উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। পুজোর লম্বা ছুটিতে বাঙালির সবচেয়ে পছন্দের ঘুরতে যাওয়ার জায়গা, আজ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সেই ভয়াবহতা কাটিয়ে কোনওমতে বেঁচে ফিরেছি। এমনিতে সুযোগ পেলেই আমরা চলে যাই দার্জিলিং বা সিকিমের কোনও গ্রামে। তবে শান্ত পাহাড়ের এমন অশান্ত রূপ দেখতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। দ্রুত কলকাতায় ফিরব বলে শিলিগুড়ি থেকে যখন বাসের খোঁজ করছি, তখন ভাড়া দেখেও চক্ষু চড়কগাছ।
৩ অক্টোবর পৌঁছই উত্তরবঙ্গের চটকপুর নামের এক গ্রামে। ওইদিন থেকেই শুরু হয় ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। তারপরদিন আমাদের গন্তব্য ছিলো সোনাদার একটি ফরেস্ট কটেজ। সকাল থেকেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। চটকপুর থেকে ট্রেক করে সোনাদা নামার ইচ্ছে থাকলেও,সে ইচ্ছেকে স্থগিত দিতে হয় মাঝপথেই। কোনোক্রমে আমরা একটি গাড়িকে পেয়ে,পৌঁছই সোনাদাতে। রাত বাড়তেই শুরু হয় ভয়াবহ তাণ্ডব। এ ভয়ঙ্কর রূপ পাহাড়ের আমি আগে কখনও দেখিনি।
পরদিন আমাদের শিলিগুড়ি থেকে বিকেল পাঁচটার বাস ছিলো। আমরা জানতে পারি প্রচুর রাস্তা বন্ধ,তাই আমরা ১১ টা নাগাদ চেকআউট করি।তারপরেই শুরু হয় আমাদের যুদ্ধ। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে বহু গাড়িকে অনুরোধ করি শিলিগুড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু কেউ রাজি হয় না। অসহায় আমরা যখন হাল ছাড়তে বসেছি,তখন একটি ফ্যামিলি কার আমাদের শিলিগুড়ি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। আমরা গাড়িতে উঠলেও,গাড়ি খানিকটা গিয়েই আটকে যায়। ভয়াবহ ধ্বস এবং ধংসস্তূপের মাঝে আটকে পরেছে সব গাড়ি। আমরা রাত ৯.৩০ এ শিলিগুড়ি পৌঁছই।
স্বাভাবিকভাবে আমাদের বাস তখন আমাদের ছেড়ে অনেক খানি এগিয়ে গেছে। শুরু হয় আরেক যুদ্ধ।বাসের মালিকেরা তখন ফায়েদা লোটবার অপেক্ষায়। ১০০০ টাকার বাসের টিকিটমূল্য তখন পৌঁছিয়েছে ৩-৪ হাজার টাকায়। ফ্লাইটের ভাড়াও যে জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, তা সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে সরকারি স্পেশাল বাসে আমরা নিরাপদ ভাবে আজ বাড়ি ফিরে আসি। যে বা যারা এই ভয়াবহ অবস্থায় আটকে আছেন,প্রার্থনা করবো সকলে সুস্থ অবস্থায় ঘরে ফিরে আসুন। এটুকুই চাইব।