অন্তরীক্ষে কেউ মারা গেলে, তার মৃতদেহ কোথায় কবর দেওয়া হয়? নাকি আদৌ দেওয়া হয় না! কি করা হয়, জানেন? আবার মিশনের মাঝখানে মারা গেলে সেই মহাকাশযানটিকে পৃথিবীতে আনাও সম্ভব নয় এবং অতদিন অপেক্ষা করার জন্য ডেডবডি নিয়ে ঘোরাও সম্ভব নয়। তাহলে উপায় কি ?
স্পেসে গিয়ে মৃত্যু হলে আর ফেরে না কেউ
পৃথিবীতে যদি কেউ মারা যায়, তাকে তার ধর্ম অনুযায়ী হয় কবর, না হয় পুড়িয়ে ফেলা হয়। তার অন্তিম সংস্কার করা হয়। যাতে সব দূষণ ছড়াতে না পারে। কিন্তু যদি স্পেসে গিয়ে কেউ মারা যায়, তাহলে কি হয় ! এই প্রশ্নের জবাবে নাসার অন্তরীক্ষ যাত্রী টেরি ভার্টস জানিয়েছেন, কোনও অ্যাস্ট্রোনট যদি স্পেসে গিয়ে মারা যান, তার চাইতে ভয়ঙ্কর এবং দুঃখজনক কিছু হতে পারে না।
অন্তরীক্ষে ঘুরতে থাকে দেহ
প্রকৃতপক্ষে অন্তরীক্ষ যানে, শবদেহ স্টোর করার কোনও সুবিধা থাকে না। শবদেহ স্টোর এর জন্য আলাদা জায়গা না থাকায় রাখা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব হয় না। এই রকম পরিস্থিতিতে এয়ার লক-এ প্যাক করে অন্তরীক্ষে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডেড বডি স্পেসের ঠাণ্ডায় আইস মমিতে পরিণত হয়।
লক্ষ বছর পর্যন্ত অন্তরীক্ষে থেকে যাবে শবদেহ
এই বিষয়টি সেই সময় সামনে এসেছে, যখন নাসা অ্যাপোলো মিশন একসময় স্পেস স্যুট এর টেস্ট করেছিল।তখন এটাও জানা গিয়েছে যে স্পেসের প্রেসারের কারণে ডেড বডিতে বিস্ফোরণও হতে পারে। অন্তরীক্ষে শবদেহ যদি কোনও জিনিসের সঙ্গে ধাক্কা না খায়, তাহলে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত, অনন্ত কাল পর্যন্ত স্পেসে থেকে যেতে পারে। আইস মমি হয়ে যাওয়ার কারণে দেহে পচন ধরবে না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এই শব একশ, হাজার, এমনকী লক্ষ বছর পর্যন্ত অন্তরীক্ষে থেকে যাবে।
মঙ্গলে কবরও দেওয়া যেতে পারে
অ্যাস্ট্রোনট জানিয়েছেন, যে স্পেস মিশনে গিয়ে তাদের মিশন শেষ করে পৃথিবীতে ফিরে আসতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। এই কারণে আগে যদি কেউ স্পেসে গিয়ে অন্তরীক্ষ যাত্রীর মৃত্যু হয়ে যায়, তাই তার শব নষ্ট করার জন্য কয়েকটি উপায় অবলম্বন করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো, শবটিকে অনন্ত আকাশে ছেড়ে দেওয়া অথবা মঙ্গল গ্রহতে নিয়ে গিয়ে কবর দেওয়ার রীতি রয়েছে। যদিও মঙ্গলের দূষণ যাতে না হয় সে কারণে মৃতদেহ আগে পোড়াতে হবে। কিন্তু এই কাজ অত্যন্ত জটিল। যে বিষয়ে এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সব মিলিয়ে এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই এই শব পৃথিবীতে অন্তিম সংস্কারের জন্য আসবেই। একমাত্র যদি মিশন শেষ করে ফেরার পথে মৃত্যু হয়ে থাকে, তাহলে অন্তত দু'চারদিনের মধ্যে পৃথিবী ফেরার কথা থাকলে তারা শবদেহটি নিয়ে আসতে পারে।
অন্তরীক্ষে কবর দেওয়ার জন্য কফিন তৈরি হচ্ছে
ডেইলি স্টার নামে একটি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত স্পেসে মাত্র তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। একটি সুইডিশ কোম্পানি অন্তরীক্ষ কফিন তৈরি করার বিষয়ে কাজ করছে, যা একজন মৃত অন্তরীক্ষ যাত্রীর মৃতদেহকে বরফের ক্রিস্টালে freeze-dried ট্যাবলেটে সেফ রাখবে। কানাডার অন্তরীক্ষ যাত্রী হেড ফিল্ড জানিয়েছেন, আমি আশা করছি যে যদি মঙ্গল গ্রহের কোনও মৃত্যু হয়, তাহলে সেই মৃতদেহ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার বদলে সেখানেই আমরা নিরাপদে কবর দিতে পারব।