সেই ধর্নার রাজনীতিতে ফিরলেন মমতা, চক্রব্যূহে আটকে গিয়েছেন?

এবারও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো যখন কলকাতা শহরে কেন্দ্র বিরোধী সুরকে উচ্চগ্রামে বাঁধতে ধর্না মঞ্চে বসেছেন, তখন কার্যত রাজনীতিতে তিনি অভিমন্যুর মতো চক্রব্যূহতে আটকে গিয়েছেন।

Advertisement
সেই ধর্নার রাজনীতিতে ফিরলেন মমতা, চক্রব্যূহে আটকে গিয়েছেন?আপনার পক্ষ

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মাফলার আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নায় বসা, এই দুটোই কি বিরোধী রাজনীতির জন্য প্রতীকী? দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং আপ-এর সর্বময় কর্তা অরবিন্দ কেজরিওয়াল যখনই নিজের বিজেপি বিরোধিতায় শান দেন, তখনই মাফলার জড়িয়ে আবির্ভূত হন। দিল্লির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সেই জন্যেই অরবিন্দকে 'মাফলারম্যান' বলে থাকেন! আর নিজের 'স্ট্রিট ফাইটিং' স্কিলের জন্য পরিচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখনই বিরোধী রাজনীতির পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করেন, তখনই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ধর্নাকে বেছে নেন। আর এটা কেনা জানে, সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম, ধর্না মঞ্চই বারবার মমতাকে রাজনৈতিক ডিভিডেন্ট এনে দিয়েছে|

এবারও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো যখন কলকাতা শহরে কেন্দ্র বিরোধী সুরকে উচ্চগ্রামে বাঁধতে ধর্না মঞ্চে বসেছেন, তখন কার্যত রাজনীতিতে তিনি অভিমন্যুর মতো চক্রব্যূহতে আটকে গিয়েছেন। একদিকে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে দলের হেভিওয়েট মন্ত্রী থেকে যুব শাখার নেতারা গ্রেফতার হচ্ছেন, টেলিভিশন কিংবা ইউটিউবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আর সম্পত্তির ছবি আমজনতার কাছে সরকার সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা পাঠাচ্ছে, অন্যদিকে ডিএ বা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারি কর্মীরা রাস্তায় আন্দোলনে, তখন মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও নিজের পুরনো আক্রমণাত্মক মেজাজের রাজনীতিতে ফেরা ছাড়া আর বোধহয় কোনও উপায় নেই। আর নিজের চার দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে মমতা জানেন, 'অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স'। নিজেকে 'স্ট্রিট ফাইটার' বলতে স্বচ্ছন্দ তৃণমূল নেত্রী তাই কেন্দ্র বিরোধী অবস্থানে ফিরে গিয়ে বুধ এবং বৃহস্পতিবার কলকাতা শহরে ধর্না মঞ্চে বসে গিয়েছেন।

কেন মমতা, যিনি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রায় এক যুগ অর্থাৎ ১২টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন, সেই তিনি ধর্না মঞ্চে ফিরে গেলেন? পয়লা নম্বর কারণ অবশ্যই, তিনি যে বিজেপি বিরোধী এবং পশ্চিমবঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেস সিপিএম 'মোদি দিদির দোস্তি'র যেসব উদাহরণ তুলে ধরেন, তাকে ভোঁতা করে দেওয়া| বুদ্ধিমান তৃণমূল নেত্রী সাগরদীঘির ফলাফল থেকে বুঝে গিয়েছেন যে তিনি বা তাঁর দল বিজেপির সঙ্গে কোন রকম গোপন সমঝোতায় রয়েছে, এমনতর প্রচার হলে সংখ্যালঘু ভোট তো যাবেই, শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, উদারনৈতিক বাঙালি হিন্দুও তাঁর প্রতি বিরূপ হতে পারে। তাই সিবিআই এবং ইডির মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতায় যখন  তৃণমূল বিদ্ধ, তখনই মমতা বন্দোপাধ্যায় গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বৃহত্তর বিরোধী ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। এবং রাহুল গান্ধী থেকে তেজস্বী যাদব, সবাই কীরকম ভাবে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার, তা তিনি এবং তৃণমূলের ঘোষিত 'নাম্বার টু' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিচ্ছেন। বুধবার ধর্না মঞ্চ থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায় যা যা বলেছেন এবং কিছু দূরে দলের ছাত্র যুবদের সমাবেশ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা বার্তা দিয়েছেন, তার থেকে এটা পরিষ্কার, কেন্দ্রে শাসকদলের বিরুদ্ধে আবার  ফ্রন্ট-ফুটে আক্রমণে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টায় রয়েছে তৃণমূল।

Advertisement

অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে মমতা এটা জানেন, তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে সুর যত চড়াবেন, তত বিরোধী রাজনীতির পরিসরে জায়গা করে নেবেন। এবং রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতাকে যে সুরে নিয়ে গিয়েছেন, সেখানে তৃণমূলও সহযোগী হিসেবে জায়গা পেয়ে যাবে। অর্থাৎ নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আদালতের রায়ে জেরবার এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে একের পর এক গ্রেফতারিতে বিব্রত তৃণমূল গোটা বিষয়টাকে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি বলে প্রচার করবার সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা জানেন বলেই কলকাতার ধর্না মঞ্চ থেকেই দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন| আবার সিপিএম কংগ্রেসের জোটকেও বিঁধেছেন। ফরম্যাট যাই হোক, মমতা বন্দোপাধ্যায় যে আবার রাজনীতিতে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় ফিরতে চাইছেন এবং বিজেপি বিরোধিতায় শান দিতে চাইছেন,তা নিয়ে অন্তত কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি প্রতিবেদকের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মত। 'বাংলা.ডট.আজতক.ইন' এর দায় নিচ্ছে না। 

POST A COMMENT
Advertisement