বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজা। বাকি আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন। রাজ্যজুড়ে এখন পুজোকে কেন্দ্র করে সাজ সাজ রব। বড় পুজো মন্ডপগুলির পাশাপাশি ঐতিহ্যময় পুজোগুলিতে এখন চরম ব্যস্ততা সকলের মধ্যে। তেমনিই শিলিগুড়ির অন্যতম ঐতিহ্যময় পুজো হলো মিত্র সম্মিলনীর পুজো। এই পুজোর সাথে যোগ রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যেরও ।
১৯০৯ সালে শুরু হয় পুজো
কলকাতার পর বিগ বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে শিলিগুড়িতে নজর কাড়ে দর্শকদের। তবে আগে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটাই পুজো হত। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম পুজো হয় শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের রেলের বাসিন্দাদের পুজো। আর দ্বিতীয় পুজো হয় এই মিত্র সম্মিলনীতে। ১৯০৯ সালে নাটকের জন্য মিত্র সম্মিলনী স্থাপিত হয় আদি শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের হাত ধরে। ১৯২৬ সালে মিত্র সম্মিলনিতে শুরু হয় প্রথম দুর্গাপুজো। সাবেকিয়ানায় শুরু হওয়া সেই পুজো আজও একইভাবে নিষ্ঠাভক্তির সাথে করা হয়। আর শহরের মানুষের কাছে এখন এটা ঐতিহ্যের পুজোও।
তখন শিলিগুড়ির বাসিন্দা ছিল হাতেগোণা
শোনা যায় সেই সময় শিলিগুড়ির জনসংখ্যা ছিল মাত্র কয়েকশোজন। শহরের হিলকার্ট রোড বলতে ছিল একটি মাত্র রাস্তা। বর্তমানে মিত্র সম্মিলনীর ভবনের সামনে রাস্তার ধার দিয়ে ছিল বেশকিছু কাঠের দোকান। এবং মিত্র সম্মিলনী ছিল কাঠের ভবন। জানা গিয়েছে তখন মিত্র সম্মিলনীর প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুরেন্দ্র ভট্টাচার্য, প্রিয় গোপাল সেন ছিলেন প্রথম সভাপতি। এছাড়াও ছিলেন কালু ডাক্তার, নকুল ডাক্তার ও হাবু সরকার। রীতি মেনে সেই সময় থেকে শুরু করে প্রতি বছর উল্টো রথের দিন কাঠামো পুজো মধ্যে দিয়ে পুজোর শুরু হয়।এমনকী মিত্র সম্মিলনীর তখন পুজোর প্রতিমা তৈরি হত সম্মিলনিতেই। এবং প্রতিমা নিরঞ্জন করা হতো মহানন্দা নদীতে।
টয়ট্রেনে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হতো
সেই সময় টয় ট্রেন চলত হিলকার্ট রোড ধরে মিত্র সম্মিলনীর সামনে দিয়ে। পরবর্তীতে টয় ট্রেনে করে মিত্র সম্মেলনে থেকে প্রতিমা তোলা হতো এবং মহানন্দা ব্রিজ এর কাছে গিয়ে প্রতিমা নামিয়ে নিরঞ্জন করা হতো। মিত্র সম্মিলনীর ঐতিহ্য রয়েছে। প্রতিমা নিরঞ্জন হত দুপুর ১২ টা নাগাদ সেই ঐতিহ্যকে বহাল রেখে এখনও দুপুর ১২ টার সময় প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। তবে এতো ঐতিহ্য নিয়ে মিত্র সম্মিলনী পুজা জাঁকজমক না থাকলেও প্রতি বছরই দর্শকদের পুজা ভ্রমণের তালিকায় থাকে এই পুজো। তবে করোনার কারণে তেমন জাঁকজমক বড় আকারে পুজো না হলেও সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্য রীতিনীতি মেনে এবারও পুজা হচ্ছে মিত্র সম্মিলনীতে।
রীতিতে বদল নেই, শুধু করোনা কেড়েছে বিজয়া সম্মিলনী
পুজো কমিটির সদস্য মিন্টু রাহা জানান, আমরা খুব কষ্ট করে পুজা করি। সেভাবে চাঁদার জন্য কাউকে জোর দেওয়া হয় না। সকলেই ভালোবেসে যা দেয় তাই আমরা গ্রহণ করি। তবে করোনার জন্য আমরা অন্যান্যবারের থেকে ছোট পুজা করছি। অবশ্যই সকলকে করোনা বিধি মেনেই মন্ডপে উপস্থিত থাকতে হবে। আমরা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও রাখব সকলের জন্য। তিনি আরও বলেন, এ পুজোর সাথে শহরের ঐতিহ্য জড়িত তাই আমরা যেভাবেই হোক পুজো প্রতি বছর করে থাকি। কিন্তু করোনার জন্য আমাদের বিখ্যাত বিজয়া সম্মিলনী বন্ধ রয়েছে।
স্মৃতি জড়িত প্রাক্তন ও মেয়র ও মন্ত্রীর
অন্যদিকে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ছোট থেকেই এই পুজো দেখছি। আমার কাকার পরিবার পুজোর সাথে যুক্ত ছিলো। অনেকবারই গিয়েছি। এখনও সেই স্মৃতি ভেসে আসে।