অতিমারির করাল গ্রাস থেকে এখনও সুস্থ হতে পারেনি পৃথিবী। প্রায় দুবছর হতে চলল করোনাকে হার মানানো গেল না। মানুষের জীবনযাপন পুরোপুরিই ওলটপালট করে দিয়েছে করোনার ধাক্কা। এখন অধিকাংশ কাজই মেটাতে হচ্ছে অনলাইনে। সামনেই আসছে বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজো (Durga Puja)। ২০২০-র দুর্গাপুজো বন্দিদশাতেই কাটিয়েছে উৎসবপ্রেমী বাঙালি। তবে আর কতকাল এভাবে বেঁধে রাখা যায়? গৃহবন্দি হলেও ঢাকের বাদ্যি, অষ্টমীর মন্ত্রে কোন বাঙালির মন কেমন হয় না?
পুজোর ভিড় এড়িয়ে ঘরে বসে ঠাকুর দেখার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে দূরদর্শনের 'পুজো পরিক্রমা'-য়। এরপর একে একে বাংলা সংবাদমাধ্যমগুলিতেও ঢুকে পড়ে 'পুজো পরিক্রমা'। এরপর আর শুধু টেলিভিশনের পর্দায় বেঁধে রইল না। আয়োজন শুরু হল মোবাইলেও কীকরে ডিজিটালি পুজো পরিক্রমার ব্যবস্থা করা যায় তার। এভাবেই বছর কয়েক কাটতে না কাটতেই বিশ্বজুড়ে আঘাত হানল করোনা। সারা দুনিয়ার মন্দির থেকে মসজিদ, ধর্মীয় স্থানগুলির দরজা ভক্তদের জন্য বন্ধ হল। মন্দির বন্ধ থাকলেও পুজো থেমে থাকেনি। ভবিষ্যতের গর্ভে থাকা করোনার ধাক্কার পর ঘরে বসেই ভক্তদের জন্য ভার্চুয়ালি পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু হল।
সিদ্ধিবিনায়ক, তিরুমালা তিরুপতি এমনকি পশ্চিমবঙ্গের তারাপীঠেও শুরু হল ভার্চুয়াল পুজো, মায়ের মুখ দর্শন এবং অনলাইন বুকিংয়ে প্রসাদ বিতরণ। এতো কিছুর মধ্যে ভাবাচ্ছে ২০২১-এর দুর্গাপুজো নিয়ে। পুজোয় প্যান্ডেল হপিং, নতুন জামা পরে মায়ের মুখ দেখা, পাড়ায় বসে আড্ডা, স্ট্রিট ফুড এগুলো কি পাকাপাকিভাবে হারিয়ে যাবে? দেশ, বিদেশের মানুষরা, সিনিয়র সিটিজেনরা অঞ্জলি পর্যন্ত দিচ্ছেন ভার্চুয়ালি। মানুষ দিন দিন যেভাবে ডিজিটাল নির্ভর হয়ে পড়ছে তাতে কি কোথাও গরিমা হারাবে বাঙালির দুর্গাপুজোর? ভয় ধরাচ্ছে এ যদি অভ্যাসে পরিণত হয়? দেশ, বিদেশের সমস্ত অনুষ্ঠান থেকে বিয়ে, জন্মদিনও যে ঢুকে পড়েছে অনলাইন স্ট্রিমিং!
প্রথা ভেঙে বড়লোক জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো থেকে বারো ইয়ারের বারোয়ারি, সেখান থেকে সর্বসাধারণের সর্বজনীন দুর্গোৎসব। তবে কি এবার সর্বজনীন থেকে ভার্চুয়ালে পা বাড়াচ্ছি আমরা? নতুন মোড়কে আসতে চলেছে ভার্চুয়াল দুর্গাপুজো (Virtual Durga Puja)? দল বেঁধে ঠাকুর দেখার দিন কি তবে শেষ?