
শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে/তোমার না কি মেয়ের বিয়ে/গঙ্গারামকে পাত্র পেলে/ জানতে চাও, সে কেমন ছেলে। সুকুমার রায়ের বিখ্যাত কবিতা 'সৎ পাত্র'-র এই লাইন দেখে ভাববেন না কোনও পাত্র পাত্রীর বিঞ্জাপন লিখছি। পোস্ত (Posto) এবং পোস্তার (Posta) সুলুক সন্ধান করতেই এই অবতারণা। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) রাজ্যে পোস্ত চাষ (Posto Cultivation In West Bengal) নিয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার অনুমতি দিলেই পোস্ত চাষ হতে পারে বাংলায়। বাংলায় আফিম এবং পোস্তর গাঁটছড়া বহুদিনের। আফিমের সঙ্গে নেশার ব্যাপারটি জড়িয়ে থাকে, তাহলে পোস্তর (Poppy Seeds) সঙ্গে সখ্য বিউলির ডালের। ধুর মশাই, আসল কথায় আসুন তো। আচ্ছা আচ্ছা। ঠিক আছে এবার আসল কথাতেই আসি। আচ্ছা, জানেন কি কলকাতায় রয়েছে পোস্তর পাইকারি বাজার। বড়বাজারের এই হোলসেল মার্কেট পরিচিত পোস্তা নামে। এখানে অন্য সব জিনিসের মতো পোস্তও পাইকারি দামে বিক্রি হয়।
তাহলে কি পোস্ত আর পোস্তার মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে? বাঙালির চিরকালীন প্রিয় পোস্ত থেকেই কি পোস্তার নামকরণ? চলুন উত্তরটা জেনে নেওয়া যাক।
এই ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত ধর ওরফে নকু ধর (Naku Dhar aka Lakshmikanta Dhar)। তিনি হুগলির সপ্তগ্রাম থেকে সুতানুটিতে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ব্যবসা, প্রতিপত্তি, সম্পদের দিক থেকে তিনি ছিলেন সেই সময়ের বাঙালি ধনীদের মধ্যে অন্যতম। নকু ধর ছিলেন লর্ড ক্লাইভের দেওয়ান। নকু ধর এতটাই ধনী ছিলেন যে তিনি ইংরেজদের টাকা ধার দিতেন। মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেই সময় তিনি ইংরেজদের ৯ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন। ইংরেজরা নকু ধরকে ‘রাজা’ উপাধি দিতে চেয়েছিল। যদিও নকু রাজা উপাধি নেননি। বরং তিনি রাজা উপাধি যাতে তাঁর নাতি সুখময়কে দেওয়া হয় তার জন্য ইংরেজদের অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে সুখময় রায় (Raja Sukhomoy Roy) রাজা উপাধি পান এবং পোস্তা রাজবাড়ির (Posta Rajbari) পত্তন করেন।
রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেই সমাজে প্রতিপত্তি পেতে প্রচুর ধান-ধ্য়ান শুরু করেন সুখময়। শোনা যায়, তীর্থযাত্রীদের সুবিধার জন্য উলুবেড়িয়া থেকে ওড়িশার পুরী পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করেন সুখময়। তিনি ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গলের একজন ডিরেক্টর এবং এলিজা ইম্পের দেওয়ান ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁকে ‘মহারাজা’ উপাধি দেওয়া হয়। মুঘল সম্রাট শাহ আলম ১৭৫৭ সালে জনসেবা ও দানধ্যানের জন্য সুখময়কে ‘মহারাজ বাহাদুর’ উপাধি দেন। ক্রমে ক্রমে পোস্তা রাজবাড়ি ফুলে ফেঁপে ওঠে। আজকের কলকাতা গঠনে এই রাজবাড়ির বহু অবদান রয়েছে। তাহলে যা জানা গেল তার সারমর্ম হল পোস্ত ও পোস্তার মধ্যে আদতে কোনও সম্পর্ক নেই।