১৯৯০ সালের পরে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি বড় লেক শুকিয়ে গিয়েছে। আর কিছু এখনও শুকোচ্ছে। শুধুমাত্র লেক বা হ্রদ নয়, বরং অন্য বড় জলস্রোত দ্রুত হারে শুকোচ্ছে। বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার কারণে পৃথিবীর একাধিক এলাকায় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। চাষ-আবাদ হাইড্রোপাওয়ার এসবের জন্য জল পাওয়া যাচ্ছে না।
বিজ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক টিমের স্টাডির পর জানা গিয়েছে যে ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত ক্যাস্পিয়ান সাগর, দক্ষিণ আমেরিকার টিকিটাকা হ্রদ, সব একসঙ্গে ভারি মাত্রায় জল হারিয়ে ফেলছে। এ সমস্ত প্রত্যেক বছর ২২ গিগাটন হারে জল হারাচ্ছে। এই পরিস্থিতি তিন দশক থেকে শুরু হয়েছে।
আমেরিকার সবচেয়ে বড় জলস্রোত লেক মিডে যত জল আসে, তার ১৭ গুণ বেশি জল হল ২২ গিগাটন। ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ার সারফেস হাইড্রোলজিস্ট ফ্যাংফ্যাং ইয়ো এই গবেষণাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যা সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এই স্টাডিতে জানা গিয়েছে যে, প্রাকৃতিক রোদের জলস্তর এবং স্রোত ৫৬ শতাংশ বেশি কমে গিয়েছে। জল কমতে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ হলো তাপমাত্রা বাড়তে থাকা এবং জলবায়ুর পরিবর্তন। সবচেয়ে বেশি গরমের কারণে জলের ক্ষতি হয়েছে। সমস্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা লাগাতার বাড়ছে যার জনস্রোতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ফ্যাংফ্যাং জানিয়েছেন যে সাধারণভাবে সায়েন্টিস্টরা এটা মনে করেন যে শুকনো এলাকা আরও শুকিয়ে যাচ্ছে। যেখানে জল রয়েছে সেগুলি আরও জলপূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু এমন নয়, এখন হিউমিডিটি থাকা এলাকাও শুকিয়ে যাচ্ছে। আমরা এদিকে অগ্রাহ্য করতে পারব না এবং তার টিম, পৃথিবীর দু'হাজারের বেশি বড় লেকের ওপর এই স্টাডি করেছে।
স্টাডিতে জানা গিয়েছে যে, মানুষের দ্বারা জল বেশি নষ্ট করা, বৃষ্টির প্যাটার্ন বদলে যাওয়া বা না হওয়া, মাটি সরে যাওয়া, বাড়তি তাপমাত্রা, সমস্ত কারণে গোটা পৃথিবীর জলস্তর কম হতে শুরু করেছে। ১৯৯২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫৩ শতাংশ ঝিলের জল কমতে শুরু করেছে বা একেবারেই শুকিয়ে গিয়েছে।
এ সমস্ত লেকগুলিতে আশপাশে থাকা ২০০ কোটির বেশি জনসংখ্যা এখন জলের সমস্যায় হাহাকার শুরু করেছে। গত কিছু বছরে জলের ঘাটতি তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিয়েছে। বৈজ্ঞানিকেরা লাগাতার বলছেন যে গড়-বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে হবে।
আপাতত গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রয়েছে। যদি এটি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে গোটা পৃথিবীতে খরা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। মানুষ শুকনো হ্রদকেও ছাড়ে না। তার ওপরেও দখলদারির চেষ্টা করে।