। এই মহানন্দা নদীর উপরে একটি রেল ব্রিজ রয়েছে। দূর থেকে তার উপর দিয়ে ট্রেন যেতে দেখতে অসাধারণ লাগে।