হিমালয়ের চেয়েও তিনগুণ বড়! পৃথিবীর বুকে এই 'সুপার মাউন্টেন'

পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাসে দু'বার পার্বত্যভূমি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে নবতম হিমালয়। বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম শৃঙ্গ হিমালয়েই। কিন্তু একটা সময়ে হিমালয়ের তিন গুণ উঁচু পর্বত ছিল এ ধরায়। এগুলিকে 'সুপারমাউন্টেন' (Supermountaines) নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। (ছবি গেটি)     

ক্যানবেরায় অস্ট্রিলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ANU) গবেষক জিই ঝু জানিয়েছেন, প্রাচীন পর্বতমালা আর আস্ত নেই। শুধু উচ্চতাই নয় হিমালয়ের থেকেও বিস্তৃত ছিল এই পর্বতগুলি। অত্যন্ত দুর্গম ছিল এগুলি। (ছবি গেটি)

প্রাচীন শৃঙ্গগুলি গবেষণা করেছেন জিই ঝু ও তাঁর সঙ্গীরা। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে আর্থ প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটারে। সুপার মাউন্টেন সৃষ্টি ও ধ্বংসের কারণ রয়েছে ওই গবেষণাপত্রে। আনুমানিক ২০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছিল সুপার মাউন্টেন। দ্বিতীয়বার ৫৪.১ কোটি বছর আগে সমুদ্রে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণে ফলে সৃষ্টি হয়েছিল সুউচ্চ পর্বত।(ছবি গেটি)

গবেষকদের মতে, সুপার মাউন্টের সমুদ্রের মিলিয়ে গিয়েছে। এর ফলে সমুদ্রে অণুজীব ভরে উঠেছিল। প্রাণের জন্মে তা অনুঘটক হয়েছিল। সাধারণভাবে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষে জন্ম হয় পর্বতের। ঠিক যেমনভাবে সমতল ভূমিতে কাগজ রেখে দুধারে চাপ দিলে তা উপর-নীচ ঢেউ খেলে।  (ছবি পিক্সাবে) 

জিই জানিয়েছেন, কোটি কোটি বছর ধরে চলে পর্বতের সৃষ্টি প্রক্রিয়া। সেই সঙ্গে তাদের ধ্বংসের সময়ও স্থির হয়ে যায়। জল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির জন্য ক্ষয় হতে থাকে। ভূমির উপরের অংশ অর্থাৎ ক্রস্ট। তার নীচের অংশ জিরকন ক্রিস্টল। সুপার মাউন্টেন সৃষ্টির সময় জিরকন ক্রিস্টল তৈরি হয়েছিল। মাটির নীচে বিপুল চাপ ও তাপ সহ্য করে এই স্তর। (ছবি গেটি)

গবেষণাপত্র অনুযায়ী,জিরকন্সে সামান্য মাত্রায় লুটেটিয়ম খনিজ মিলেছে। দুনিয়ায় দুর্লভ খনিজের মধ্যে এটি একটি। এটি সাধারণ পাহাড়ের নীচে পাওয়া যায়। প্রাচীন সুপার মাউন্টেনের নির্মাণ হয়েছিল ২০০ থেকে ১৮০ বছর আগে। (ছবি গেটি)

আর একটি ঘটনা ৬৫ থেকে ৫০ বছর আগের। সেই সময় ট্রান্সগোন্ডওয়ানা সুপারমাউন্টেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল গোন্ডওয়ানা সুপারকন্টিনেন্টের। গোন্ডওয়ানা সুপার কন্টিনেন্টের অংশ ছিল আধুনিক আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আন্টার্কটিকা এবং পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপসমূহ। তখন সর্বোচ্চ শৃঙ্গের পর্বতের নাম ছিল নুনা সুপারমাউন্টেন। গোন্ডওয়ানা তৈরির পর এর সৃষ্টি হয়েছিল। (ছবি গেটি)

গবেষকরা জানতে পেরেছেন সুপারমাউন্টেন বিস্তৃত ছিল ৮০০০ কিলোমিটার জুড়ে। অর্থাৎ শ্রীনগর থেকে কন্যাকুমারীর দু'বার করলে যে পথ। গোন্ডওয়ানা ভেঙে আলাদা আলাদা মহাদেশে পরিণত হওয়ার পর সমুদ্রে মিলিয়ে যায় সুপারমাউন্টেন। ফলে লোহা ও ফসফরাসের মতো খনিজ মেশে সমুদ্রে। এতে গতি পায় প্রাণের সৃষ্টি। (ছবি নাসা)

লোহা ও ফসফরাস জলে মেশায় শুরু হয় রাসায়নিক বিক্রিয়া। জীবন ক্রমশ জটিল হতে শুরু করে। অণুজীব থেকে বহুকোষের জীব, মাছ, সরীসৃপের উদ্ভব হয়। শুধু তাই নয় বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণও বাড়ে। জীবনের সূচনায় তা সাহায্য করে। (ছবি পিক্সাবে)

নুনা সুপারমাউন্টেন সৃষ্টি ও ধ্বংসের সময়ে ধীরে ধীরে ইউক্যারিয়োটিক কোষ অর্থাৎ নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষের জন্ম হচ্ছিল। পরবর্তীকালে গাছপালা ও ছত্রাক হিসেবে বিকশিত হয়। (ছবি গেটি) 

ট্রান্সগোন্ডয়ানা সুপারমাউন্টেন থাকার সময় প্রায় ৫৭.৫ কোটি বছর আগে জীবের বিকাশ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ১৭০ থেকে ৭৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীরে পর্বত সৃষ্টির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। (ছবি গেটি)

এই বন্ধ হয়ে যাওয়াকে বোরিং বিলিং তকমা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তখন পৃথিবীতে জীবের নানা রূপে বিকশিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। (ছবি পিক্সাবে)