১৯৭১ সালের এপ্রিলের শুরু দিক। ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে ভারত, যাতে দ্রুত থেমে যায়। কারণ ভারত লক্ষ্য করছিল, পূর্ব পাকিস্তানে কী ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন নৃশংস ভাবে চলছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় খুঁজছে। রিফিউজি বাড়ছে ভারতে। ভারত ঠিক করে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেবে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌবাহিনী প্ল্যান করল, তারা তিন ডাইমেনশনে তাদের শক্তি প্রয়োগ করবে। সারফেস, সাব-সারফেস ও এয়ার। এবং যেমন প্ল্যান, তেমনই সুচারু প্রয়োগ। ভারতীয় নৌসেনা অসাধারণত্বের পরিচয় দিল।
প্রথম ধাপ হল, প্ল্যান ফাঁস হলে চলবে না। একেবারে গোপন রাখতে হবে। সারফেস ওয়ারফেয়ারে নৌসেনা করাচি হারবারে ভূমি-টু-ভূমি মিসাইল অ্যাটাক করল। এবং প্রমাণ করল, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ভেঙে ভারতীয় সেনা ঢুকতে পারবে। স্থলসেনা, বায়ুসেনারও মনোবল বাড়ল।
একাধিক পাক যুদ্ধজাহাজকে পঙ্গু করে দিল ভারত। বস্তুত, করাচি হারবারকেই পঙ্গু করে দেয়। যার নির্যাস, পূর্ব পাকিস্তানে ওয়েল ট্যাঙ্কার পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য পশ্চিম পাকিস্তান। আসলে নৌসেনার স্ট্র্যাটেজি ছিল, তেলের ট্যাঙ্কার না পাঠানো গেলে পূর্ব পাকিস্তানে পাক সেনা যুদ্ধের রসদ পাবে না। ফলে বিপদে পড়বে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজি হল, পূর্ব পাকিস্তানে চট্টগ্রাম, খুলনা ও চালনা বন্দরকে ব্লক করে দেওয়া যত দ্রুত সম্ভব। যাতে পাক সেনা ওই বন্দরগুলি ব্যবহার না করতে পারে।
তৃতীয় স্ট্র্যাটেজি ছিল, ভারত যুদ্ধবিমান বিক্রান্তকে পূর্ব সাগরে পাঠিয়ে দেয়। পূর্ব পাকিস্তানে বন্দরগুলিতে ক্রমাগত বোমাবাজি শুরু করে দেয়। প্রায় একসপ্তাহ ধরে এই আক্রমণ চলে। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধরত পাকসেনাকে কোনও রসদ পাঠানোর সব পথ বন্ধ করে দেয় ভারত। এই সময় ভারতীয় সেনা ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
আরেকটি যুদ্ধ নীতি হল, অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার। যেহেতু নৌ কম্যান্ডো পিএনএস গাজির অফিসারদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে তাই ক্ষতিগ্রস্ত সাবমেরিন পিএনএস গাজিকে যুদ্ধে ব্যবহার করে পাকিস্তান নৌবাহিনী হুমকির পাল্টা জবাব দেয়।কম্যান্ড জাফর মহম্মদ খানের নেতৃত্বে পিএনএস গাজিকে ভারতীয় এয়ার ক্যারিয়ার ভিক্রান্তকে শনাক্ত করার জন্য বরাদ্দ করা হয়।
পিএনস গাজিকে ভারতীয় নৌ বাহিনীর বিমানবাহী রণতরী বিক্রান্তকে ডোবানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাতে বঙ্গোপোসাগরে ভারতের নৌনিয়ন্ত্রণ কমানো যায়৷
ভারতীয় নৌবাহিনীর রণকৌশলে বিভ্রান্ত পাক নৌসেনা বিশাখাপত্তনম বন্দরে বিক্রান্তের খোঁজে (বিক্রান্ত তখন আন্দামানের কাছে ছিল)। আসলে ভারতীয় নৌবাহিনীর ডেপ্থ চার্জে পিএনএস গাজি নামক ডুবোজাহাজ বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায় এবং পূর্বদিকে নৌ অবরোধের পাক-স্বপ্ন মাঠে মারা যায়।