Mamata Banerjee and Mulayam Singh Yadav: কখনও অম্ল-কখনও মধুর, এমনই ছিল মুলায়ম-মমতা সম্পর্ক

অনেকে বলেন, কালামের থেকে সরে এসে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে মুলায়মের সমর্থনের পিছনে যেমন সেই সময় কংগ্রেসের পলিটিক্যাল ম্যানেজার বা রাজনৈতিক দূতদের বিশেষ ভূমিকার কথা জানা যায়, তেমনই অনেকের দাবি, বড় বড় কর্পোরেট সংস্থার চাপও উত্তরপ্রদেশের 'নেতাজি'র মত বদলে সাহায্য করেছিল।

Advertisement
কখনও অম্ল-কখনও মধুর, এমনই ছিল মুলায়ম-মমতা সম্পর্কমমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুলায়ম সিং যাদব-- PTI ফাইল ছবি

ব্যক্তিগত জীবনে 'পহেলওয়ান' বা কুস্তিগীর হতে চেয়েছিলেন মুলায়ম সিং যাদব (Mulayam Singh Yadav)। রাজনীতির ময়দানে অবশ্য তাঁর প্যাঁচে ধরাশায়ী হয়েছেন বহু স্বনামধন্য রাজনীতিক। দেশজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবেও অনেকে তাঁকে আখ্যা দেন। অচিরেই হয়ে ওঠেন উত্তরপ্রদেশের নেতাজি।  

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে মুলায়ম সিং যাদবের সম্পর্কটা বরাবর-ই ছিল অম্ল-মধুর। চড়াই-উতরাই।  ২০১২ সালে যখন কংগ্রেস রাষ্ট্রপতি পদে তাদের প্রার্থী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম সামনে আনে, তখন প্রাথমিকভাবে মুলায়ম এবং মমতা একজোট হয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামকেই তাঁদের পছন্দ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু সেই সেই মুলায়মই মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মত পাল্টে ফেলেন। কংগ্রেসের হাত ধরে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময় মমতা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অনেকে বলেন, কালামের থেকে সরে এসে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে মুলায়মের সমর্থনের পিছনে যেমন সেই সময় কংগ্রেসের পলিটিক্যাল ম্যানেজার বা রাজনৈতিক দূতদের বিশেষ ভূমিকার কথা জানা যায়, তেমনই অনেকের দাবি, বড় বড় কর্পোরেট সংস্থার চাপও উত্তরপ্রদেশের 'নেতাজি'র মত বদলে সাহায্য করেছিল। কারণ যাই হোক মুলায়মের এই ভোলবদল যেমন মমতা বন্দোপাধ্যায়কে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল, তেমনই অনেকে মনে করেন ওই সময় থেকেই কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দূরত্ব সৃষ্টি হতে শুরু করে। এবং সেটাও নাকি মুলায়ম সিং যাদবেরই রাজনৈতিক কৌশল এবং ইচ্ছের বিষয় ছিল। আসলে মুলায়ম চেয়েছিলেন, ইউপিএর সঙ্গে মমতার দূরত্ব তৈরি হলে কংগ্রেস নেতৃত্ব আরও বেশি করে তাঁর দল অর্থাৎ সমাজবাদী পার্টির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং সে ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তিনি এবং সমাজবাদী পার্টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন।

এমনিতে উত্তরপ্রদেশের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব এবং মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রাজনীতির মধ্যে আসমান জমিনের ফারাক। গোবলয়ের সবচেয়ে দুই বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের দুই যাদব কুলপতি অনেক কিছুই এক সারিতে দাঁড়িয়ে করেছেন। মুলায়ম এবং লালু দুজনেই রামমনোহর লোহিয়ার অনুগামী, দুজনেরই রাজনৈতিক উত্থান জয়প্রকাশ নারায়ণের জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলনের হাত ধরে। দুজনেই নিজের নিজের রাজ্য, উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে একসময় জনতা দলের ঝান্ডা ধরেছেন, তারপরে বেরিয়ে এসে নিজের দল তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন| এবং লালু আর মুলায়ম, দুজনেই দলে এবং দলের বাইরের রাজনীতিতেও একধরনের যাদব পরিবারতন্ত্রকে কায়েম করেছেন। লালুর মতোই মুলায়মেরও বিজেপি বিরোধিতা বা সংখ্যালঘুদের পাশে থাকা নিয়ে কোনওদিন কোনও সংশয় বা স্ববিরোধ ছিল না। উত্তরপ্রদেশে তো একসময় মুলায়মকে মৌলানা মূল্যায়ন বলেও ডাকা হয়েছে। এবং পরবর্তীকালে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি লালু এবং মুলায়ম দুজনেই, দুই যাদব নেতাই নিজেদের পুরনো কংগ্রেস বিরোধিতার অতীত ছেড়ে আদর্শগত দিক থেকে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই রাজনীতিতে এগিয়েছেন।

Advertisement

বিহারের দুই রাজনীতিক, লালু এবং নীতিশের সঙ্গে যেমন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণ ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের রেলমন্ত্রক, তেমনই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে শুরু করে মহিলা বিল নিয়ে মুলায়মের স্বরূপ বা রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝে যাওয়ার পর থেকে হয়তো মমতা কিছুটা দূরত্বই রেখেছিলেন। সমাজবাদী পার্টির কর্তৃত্ব মুলায়মের হাত থেকে পুত্র অখিলেশের কাছে চলে যাওয়ার পর বরং যাদবকুলের নতুন প্রজন্মের সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোর সখ্য তৈরি হয় এবং ২০২২-এর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দোপাধ্যায় অখিলেশের সমর্থনে প্রচারে লখনৌতেও যান। আশ্চর্যের বিষয়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে যখন মুলায়ম মমতাকে ডোবাচ্ছেন কিংবা অখিলেশের হয়ে আবার তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য স্থাপন করা হচ্ছে, এই দুটি সময়েই সমাজবাদী পার্টির হয়ে যোগাযোগের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন বাম আমলে রাজ্যের মন্ত্রী, পরবর্তীকালে উত্তরপ্রদেশ থেকে রাাজ্যসভা সাংসদ কিরণময় নন্দ। কনৌজ থেকে কলকাতা পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি করেছেন একদা 'ফিশি', মানে প্রাক্তন মৎস্যমন্ত্রী কিরণময়ই।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি প্রতিবেদকের নিজস্ব মত। এই বক্তব্যের দায় 'আজতক বাংলা' নেবে না। 

POST A COMMENT
Advertisement