
১৯৪৫ সালে হিরোশিমাতে যে পরমাণু বোমাটি ফেলা হয়েছিল, তার শক্তি ছিল ১৫ কিলোটন টিএনটির মতো। মানে ১৫ হাজার টন বারুদে সমান। ৭০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকে পরমাণু বোমা হামলা আর দেখতে হয়নি বিশ্বকে।

হিরোশিমা, নাগাসাকি আজও মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অত্যন্ত বর্বর অধ্যায়। এখন প্রশ্ন হল, বর্তমান বিশ্বে কার কাছে রয়েছে সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু বোমা বা অ্যাটম বম্ব?

অনেকে দাবি করেন আমেরিকার কাছে। সত্যিই কি তাই? আমেরিকার এমন শক্তি কি আছে, যা বিশ্বকে দেড়শো বার ধ্বংস করে দিতে পারে?

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু বোমা রয়েছে আমেরিকার হাতেই। এই বোমার নাম B83 গ্যাভিটি বম্ব। এটি একটি থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা, যা হামলা করতে হয় জাহাজ থেকে।

B83 গ্যাভিটি বম্বের শক্তি হল ১.২ মেগাটন টিএনটি। অর্থাত্ ১২ লক্ষ টন বারুদ বিস্ফোরণ ঘটার সমান। হিরোশিমায় যে পরমাণু বোমা ফেলা হয়েছিল, তার সঙ্গে তুলনা টানলে দেখা যাচ্ছে, ওই বোমার চেয়ে আমেরিকার হাতে থাকা পরমাণু বোমাটি ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী। কোনও শহরে পড়লে প্রায় ২০ কিমি নিশ্চিহ্ন হবে কয়েক সেকেন্ডে।

এই বোমাটির বিস্ফোরণে কয়েক মিনিটের মধ্যে ১ লক্ষ ডিগ্রি তাপমাত্রা হয়ে যাবে, যা সূর্যের তাপের থেকেও বেশি। রেডিয়েশন কয়েকশো মাইল পর্যন্ত পৌঁছবে।

আমেরিকার B83 বোমায় এক মুহূর্তে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এছাড়াও আকাশ মেঘে ঢেকে গিয়ে রাতের অন্ধকার নেমে আসবে। যাকে বলা হয়, নিউক্লিয়ার উইন্টার। মানে তীব্র শীত ও অনাহার।

এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু বোমাটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে। যা পরে ভেঙে গিয়ে রাশিয়া হয়েছে। নাম Tsar Bomba। ১৯৬১ সালে ওই বোমা টেস্ট করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।

৫০ মেগাটনের ওই বোমা ছিল হিরোশিমার চেয়ে ৩ হাজার ৩৩৩ গুণ বেশি শক্তিশালী। কিন্তু এখন ওই বোমাটি ব্যবহারযোগ্য নেই। শুধু টেস্ট করার জন্য বানানো হয়েছিল। ওই বোমা কোথাও ফেললে ১০০ কিলোমিচার দূর পর্যন্তও বাড়ি ভেঙে যেত।

বর্তমানে বিশ্বের ৯টি দেশের কাছে রয়েছে পরমাণু বোমা। আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তান, ইজরায়েল ও উত্তর কোরিয়া। রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি বোমা রয়েছে (প্রায় ৬ হাজার), কিন্তু শক্তির নিরিখে এগিয়ে আমেরিকাই।

ভারতের কাছে রয়েছে অগ্নি ফাইভ। এই পরমাণু অস্ত্রের শক্তি ০.০৫ থেকে ০.২ মেগাটন (৫০ থেকে ২০০ কিলোটন)। হিরোশিমায় যে পরমাণু বোমা ফেলা হয়েছিল, তার চেয়ে ৩ থেকে ১৩ গুণ বেশি শক্তিশালী। কোথাও ফেলল কয়েক সেকেন্ডে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পুরো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তার সঙ্গে রেডিয়েশনেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদী হবে।

পাকিস্তানের কাছে রয়েছে শাহিন থ্রি। এর শক্তি ৫০ কিলোটন। হিরোশিমার চেয়ে ৩ গুণ বেশি শক্তিশালী। ছোটো রেঞ্জের পরমাণু বোমা।

তবে আমেরিকার কাছে যে পরমাণু বোমাটি রয়েছে, তা যদি কখনও ব্যবহার করা হয়, তাহলে বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষই মারা যাবে। সঙ্গে অনহারা ও তীব্র শীতেও প্রচুর মানুষের মৃত্যু হবে।