Digha Sea Beach Photographer: এবার পুজোয় উপচে পড়া পর্যটকদের ভিড়ের দেখা মিলেছে দিঘায়। সাগর পাড়ে, বালির চরে থিক থিক করছে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ছুটি কাটাতে যাওয়া মানুষের ভিড়। লক্ষ্মীপুজোর পর পর্যন্ত দিঘার অধিকাংশ হোটেলের বেশিরভাগ ঘরের বুকিং হয়ে রয়েছে। চটজলদি পরিকল্পনায় দিঘা যেতে চাইলে এখন হোটেলে ঘর পাওয়া প্রায় অসম্ভব!
এখন দিঘার অধিকাংশ হোটেলেই অনলাইন বুকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অ্যাপ থেকে ঘর বুক করা যায়। অধিকাংশ হোটেলই তাদের ৫০-৬০ শতাংশ ঘর অনলাইন বুকিংয়ের জন্য দিয়ে রাখে। বাকিটা ফোনে বা সরাসরি পাওয়া যেতে পারে। তবে পুজোর এই ক’টা দিন দিঘায় পৌঁছে সরাসরি হোটেলের ঘর পাওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। অর্থাৎ, দিঘার এ বছরের হোটেল ব্যবসা একেবারে জমজমাট।
হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি পর্যটন নির্ভর পরিবহণ ব্যবসায়ও এবার জোয়ার এসেছে। অটো, টোটো বা চার চাকার বড় গাড়ি ভাড়ায় চালিয়ে যাঁরা সারা বছর রুজি-রুটির ব্যবস্থা করেন, এবার তাঁরাও দম ফেলার ফুরসৎ পাচ্ছেন না। কিন্তু পর্যটকদের সুনামি আছড়ে পড়লেও মুয়কে হাসি নেই দিঘার সাগর পাড়ের ছবিওয়ালাদের। সমুদ্রের জলে ভিজে, ক্যামেরা নিয়ে যাঁরা এখানে আসা পর্যটকদের দু’টো ভাল মুহূর্ত হাতে তুলে দেন, তাঁরা এখন কাজ পাচ্ছেন না। দিঘায় পর্যটকদের রেকর্ড ভিড় থাকা সত্ত্বেও সাগর পাড়ের ছবিওয়ালাদের মন্দা যেন কেটেও কাটছে না। পর্যটকদের ভরা মরসুমে তাঁদের আয় মেরে কেটে দুশো থেকে আড়াইশো টাকা।
দিঘায় পর্যটকদের ভিড় বাড়লেও সমুদ্রের পাড়ে জলে ভিজে জলের দরে ছবি তুলে দেওয়ার আর্জি জানালো ফটোগ্রাফারদের আয় বাড়ছে না কেন? এর উত্তরে এই পেশার সঙ্গে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্ত সুকুমার দাস (বাবু) বলেন, “এখন সবার কাছেই স্মার্টফোন। তাই আর আজকাল অনেকেই আমাদের দিয়ে ছবি তোলান না। অনেকে ছবি তোলালেও শেষ পর্যন্ত সব ছবি নেন না। অনেকে তো ছবি না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। ছবি পৌঁছে দিতে গিয়ে হোটেল মালিকদের চোখ রাঙানি, অসহযোগিতায় অনেক সময় খদ্দেরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠে না। ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। এই পুজোর বাজারেও আয় তেমন হচ্ছে না।”
দিঘার আর এক ছবিওয়ালা রাধেশ্যাম দাস বলেন, “এবার অনেক পর্যটক এলেও বৃষ্টির জন্য অনেকেই সে ভাবে সমুদ্রের পাড়ে সময় কাটাতে পারছেন না। ফলে ছবি তোলার সুযোগটাও অনেক কম আমাদের কাছে। একে স্মার্টফোন, তার উপর অকাল বৃষ্টিতে ব্যবসা মাটি করে দিয়েছে। দিনের শেষে প্রায় খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে আমাদের।”
তাহলে কীভাবে সংসার চলছে ওদের?
এই পেশার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত সুমন চট্টপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে সামান্য অর্থ সাহায্য আমরা পাই। তবে দিন দিন যে হারে ছবি তোলার চাহিদা পড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে পেটের দায়ে হয়তো পেশাটাই বদলে ফেলতে হবে”... আক্ষেপ, আশঙ্কা সুমনবাবুর গলায়।
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে লুপ্ত হয়েছে বহু পেশা। বাড়ি বাড়ি খবর পৌঁছে দেওয়া রানার, ঘরে ঘরে জল পৌঁছে দেওয়া ভারি বা ভিস্তিওয়াদের মতো স্মার্টফোনের চাপে কি একদিন হারিয়ে যাবে দিঘার পাড়ের এই ছবিওয়ালারাও। এর উত্তর হয়তো সময়ই দিতে পারবে।